জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামান কবে ও কোথায় ছয় দফা ঘোষণা করেন?
A
১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে লাহোরে
B
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে লাহোরে
C
৭ জুন ১৯৬৬ সালে ঢাকার পল্টন ময়দানে
D
১৪ আগস্ট ১৯৬৬ সালে করাচীতে
উত্তরের বিবরণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি। তাঁর প্রদত্ত ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। এই ঐতিহাসিক কর্মসূচি তিনি ঘোষণা করেন ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সম্মেলনে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের একটি মাইলফলক হয়ে ওঠে এবং পরে মুক্তিযুদ্ধের পথ সুগম করে।
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণের ন্যায্য দাবি তুলে ধরার জন্য ছয় দফা প্রণয়ন করেন।
• এই কর্মসূচিতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
• ছয় দফার মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় শাসনের পরিবর্তে একটি ফেডারেল শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে প্রদেশগুলোর অধিক ক্ষমতা থাকবে।
• এই কর্মসূচিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে শুধু পররাষ্ট্রনীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয় দুটি থাকবে, বাকি সব ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
• দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র বৈদেশিক বাণিজ্য ও মুদ্রানীতি কেন্দ্রের অধীনে থাকবে, তবে পূর্ব পাকিস্তান নিজস্ব বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
• তৃতীয় দফায় বলা হয়, প্রদেশগুলোর হাতে রাজস্ব আদায় ও কর ব্যবস্থা থাকবে, যাতে তারা নিজেদের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে।
• চতুর্থ দফায় ছিল দুটি পৃথক মুদ্রা চালু করার প্রস্তাব, যাতে পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে না পারে।
• পঞ্চম দফায় বলা হয়, প্রাদেশিক সরকার বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অধিকার রাখবে এবং তার ব্যবহার নিজের মতো করতে পারবে।
• ষষ্ঠ দফায় প্রাদেশিক সরকারের হাতে বাণিজ্য ও বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়, যাতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়।
• বঙ্গবন্ধু এই কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত ঘোষণা করেন যে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধিকার ছাড়া বাঙালি জাতির মুক্তি অসম্ভব।
• পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী প্রথমে এই দফাগুলোকে দেশবিরোধী হিসেবে অভিহিত করে বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে বাধা দেয়, এমনকি গ্রেপ্তারও করে।
• কিন্তু বাঙালি জনগণ এই ছয় দফাকে নিজেদের মুক্তির সনদ হিসেবে গ্রহণ করে আন্দোলনে নেমে পড়ে।
• পরবর্তীতে এই ছয় দফাই হয়ে ওঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ভিত্তি।
• ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই ছয় দফা আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
এইভাবে ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে লাহোরে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা করা ছয় দফা হয়ে ওঠে ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়, যা অবশেষে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে যায়।
0
Updated: 1 day ago
ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবিতে কোন দু'টি বিষয় কেন্দ্রিয় সরকারের হাতে রাখার প্রস্তাব ছিল?
Created: 3 weeks ago
A
বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা
B
অর্থ ও পররাষ্ট্র
C
স্বরাষ্ট্র ও পরিকল্পনা
D
প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র
ছয় দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালির রাজনৈতিক মুক্তির মূল দাবি ও সংগ্রামের ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রণীত এই কর্মসূচি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে। নিচে ছয় দফা কর্মসূচির মূল বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
-
ছয় দফা কর্মসূচি প্রকাশিত হয়েছিল ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ছয়দফা-কর্মসূচি’ নামে। একে ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’ বা ‘Magna Carta of Bengali Liberation’ বলা হয়।
-
১৯৬৬ সালের ৫–৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধীদলীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো ছয় দফা উপস্থাপন করেন।
-
ঢাকায় ফিরে ২১ ফেব্রুয়ারি, আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে তিনি এই প্রস্তাব দলের অনুমোদন নেন।
-
একই বছরের ১৮–১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সভাতেই ছয় দফা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।
-
২৩ মার্চ ১৯৬৬ তারিখে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা ঘোষণা করেন এবং দেশজুড়ে শুরু হয় গণআন্দোলন।
-
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণদাবি দমন করতে গেলে ৮ মে শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
-
এর প্রতিবাদে ৭ জুন হরতাল পালিত হয়, যেদিন পুলিশের গুলিতে ১১ জন শহীদ হন। দিনটি এখন ‘ছয়দফা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
ছয় দফা কর্মসূচির মূল দাবি সমূহ:
-
প্রথম দফা – Provincial Autonomy (প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন):
-
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে এমন একটি Federal Parliamentary System গঠন করতে হবে, যেখানে প্রতিটি প্রদেশ সার্বভৌম হবে।
-
জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচন হবে, এবং কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা সমান ক্ষমতাসম্পন্ন থাকবে।
-
-
দ্বিতীয় দফা – Central Government’s Powers (কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা):
-
কেবল Defense (প্রতিরক্ষা) ও Foreign Affairs (পররাষ্ট্র) বিষয় দুটি থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।
-
বাকি সব ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে, যাতে পূর্ব পাকিস্তান নিজের অর্থনীতি ও প্রশাসন পরিচালনা করতে পারে।
-
-
তৃতীয় দফা – Currency and Monetary Policy (মুদ্রা ও অর্থনীতি):
-
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথক দুইটি মুদ্রা চালু থাকবে, যা সহজেই বিনিময়যোগ্য হবে।
-
বিকল্পভাবে, একটি অভিন্ন মুদ্রা চালু থাকলেও দুইটি Reserve Bank থাকবে ফেডারেল ব্যাংকের অধীনে।
-
-
চতুর্থ দফা – Taxation and Revenue (রাজস্ব ও কর ব্যবস্থা):
-
সকল প্রকার কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
-
রাজস্বের নির্ধারিত অংশ কেন্দ্রকে প্রদান করা হবে।
-
-
পঞ্চম দফা – Foreign Trade and Exchange (বৈদেশিক বাণিজ্য):
-
দুই প্রদেশের জন্য পৃথক Foreign Exchange Accounts থাকবে।
-
কেন্দ্র নির্ধারিত হারে বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করবে।
-
-
ষষ্ঠ দফা – Regional Defense Forces (আঞ্চলিক সেনাবাহিনী):
-
প্রতিটি প্রদেশ নিজস্ব Militia and Para-military Force গঠন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
-
0
Updated: 3 weeks ago
১৯৬৬ সালের ৬ দফার কয়টি দফা অর্থনীতি বিষয়ক ছিল?
Created: 1 month ago
A
৩টি
B
৪টি
C
৫টি
D
৬টি
‘ছয় দফা’ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি, যা ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষামূলক দাবির ভিত্তিতে ঘোষণা করা হয়।
এই কর্মসূচি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আন্দোলনের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ইতিহাসে একে ‘মুক্তির সনদ’ বা ‘ম্যাগনেকার্টা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তথ্যগুলো হলো:
-
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের দাবিসমূহ নিয়ে একটি সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
-
২৩ মার্চ, ১৯৬৬ সালে লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়।
-
৬ দফা দাবির ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক ‘লাহোর প্রস্তাব’।
ছয় দফার বিবরণ:
-
প্রথম দফা: প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন।
-
দ্বিতীয় দফা: কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা।
-
তৃতীয় দফা: মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
-
চতুর্থ দফা: রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
-
পঞ্চম দফা: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা।
-
ষষ্ঠ দফা: আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা।
অর্থনৈতিক বিষয়ক দফা:
-
তৃতীয় দফা: মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
-
চতুর্থ দফা: রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা।
-
পঞ্চম দফা: বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা।
0
Updated: 1 month ago
ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করা হয় ১৯৬৬ সালের-
Created: 1 month ago
A
ফেব্রুয়ারিতে
B
মে মাসে
C
জুলাই মাসে
D
আগস্টে
ছয় দফা কর্মসূচি
১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি, লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষার স্বার্থে একটি কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। এই কর্মসূচিই পরবর্তীতে ইতিহাসে ছয় দফা কর্মসূচি নামে পরিচিত হয়।
পরবর্তীতে, ২৩ মার্চ ১৯৬৬ সালে লাহোরের এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিব আনুষ্ঠানিকভাবে এই ছয় দফা প্রকাশ করেন। বাংলার জনগণের কাছে এটি ছিল মুক্তির মূল সনদ, যা ইতিহাসে “বাঙালির মুক্তির সনদ” বা “ম্যাগনা কার্টা” নামে খ্যাত। এই দাবিসমূহ মূলত ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব (১৯৪০) এর আদর্শ থেকে প্রভাবিত ছিল।
ছয় দফা দাবি
-
প্রথম দফা: পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।
-
দ্বিতীয় দফা: প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির বাইরে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা সীমিত রাখা।
-
তৃতীয় দফা: মুদ্রা ও আর্থিক ব্যবস্থার উপর প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ।
-
চতুর্থ দফা: রাজস্ব আদায় ও কর/শুল্ক সংগ্রহে প্রাদেশিক সরকারের কর্তৃত্ব।
-
পঞ্চম দফা: বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে।
-
ষষ্ঠ দফা: পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের অধিকার।
উৎসঃ পৌরনীতি ও সুশাসন, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি – প্রফেসর মোঃ মোজাম্মেল হক, বাংলাপিডিয়া (Banglapedia).
0
Updated: 1 month ago