বাংলা সাহিত্যের গদ্যের জনক কে?
A
প্যারীচাঁদ মিত্র
B
রাজা রামমোহন
C
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
D
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্যে গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় সহজ, সাবলীল ও প্রাঞ্জল গদ্যের রীতি প্রবর্তন করেন। তাঁর এই অবদানের ফলেই তাঁকে “বাংলা গদ্যের জনক” বলা হয়। বিদ্যাসাগরের গদ্য শুধু ভাষাগত সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ নয়, বরং যুক্তিবোধ, স্পষ্টতা ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশেও অসাধারণ।
• ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০–১৮৯১) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, সমাজসংস্কারক ও সাহিত্যিক। তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করে সংস্কৃত ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন এবং বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য করে তোলার জন্য কাজ করেন।
• বিদ্যাসাগরের গদ্যরীতি ছিল সাদাসিধে, যুক্তিনির্ভর ও প্রাঞ্জল, যা সাধারণ পাঠকের কাছে সহজবোধ্য ছিল। তাঁর লেখায় সংস্কৃত প্রভাব থাকলেও তা কখনও দুর্বোধ্য হয়ে ওঠেনি।
• তাঁর রচিত ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ এবং ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থ দুটি বাংলা গদ্যের বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। ‘বর্ণপরিচয়’ শিশু শিক্ষার ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
• তিনি বাংলা গদ্যে অলঙ্কারবর্জিত সরল ভাষার প্রয়োগ শুরু করেন। পূর্বে বাংলা গদ্য ছিল অতিরিক্ত সংস্কৃতনির্ভর, যা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। বিদ্যাসাগর সেই গদ্যকে সাধারণ মানুষের ভাষায় রূপান্তর করেন।
• তাঁর লেখার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিবাদী চিন্তা। তিনি সমাজে নারীর অধিকার, বিধবা বিবাহ, শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
• বিদ্যাসাগরের গদ্যের ভাষা আজও বাংলা সাহিত্যের আদর্শ গদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। তাঁর প্রভাব পরবর্তী সাহিত্যিকদের ওপর গভীরভাবে পড়েছিল, যেমন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর গদ্যরীতির উন্নত ধারায় অনুপ্রাণিত হন।
• তাঁর অবদান কেবল সাহিত্যেই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও ছিল অনন্য। তিনি বাংলা ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
• বাংলা গদ্যের ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের আগমন ছিল এক নবযুগের সূচনা। তাঁর সহজ-সাবলীল গদ্য বাংলা ভাষাকে জনগণের মুখের ভাষার কাছাকাছি নিয়ে আসে।
সব মিলিয়ে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং সেই গদ্যকে আধুনিকতার পথে নিয়ে যান। তাঁর এই অমলিন অবদানই তাঁকে চিরকাল “বাংলা গদ্যের জনক” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
0
Updated: 1 day ago
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত মৌলিক গ্রন্থ কোনটি?
Created: 3 weeks ago
A
সীতার বনবাস
B
অল্প হইল
C
শকুন্তলা
D
ব্রজবিলাস
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট সংস্কৃত পণ্ডিত, লেখক, শিক্ষাবিদ এবং সমাজসংস্কারক। তিনি জনহিতৈষী চিন্তাধারার অধিকারী এবং বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে সুপরিচিত।
-
জন্ম ও মৃত্যু: ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন; ২৯ জুলাই, ১৮৯১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
-
পদবি ও স্বাক্ষর: পৈতৃক পদবি বন্দ্যোপাধ্যায়; স্বাক্ষর করতেন 'ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা' নামে।
-
উপাধি: ১৮৩৯ সালে সংস্কৃত কলেজ তাঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি প্রদান করে।
-
ভাষা ও সাহিত্য: বাংলা গদ্যের প্রবর্তক; প্রথম যতি বা বিরামচিহ্ন স্থাপন করেন।
-
প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ: 'বেতাল পঞ্চবিংশতি'।
-
বাংলা ভাষায় প্রথম মৌলিক গদ্য রচনা: 'প্রভাবতী সম্ভাষণ'।
-
ব্যাকরণ গ্রন্থ: 'ব্যাকরণ কৌমুদী'।
বিখ্যাত গ্রন্থ:
-
শকুন্তলা
-
সীতার বনবাস
-
ভ্রান্তিবিলাস
মৌলিক রচনা:
-
অতি অল্প হইল
-
আবার অতি অল্প হইল
-
ব্রজবিলাস
-
বিধবা বিবাহ ও যশোরের হিন্দু ধর্মরক্ষিণী সভা
-
রত্ন পরীক্ষা
শিক্ষামূলক গ্রন্থ:
-
আখ্যান মঞ্জরী
-
বোধোদয়
-
বর্ণপরিচয়
-
কথামালা
0
Updated: 3 weeks ago
ঈশ্বরচন্দ্র কত সালে 'বিদ্যাসাগর' উপাধি লাভ করেন?
