'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক কে?
A
ঈশ্বর গুপ্ত
B
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
C
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
D
প্রমথ চৌধুরী
উত্তরের বিবরণ
‘সবুজপত্র’ পত্রিকা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন প্রমথ চৌধুরী, যিনি বাংলা গদ্যকে আধুনিক ও সহজভাবে প্রকাশের পথ দেখিয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘সবুজপত্র’ শুধুমাত্র একটি সাহিত্যপত্রই নয়, বরং একটি নতুন সাহিত্য আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। নিচে এই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
• প্রমথ চৌধুরীর ভূমিকা: প্রমথ চৌধুরী (১৮৬৮–১৯৪৬) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক, সমালোচক ও ভাষাসংস্কারক। তিনি ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার মাধ্যমে ‘কল্লোল যুগ’ ও ‘আধুনিক বাংলা সাহিত্য’-এর পথ প্রস্তুত করেন। তাঁর সম্পাদনায় সাহিত্যচর্চা হয়ে ওঠে মুক্ত, যুক্তিনির্ভর ও মানবিক চিন্তায় সমৃদ্ধ।
• সবুজপত্রের সূচনা: ‘সবুজপত্র’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে, কলকাতা থেকে। এটি ছিল এক প্রকার আধুনিক চিন্তার সাহিত্যপত্র, যেখানে নতুন লেখক ও আধুনিক ভাবধারার সাহিত্যকে স্থান দেওয়া হতো।
• উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য: এই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা গদ্য ও সাহিত্যকে প্রচলিত রীতিনীতির বাইরে এনে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রকাশ করা। এতে **“চলিত ভাষা”**র প্রচলন বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়। প্রমথ চৌধুরী প্রচলিত সংস্কৃতনির্ভর ভাষার পরিবর্তে সহজ, জীবন্ত, কথ্যভাষাকে সাহিত্যভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
• বিখ্যাত লেখকদের অংশগ্রহণ: ‘সবুজপত্র’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সজনীকান্ত দাস, মোহিতলাল মজুমদার, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত প্রমুখ সাহিত্যিক। এর মাধ্যমে একটি নতুন সাহিত্যগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়, যাদের বলা হয় ‘সবুজপত্র গোষ্ঠী’।
• বাংলা গদ্যে পরিবর্তন: প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘সবুজপত্র’ গদ্যরীতিতে এক বিপ্লব ঘটায়। তাঁর লেখা ‘বঙ্গভাষা’, ‘বিলেতফেরত’, ও ‘আত্মপ্রকাশ’ প্রবন্ধে বাংলা গদ্যকে এক নতুন রূপ দেওয়া হয়।
• সাহিত্য আন্দোলনের সূচনা: ‘সবুজপত্র’-এর মাধ্যমে যে সাহিত্য আন্দোলন শুরু হয়, তা পরবর্তীকালে ‘কল্লোল যুগ’-এর প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। এটি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নতুন রুচির বীজ বপন করে।
• প্রভাব: এই পত্রিকা বাংলা সাহিত্যে ভাষার সরলীকরণ, বাস্তববোধ এবং স্বাধীন চিন্তার বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনা সাহিত্যজগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন রূপ দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে এই পত্রিকা হয়ে উঠেছিল বাংলা আধুনিক গদ্যের জন্মভূমি, যা আজও সাহিত্য ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।
0
Updated: 1 day ago
'দিগদর্শন' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন -
Created: 1 month ago
A
রামমোহন রায়
B
জন ক্লার্ক মার্শম্যান
C
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
D
নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড
'দিগদর্শন' বঙ্গভূমিতে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক পত্রিকা। প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে এবং এটি মাসিক পত্রিকা হিসেবে ছাপা হত। পত্রিকাটি শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন থেকে প্রকাশিত হয়।
পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন বিখ্যাত খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক জোশুয়া মার্শম্যানের পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যান। কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারে দিগ্দর্শনের কপিসমূহ সংরক্ষিত আছে।
0
Updated: 1 month ago
'বঙ্গদর্শন' পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?
