'পদ্মাবতী' কাব্যের রচয়িতা আলাওল কোন যুগের কবি?
A
প্রাচীন যুগের
B
মধ্য যুগের
C
আধুনিক যুগের
D
উত্তর আধুনিক যুগের
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আলাওল এমন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যিনি তাঁর অনন্য কাব্য প্রতিভা ও অনুবাদ দক্ষতার মাধ্যমে মধ্যযুগের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘পদ্মাবতী’ তাঁকে বাংলার মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। নিচে আলাওল ও তাঁর সাহিত্যিক অবদানের মূল দিকগুলো তুলে ধরা হলো।
• আলাওলের যুগ ছিল বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ, যা প্রায় ১৪শ থেকে ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময় বাংলা সাহিত্যে মূলত ধর্মীয়, কাব্যিক ও রোমান্টিক ধারার বিকাশ ঘটে। আলাওল ছিলেন এই যুগের মুসলিম রোমান্টিক কবি হিসেবে খ্যাত।
• আলাওলের জন্ম বাংলাদেশের ফতেহাবাদ (বর্তমান ফেনী অঞ্চল) এ। তিনি আরাকান রাজদরবারে অবস্থানকালে তাঁর সাহিত্য প্রতিভার বিকাশ ঘটান। আরাকানের রাজা ও অভিজাত শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি বিভিন্ন পারসী ও হিন্দি গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন।
• ‘পদ্মাবতী’ তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত অনুবাদকাব্য, যা মূলত মালিক মুহাম্মদ জায়সীর হিন্দি মহাকাব্য ‘পদ্মাবৎ’-এর বাংলা অনুবাদ। আলাওল এতে শুধু অনুবাদই করেননি, বরং বাংলার ভাব, রস, ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিলিয়ে একে নতুন রূপ দিয়েছেন।
• আলাওলের রচনায় ভালবাসা, বীরত্ব, নৈতিকতা ও ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর কাব্যে ইসলামী ভাবধারা ও ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা একত্রে দেখা যায়, যা তাঁকে মধ্যযুগীয় সাহিত্যের এক বিশেষ প্রতিনিধি করে তুলেছে।
• মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের প্রধান ধারা ছিল— মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব পদাবলি, অনুবাদকাব্য ও রোমান্টিক সাহিত্য। আলাওলের কাব্য এই ধারার রোমান্টিক ও অনুবাদকাব্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
• আলাওলের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ‘সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল’, ‘তোহফা’, ‘সিকান্দারনামা’ ও ‘হপ্ত পয়কর’। এসব গ্রন্থে তিনি নৈতিকতা, প্রেম, ইতিহাস ও মানবতার বার্তা তুলে ধরেছেন।
• তাঁর ভাষাশৈলী ছিল অতি মার্জিত ও কাব্যময়। তিনি আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত শব্দের মিশ্রণে এক বিশেষ সাহিত্যরীতি তৈরি করেন যা মধ্যযুগীয় বাংলা কবিতার বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য হয়।
• আলাওলের কাব্যে নারী চরিত্র বিশেষভাবে শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। পদ্মাবতী চরিত্রের মাধ্যমে তিনি এক আদর্শ নারী ও রাজরানীর প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন।
• বাংলা সাহিত্যে আলাওলকে বলা হয় “আরাকান দরবারের মুকুটমণি”। তাঁর সাহিত্যকীর্তি শুধু বাংলার নয়, সমগ্র উপমহাদেশের সাহিত্য ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
সুতরাং স্পষ্ট যে, আলাওল মধ্যযুগের কবি, যিনি বাংলা অনুবাদকাব্য ও রোমান্টিক কাব্যের ধারা বিকশিত করে বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন।
0
Updated: 1 day ago
কবি আলাওলের জন্মস্থান কোনটি?
Created: 3 months ago
A
ফরিদপুরের সুরেশ্বর
B
চট্টগ্রামের জোব্রা
C
বার্মার আরাকান
D
চট্টগ্রামের পটিয়া
আলাওল
-
আলাওল ছিলেন মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি।
-
তিনি আনুমানিক ১৬০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান ছিল চট্টগ্রামের হাটহাজারির জোবরা গ্রাম এবং মতান্বরে (বর্তমানে ফরিদপুরের ফতেহাবাদ পরগনা)।
-
আলাওল ছিলেন সপ্তদশ শতকের আরাকান রাজ্যের রাজকবি এবং সেই সময়ের অন্যতম সেরা কবি।
-
তাঁর প্রথম ও সবচেয়ে বিখ্যাত মহাকাব্য হলো ‘পদ্মাবতী’, যা মাগন ঠাকুরের উৎসাহে রচিত।
আলাওলের কিছু বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম:
-
পদ্মাবতী
-
হপ্তপয়কর
-
সিকান্দারনামা
-
তোহফা
-
সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামান
উৎস:
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (মাহবুবুল আলম), বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর), বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago
কোন কাব্যে আলাওল ব্যক্তিগত জীবনের কথা লিখেছেন?
