উত্তর: খ) মুসোলিনি
এই উত্তরটি সঠিক কারণ বেনিতো মুসোলিনি ছিলেন ফ্যাসিবাদ বা ফ্যাসিজমের প্রবর্তক। বিশ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় তিনি এই মতবাদের জন্ম দেন। ফ্যাসিবাদ মূলত একটি একনায়কতান্ত্রিক রাজনৈতিক দর্শন, যেখানে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সর্বোচ্চ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা সীমিত থাকে। এর মূল লক্ষ্য ছিল শক্তিশালী জাতি গঠন ও রাষ্ট্রের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রতিষ্ঠা করা।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালি ছিল ভীষণভাবে দুর্বল ও বিপর্যস্ত। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত, বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ছিল বিভক্তি। এই পরিস্থিতিতেই মুসোলিনি জনগণের ক্ষোভ ও হতাশাকে কাজে লাগিয়ে নতুন এক রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করেন, যার নাম দেন ফ্যাসিস্ট আন্দোলন। তাঁর লক্ষ্য ছিল ইতালিকে আবার শক্তিশালী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং জাতীয় গৌরব ফিরিয়ে আনা।
ফ্যাসিজমের মূল ধারণাগুলো ছিল রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এবং কর্তৃত্ববাদী।
-
এতে রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়, এবং নাগরিকদের ব্যক্তিস্বাধীনতা রাষ্ট্রের অধীনে থাকে।
-
গণতন্ত্রকে দুর্বল ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ ফ্যাসিজম বিশ্বাস করে যে জনগণের সিদ্ধান্তে নয়, বরং একক শক্তিশালী নেতার নির্দেশে দেশ চলা উচিত।
-
এটি চায় সমাজে শৃঙ্খলা, জাতীয় ঐক্য এবং শক্তির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে।
-
ফ্যাসিবাদে সেনাবাদ, জাতীয়তাবাদ এবং বর্ণগৌরবের ধারণা বিশেষভাবে গুরুত্ব পায়।
-
মুসোলিনির মতে, রাষ্ট্রের প্রতি অন্ধ আনুগত্যই প্রকৃত দেশপ্রেমের প্রকাশ।
মুসোলিনি ১৯২২ সালে তাঁর ফ্যাসিস্ট পার্টির মাধ্যমে ইতালির ক্ষমতা দখল করেন এবং স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি নিজেকে “ইল ডুসে” (Il Duce) বা “নেতা” বলে অভিহিত করতেন। তাঁর নেতৃত্বে ইতালি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ত্যাগ করে একদলীয় স্বৈরশাসনে প্রবেশ করে।
ফ্যাসিবাদের প্রভাব শুধু ইতালিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই মতবাদ জার্মানির অ্যাডলফ হিটলারকেও প্রভাবিত করে, যিনি পরবর্তীতে নাৎসিবাদের সূচনা করেন। যদিও হিটলার ফ্যাসিবাদের একটি আলাদা রূপ সৃষ্টি করেন, তবুও এর মূল ভিত্তি ছিল মুসোলিনির চিন্তাধারায় প্রভাবিত।
ফ্যাসিবাদের ফলশ্রুতিতে ইউরোপে স্বৈরতন্ত্রের উত্থান ঘটে, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সুতরাং বলা যায়, ফ্যাসিজমের প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন বেনিতো মুসোলিনি। তাঁর নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো এই মতবাদ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়, যা বিশ্বরাজনীতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত।