আধুনিক বিজ্ঞানের জনক কে? 

A

আইজ্যাক নিউটন

B

আলবার্ট আইনস্টাইন

C

গ্যালিলিও গ্যালিলেই

D

জোহানেস কেপলার

উত্তরের বিবরণ

img

গ্যালিলিও গ্যালিলেই ছিলেন এমন এক বিজ্ঞানী যিনি বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিলেন। তিনি পরীক্ষানির্ভর ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাই তাঁকে আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। নিচে তাঁর জীবন, আবিষ্কার ও অবদান সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো।

জন্ম ও মৃত্যু: গ্যালিলিও গ্যালিলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৫৬৪ সালে ইতালির পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮ জানুয়ারি, ১৬৪২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতজ্ঞ ও দার্শনিক ছিলেন।

শিক্ষা ও প্রাথমিক জীবন: গ্যালিলিও প্রথমে চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন শুরু করলেও পরে তিনি গণিত ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই তাঁর যুক্তিবাদী চিন্তাধারা বিকশিত হয়।

প্রধান অবদান:

  • দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নয়ন: গ্যালিলিও প্রথম এমন একটি উন্নত দূরবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন যার সাহায্যে তিনি আকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি চাঁদের পাহাড়-খাদ, বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ (Io, Europa, Ganymede, Callisto) এবং শুক্রগ্রহের বিভিন্ন কলা পর্যবেক্ষণ করেন।

  • কোপারনিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদে সমর্থন: গ্যালিলিও প্রমাণ করেন যে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। এই ধারণা তখনকার সময়ে চার্চের প্রচলিত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তিনি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার শিকার হন।

  • গতির সূত্রের অবদান: তিনি নিউটনের প্রথম ও দ্বিতীয় গতিসূত্রের ভিত্তি তৈরি করেন। তাঁর পরীক্ষাগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, ভারী ও হালকা বস্তু একই গতিতে পড়ে, যা অ্যারিস্টটলের ধারণার বিরোধিতা করে।

  • বিজ্ঞানচর্চায় পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা: গ্যালিলিও বিজ্ঞানের তত্ত্ব যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষানির্ভর প্রমাণ ব্যবহারের পদ্ধতি প্রচলন করেন। এই পরীক্ষাধর্মী চিন্তাভাবনাই আধুনিক বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি।

বৈজ্ঞানিক বিপ্লবে ভূমিকা: গ্যালিলিওর যুগেই ইউরোপে শুরু হয় “Scientific Revolution” বা বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। তাঁর আবিষ্কার ও যুক্তিভিত্তিক গবেষণা পরবর্তীতে নিউটন, কেপলারসহ অন্যান্য বিজ্ঞানীর পথপ্রদর্শক হয়।

ধর্মীয় বিরোধ ও বিচার: গ্যালিলিওর সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদ ক্যাথলিক চার্চের শিক্ষার বিপরীতে যাওয়ায় ১৬৩৩ সালে তাঁকে রোমান ইনকুইজিশন আদালতে হাজির হতে হয়। তাঁকে নিজের মতবাদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হলেও পরবর্তীকালে তাঁর তত্ত্বই প্রমাণিত হয় সঠিক।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ:

  • Dialogue Concerning the Two Chief World Systems (1632)

  • Sidereus Nuncius (Starry Messenger, 1610)
    এই বইগুলোতে তিনি তাঁর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বগুলো তুলে ধরেন।

গ্যালিলিওর প্রভাব ও উত্তরাধিকার:

  • আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে তাঁর অবদান অপরিসীম।

  • পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষানির্ভর ধারার সূচনা করেন তিনিই।

  • বিজ্ঞানকে ধর্মের প্রভাবমুক্ত করে যুক্তি ও প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত করেন।

  • বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একবার বলেছিলেন, “গ্যালিলিওই আধুনিক বিজ্ঞান জন্ম দিয়েছিলেন; তাঁর চেয়ে বড় অবদান আর কারও নেই।”

গ্যালিলিও শুধু একজন আবিষ্কারকই নন, তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের ধারক ও বাহক। তাঁর গবেষণা, যুক্তিবাদী চিন্তা ও পরীক্ষানির্ভর পদ্ধতি আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের মূলভিত্তি গড়ে তুলেছে। তাই তাঁকে যথার্থভাবেই বলা হয় “আধুনিক বিজ্ঞানের জনক।”

Unfavorite

0

Updated: 1 day ago

Related MCQ

অণুজীব বিজ্ঞানের জনক কে?

Created: 4 weeks ago

A

রবার্ট কক্

B

লুইস পাস্তুর

C

এডওয়ার্ড জেনার

D

এন্টনি ভন লিউয়েনহুক

Unfavorite

0

Updated: 4 weeks ago

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD