চিকুনগুনিয়া জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নির্দিষ্ট প্রজাতির মশার মাধ্যমে। এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল বাহক হলো এডিস মশা, বিশেষ করে Aedes aegypti এবং Aedes albopictus প্রজাতি। এ মশাগুলো সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায় এবং ঘরের ভেতর বা আশপাশের জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করে।
• এডিস মশা-ই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে। এই ভাইরাসটি মূলত Togaviridae পরিবারের অন্তর্গত এবং Alphavirus শ্রেণির অন্তর্গত। সংক্রমিত ব্যক্তি যখন এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়, তখন সেই মশাটি ভাইরাস গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে আরেকজন মানুষকে কামড়ালে তার দেহে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়।
• এডিস মশা সাধারণত দিনের আলোতে, বিশেষত সকাল ও বিকেলের দিকে বেশি সক্রিয় থাকে। অন্য মশার মতো এটি রাতে ততটা সক্রিয় নয়। এদের বংশবিস্তার হয় ঘরের ভেতর বা বাইরে রাখা ফুলের টব, ফেলে রাখা টায়ার, ভাঙা বোতল, বা যেকোনো স্থির পানিতে।
• চিকুনগুনিয়া ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রধান লক্ষণগুলো হলো উচ্চ জ্বর, জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখে ব্যথা, চামড়ায় র্যাশ, এবং দুর্বলতা। বিশেষ করে জয়েন্টের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
• এই রোগ সাধারণত মারাত্মক নয়, তবে বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এটি জটিল হতে পারে। চিকুনগুনিয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ বা টিকা নেই, তবে বিশ্রাম, তরল খাবার এবং ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে উপসর্গ উপশম করা হয়।
• প্রতিরোধই হলো চিকুনগুনিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রধান উপায়। এজন্য ঘরের আশপাশে কোথাও পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না, টব ও ড্রাম পরিষ্কার রাখতে হবে, মশারি ব্যবহার করতে হবে, এবং শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে।
• ভুল বিকল্পগুলোর মধ্যে—
-
কিউলেক্স মশা মূলত জাপানিজ এনসেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগ ছড়ায়।
-
এনোফিলিস মশা হলো ম্যালেরিয়া রোগের বাহক।
-
Sand fly ছড়ায় কালা-আজার বা visceral leishmaniasis।
সব মিলিয়ে বলা যায়, চিকুনগুনিয়া জ্বরের জন্য দায়ী মশাটি হলো এডিস, যা একই সঙ্গে ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসেরও বাহক হিসেবে পরিচিত। তাই এ মশার নিয়ন্ত্রণই জনস্বাস্থ্য রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।