Created: 1 month ago
A
পদ্মাবতী
B
হপ্তপয়কর
C
সিকান্দরনামা
D
তোহ্ফা
সঠিক উত্তর হলো ক) পদ্মাবতী। আলাওল, মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ কবি, তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা ও ঘটনাবলি উল্লেখ করেছেন।
কাব্যের প্রথম অংশে তিনি তাঁর জীবনের দুঃখ, আরাকানে আগমন, হার্মাদের (পর্তুগিজ জলদস্যুদের) সঙ্গে যুদ্ধ এবং রোসাঙ্গে রাজ-আসোয়ার হিসেবে জীবনযাপনের বিবরণ দিয়েছেন।
এই অংশটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটায় এবং প্রস্তাবনা ও অন্যান্য অংশে এমন উল্লেখ আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়, যা অন্যান্য কাব্যের তুলনায় স্বতন্ত্র।
• আলাওল ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে আত্মকথায় লিখেছেন বিভিন্ন ঘটনাবলি যেমন:
-
মুলুক ফতেয়াবাদ গৌড়েতে প্রধান এবং জালালপুর পুণ্য স্থান।
-
হার্মাদের নৌকার সঙ্গে দেখা এবং বহু যুদ্ধ, যুদ্ধে শহীদ হওয়া।
-
রোসাঙ্গে আসা ও রাজ-আসোয়ার হিসেবে জীবনযাপন।
-
রোসাঙ্গে মুসলমানদের সাথে বৈষয়িক, সদাচারী, কুলীন, পণ্ডিত ও গুণবন্তদের সহাবস্থান।
• ‘পদ্মাবতী’ কাব্য
-
এটি আলাওলের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্য এবং মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় প্রণয়কাব্য।
-
কাব্যটি হিন্দি কবি মালিক মুহাম্মদ জয়সীর ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের অনুবাদ।
-
১৬৫১ সালে আরাকান রাজ সাদ থদোমিন্তারের রাজত্বকালে মন্ত্রী মাগন ঠাকুরের আদেশে রচিত।
-
কাব্যটি দুইটি পর্বে বিভক্ত:
• প্রথম পর্বে চিতোররাজ রত্নসেনের পদ্মাবতী লাভের সফল অভিযান।
• দ্বিতীয় পর্বে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির পদ্মাবতী লাভের ব্যর্থ সামরিক অভিযান।
• সাহিত্যিক পরিচিতি:
-
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
-
‘পদ্মাবতী’ তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ কাব্য।
-
এটি মালিক মুহাম্মদ জয়সীর ‘পদুমাবত’ কাব্যের অনুবাদ।
• আলাওল রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ:
-
পদ্মাবতী
-
তোহফা
-
সপ্তপয়কার
-
সিকান্দারনামা
• অন্যান্য তথ্য:
-
আধুনিক যুগের লেখক মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬০ সালে ‘পদ্মাবতী’ নাটক রচনা করেন।
-
এটি পৌরাণিক নাটক, গ্রিক পুরাণের ‘অ্যাপেল অব ডিসকর্ড’ গল্প অবলম্বনে রচিত।
• অন্যান্য অপশন সম্পর্কিত তথ্য:
-
(খ) হপ্তপয়কর: সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি রচিত, আরাকান রাজসভায় রচনা, পারসি ও বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ।
-
(গ) সিকান্দরনামা: ১৬৭৩ সালে প্রকাশিত, নিজামির গ্রন্থের সরল অনুবাদ।
-
(ঘ) তোহফা: ধর্মীয় ও নৈতিক কাব্য, আলাওলের পঞ্চম রচনা, ফারসি গ্রন্থ ‘তোহফাতুন নেসায়েহ্’ এর অনুবাদ।
0
Updated: 1 month ago
আলাওলের 'পদ্মাবতী' কাব্যে কয়টি পর্ব রয়েছে?
Created: 1 month ago
A
এক
B
দুই
C
তিন
D
চার
পদ্মাবতী (কাব্য)
সাধারণ তথ্য:
রচয়িতা: আলাওল
প্রকাশকালে রচনা: ১৬৫১, আরাকান রাজ, মন্ত্রী মাগন ঠাকুর-এর আদেশে
ধরন: মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় প্রণয়কাব্য
উৎসকাব্য: হিন্দি কবি মালিক মুহাম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবৎ/পদুমাবত’
কাব্যের কাঠামো:
দুইটি পর্ব:
প্রথম পর্ব: সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীকে লাভের জন্য চিতোররাজ রত্নসেনের সফল অভিযান
দ্বিতীয় পর্ব: রানি পদ্মাবতীকে লাভের জন্য দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির ব্যর্থ সামরিক অভিযান
আলাওল (কবি)
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি
বিখ্যাত গ্রন্থসমূহ:
পদ্মাবতী
তোহফা
সপ্তপয়কার
সিকান্দারনামা
উল্লেখযোগ্য তথ্য:
আধুনিক যুগের মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬০ সালে পদ্মাবতী নাটক রচনা করেন
নাটকটি গ্রিক পুরাণের ‘অ্যাপেল অব ডিসকর্ড’ গল্প অবলম্বনে রচিত
উৎস:
লাল নীল দীপাবলি, হুমায়ুন আজাদ
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, মাহবুবুল আলম
বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 1 month ago