Created: 1 month ago
A
১৮২৯ সালে
B
১৮২৫ সালে
C
১৮৩৯ সালে
D
১৮৩১ সালে
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক পদবি ছিল 'বন্দ্যোপাধ্যায়' এবং পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকৃত নাম ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি স্বাক্ষর করার সময় 'ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা' নামও ব্যবহার করতেন।
১৮৩৯ সালে সংস্কৃত কলেজ তাঁকে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি প্রদান করে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ছিল বেতাল পঞ্চবিংশতি।
বিদ্যাসাগরের কয়েকটি বিখ্যাত সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে শকুন্তলা, সীতার বনবাস এবং ভ্রান্তিবিলাস। তিনি শিক্ষামূলক গ্রন্থও রচনা করেছেন, যেমন আখ্যান মঞ্জুরী, বোধোদয়, বর্ণপরিচয় এবং কথামালা।
উৎস
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা এবং বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 1 month ago
বাংলা গদ্যের 'যথার্থ শিল্পী' বলা হয় কাকে?
Created: 3 days ago
A
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে
B
মীর মশাররফ হোসেনকে
C
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে
D
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে
বাংলা সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের ‘যথার্থ শিল্পী’ বলা হয়, কারণ তিনি গদ্যে সরলতা, প্রাঞ্জলতা ও যুক্তিসঙ্গত ভাব প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকের কাছে গভীর প্রভাব ফেলেেছেন। তার গদ্যরচনার বিশেষত্ব হলো ভাষার স্বাভাবিকতা, স্পষ্টতা এবং শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য। তিনি গদ্যকে শুধুমাত্র তথ্যপ্রদান বা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেননি, বরং এতে সাহিত্যিক সৌন্দর্য ও মানবিক দৃষ্টিকোণও প্রয়োগ করেছেন।
এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
-
সরল ও প্রাঞ্জল ভাষা: বিদ্যাসাগরের লেখা গদ্যে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা নেই। তিনি পাঠককে সহজ ও স্বচ্ছ ভাষায় ভাব পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
-
যুক্তিসঙ্গত প্রকাশ: তার গদ্যরচনায় ভাবের ধারাবাহিকতা এবং যুক্তির প্রাধান্য থাকে। প্রতিটি বাক্য এবং প্যারাগ্রাফ বিন্যস্ত ও সুসংগঠিত, যা পাঠকের বোঝাপড়া সহজ করে।
-
শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য: বিদ্যাসাগরের গদ্য প্রায়শই শিক্ষা, নৈতিকতা ও সামাজিক সচেতনতা প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে লেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষাবিষয়ক প্রবন্ধ, প্রাতিষ্ঠানিক নথি বা সাহিত্যিক রচনা।
-
সাহিত্যিক সৌন্দর্য: সরলতার সঙ্গে সঙ্গে তার গদ্যে ভাষার সৌন্দর্য ও ছন্দও থাকে। এটি বাংলা গদ্যের শৈল্পিক দিককে সমৃদ্ধ করে।
-
গদ্যের প্রভাব: বিদ্যাসাগরের প্রবন্ধ, চিঠি, বক্তৃতা এবং শিক্ষামূলক লেখা পাঠকদের সাহিত্যিক ও নৈতিক মূল্যবোধ বোঝার সুযোগ দেয়। তার লেখা আধুনিক বাংলা গদ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
সারসংক্ষেপে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের যথার্থ শিল্পী বলা হয়, কারণ তিনি সরলতা, প্রাঞ্জলতা এবং যুক্তিসঙ্গত ভাষা ব্যবহার করে বাংলা গদ্যকে শিক্ষামূলক, সাহিত্যিক এবং মানবিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার লেখা গদ্য বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সূচনা এবং পাঠকের জন্য বোধ্য ও প্রভাবশালী সাহিত্যিক উদাহরণ হিসেবে পরিচিত।
0
Updated: 3 days ago