Created: 3 months ago
A
প্যারীচাঁদ মিত্র
B
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
C
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
D
প্রমথ চৌধুরী
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ১৮৭২ সালে প্রকাশিত ‘বঙ্গদর্শন’ ছিল উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
বাংলা গদ্যভাষার বিকাশে এ পত্রিকার অবদান অনস্বীকার্য। যদিও এটি প্রথম পর্যায়ে মাত্র চার বছর (১৮৭২–১৮৭৬) নিয়মিত প্রকাশ পেয়েছিল, তবুও তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
‘বঙ্গদর্শন’-এর ভাষা ছিল উৎকর্ষমান সাধু বাংলা, যা তৎকালীন শিক্ষিত সমাজের রুচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই পত্রিকায় সাহিত্য, সমাজনীতি, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি ও বিজ্ঞানের উপর বহু তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা প্রকাশিত হতো।
এর মাধ্যমে বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ প্রথম আধুনিক চেতনার প্রকাশের সুযোগ পায়। তাই একে শিক্ষিত বাঙালির প্রথম মুখপত্র বললে অত্যুক্তি হয় না।
বঙ্কিমচন্দ্র ছাড়াও গঙ্গাচরণ, রামদাস সেন, অক্ষয় কুমার সরকার ও চন্দ্রনাথ বসুর মতো জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিত্বরা নিয়মিত এই পত্রিকায় লেখালেখি করতেন।
পরবর্তীকালে বঙ্কিমচন্দ্রের দুই ভাই—সঞ্জীবচন্দ্র ও শ্রীশচন্দ্র—কিছুদিন এই পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
দীর্ঘ বিরতির পর, ২০০০ সাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটিতে অবস্থিত বঙ্কিমভবন গবেষণাকেন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’-কে নতুন আঙ্গিকে ষাণ্মাসিক পত্রিকা হিসেবে পুনঃপ্রকাশ করছে। এই নবযাত্রা ‘বঙ্গদর্শন’-এর ঐতিহ্য ও তাৎপর্যকে আরও প্রসারিত করছে।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা - ড. সৌমিত্র শেখর; বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago
জোশুয়া মার্শম্যান কোন পত্রিকার প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন?
Created: 2 weeks ago
A
সমাচার দর্পণ
B
সমাচার সভারাজেন্দ্র
C
সম্বাদ কৌমুদী
D
বাঙ্গাল গেজেট
জোশুয়া মার্শম্যান ছিলেন বাংলার প্রারম্ভিক যুগের সংবাদপত্র আন্দোলন, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি কেবল একজন মিশনারি নন, বরং একজন পণ্ডিত, চিন্তাবিদ ও শিক্ষাব্রতী ব্যক্তিত্ব, যিনি বাংলা সাংবাদিকতা ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন।
-
জোশুয়া মার্শম্যান ছিলেন একজন পণ্ডিত, প্রাচ্যবিদ্যাবিশারদ ও ধর্মতাত্ত্বিক।
-
তিনি শ্রীরামপুর মিশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, যিনি উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ডের সঙ্গে একত্রে শিক্ষা ও সংবাদমাধ্যমের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
-
তিনি ভারতে সংবাদপত্রের অগ্রদূতদের অন্যতম এবং ১৮১৮ সালে প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ প্রকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।
-
এ ছাড়া তিনি ‘Friends of India’ নামে একটি ইংরেজি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, যার পরবর্তীকালে সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র জন ক্লার্ক মার্শম্যান।
-
১৮২১ সালে তিনি শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে ‘School Dialogues; or Lessons on the Commandments and the Way of Salvation’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন।
-
একই বছরে তিনি প্রথমবারের মতো চীনা ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করেন, যা ১৮২১ সালে শ্রীরামপুর প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়।
-
তিনি আরও কিছু খ্রিস্টীয় প্রার্থনাসঙ্গীত রচনা করেন, যা পরবর্তীকালে প্রচার কাজে ব্যবহৃত হয়।
-
তাঁর প্রচেষ্টায় শিক্ষা, ধর্মপ্রচার ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে চিন্তাবিকাশের এক নতুন যুগের সূচনা ঘটে।
জোশুয়া মার্শম্যান সম্পৃক্ত প্রধান পত্রিকা ও প্রকাশনা:
-
সমাচার দর্পণ – প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র (১৮১৮)।
-
দিগদর্শন – শিক্ষামূলক ও সাহিত্যধর্মী পত্রিকা।
-
Friends of India – ইংরেজি ভাষার মাসিক পত্রিকা।
বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
-
মুসলমান সম্পাদিত প্রথম সংবাদপত্র: সমাচার সভারাজেন্দ্র — সম্পাদক শেখ আলিমুল্লাহ; প্রকাশিত হতো কলকাতার কলিঙ্গা থেকে। এটি ছিল বাংলা-পারসি দ্বিভাষিক পত্রিকা।
-
ব্রাহ্মণসেবধি ও সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।
-
রাজা রামমোহন রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত ‘বাঙ্গাল গেজেট’ ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা, যার সম্পাদক ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।
জোশুয়া মার্শম্যানের অবদান শুধু সাংবাদিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; তিনি ভারতীয় সমাজে শিক্ষা, যুক্তিবাদ ও মুদ্রণসংস্কৃতির প্রসারে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন, যার ফলেই বাংলায় আধুনিক সংবাদপত্র ও শিক্ষা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
0
Updated: 2 weeks ago