রোহিঙ্গা শরণার্থীগণ মিয়ানমারের কোন অঞ্চলের অধিবাসী?

A

কোচিন

B

শান

C

নর্থ রাখাই স্টেট

D

রেঙ্গুন

উত্তরের বিবরণ

img

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মূলত মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন (North Rakhine State) অঞ্চলের অধিবাসী। তারা রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জাতিগোষ্ঠী, যাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাষা শতাব্দী ধরে ওই অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত। তবে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও জাতিগত বৈষম্যের কারণে তারা মিয়ানমারে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং বর্তমানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের উৎপত্তি: রোহিঙ্গারা মূলত রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসী। তাদের ভাষা আরাকানিজ-বাংলা উপভাষার মিশ্র রূপ, যা বাংলা ভাষার চট্টগ্রাম উপভাষার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। ঐতিহাসিকভাবে তারা আরাকান রাজ্যের প্রাচীন অধিবাসী ছিল, যা ১৮২৪ সালে ব্রিটিশ দখলে যাওয়ার আগে একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল।

রাখাইন রাজ্যের ভৌগোলিক অবস্থান: রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এর পশ্চিমে বাংলাদেশ, পূর্বে মিয়ানমারের মাগওয়ে ও বাগো অঞ্চল, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তরে চিন রাজ্য। এর উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে মংডু ও বুথিডং এলাকা, রোহিঙ্গাদের প্রধান বসবাসের কেন্দ্র।

নির্যাতন ও নিপীড়নের ইতিহাস: মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠীর হাতে রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়, ফলে তারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময়ে দমন-পীড়নের ফলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়।

২০১৭ সালের গণহত্যা ও গণপ্রস্থান: ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পরিচালিত সামরিক অভিযানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে “জাতিগত নিধন” হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে তারা কক্সবাজার ও ভাসানচরে আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশের ভূমিকা: বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের এই মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি: রোহিঙ্গা সংকট এখনো অমীমাংসিত। আন্তর্জাতিক আদালত (ICJ) মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছে। তবে মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন স্টেটের অধিবাসী, যাদের জাতিগত নিপীড়ন আজও বৈশ্বিক মানবিক সংকট হিসেবে বিবেচিত।

Unfavorite

0

Updated: 1 day ago

Related MCQ

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD