বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি কোনটি?
A
সংস্কৃত
B
হিন্দি
C
বাংলা
D
উর্দু
উত্তরের বিবরণ
বাংলা ভাষার নিজস্ব লিপি হলো বাংলা লিপি, যা বাংলা ভাষার ধ্বনি ও শব্দকে লিখিতভাবে প্রকাশ করে। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ লিপি। বাংলা লিপি সময়ের সঙ্গে বিকশিত হয়ে আজকের আধুনিক রূপ পেয়েছে, যা বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ বিশ্বের বহু বাংলা ভাষাভাষীর যোগাযোগ ও সাহিত্যচর্চার মূল মাধ্যম। বাংলা লিপি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
-
উৎপত্তি: বাংলা লিপির উৎপত্তি ব্রাহ্মী লিপি থেকে। খ্রিষ্টীয় নবম থেকে দশম শতাব্দীতে পূর্ব ভারতের গৌড় অঞ্চলে বাংলা লিপির প্রাথমিক রূপ গড়ে ওঠে। এটি প্রথমে ‘গৌড়ীয় লিপি’ নামে পরিচিত ছিল, যা পরবর্তীতে বাংলা লিপিতে রূপান্তরিত হয়।
-
লিপির গঠন: বাংলা লিপি একটি ধ্বনিগত লিপি, অর্থাৎ প্রতিটি বর্ণ একটি নির্দিষ্ট ধ্বনিকে নির্দেশ করে। বাংলা লিপিতে মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে—এর মধ্যে স্বরবর্ণ ১১টি এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি।
-
স্বরবর্ণ: অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ
-
ব্যঞ্জনবর্ণ: ক, খ, গ, ঘ, ঙ ... হ পর্যন্ত মোট ৩৯টি
-
-
লিখনপদ্ধতি: বাংলা লিপি বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয়। প্রতিটি অক্ষর ‘মাত্রা’ বা ‘শিরোরেখা’ দ্বারা উপরের দিকে যুক্ত থাকে। এই শিরোরেখাই বাংলা লেখার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
-
সংখ্যা পদ্ধতি: বাংলা লিপির নিজস্ব সংখ্যা আছে—০ থেকে ৯ পর্যন্ত। যেমন: ০ (শূন্য), ১ (এক), ২ (দুই), ৩ (তিন), ৪ (চার), ৫ (পাঁচ), ৬ (ছয়), ৭ (সাত), ৮ (আট), ৯ (নয়)।
-
সংযুক্ত বর্ণ: বাংলা লিপিতে দুটি বা তার বেশি ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে সংযুক্ত বর্ণ তৈরি হয়, যেমন — “ক্ত”, “ন্দ্র”, “স্ত্র” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা উচ্চারণের বৈচিত্র্য প্রকাশ করে।
-
স্বরচিহ্ন: স্বরবর্ণ যুক্ত হলে বর্ণের আকার পরিবর্তিত হয়। যেমন: ক + ি = কি, ক + ে = কে, ক + ো = কো। এভাবে স্বরচিহ্নগুলো বর্ণের উচ্চারণ নির্ধারণ করে।
-
লিপির ব্যবহার: বাংলা লিপি শুধু বাংলা ভাষার জন্য নয়, এর কাছাকাছি কিছু ভাষা যেমন আসামি ও মৈথিলি ভাষার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। তাই একে “পূর্ব ভারতের সাধারণ লিপি” বলেও অনেকে উল্লেখ করেন।
-
আধুনিক রূপান্তর: মুদ্রণযন্ত্রের উদ্ভাবনের পর বাংলা লিপিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যাতে ছাপাখানায় ব্যবহার সহজ হয়। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলা লেখায় ইউনিকোড পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যা বাংলা লিপিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়েছে।
-
গুরুত্ব: বাংলা লিপি আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। এটি শুধু লিখনের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের সাহিত্য, শিক্ষা ও জাতীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলা লিপি হলো বাংলা ভাষার নিজস্ব ও মৌলিক লিপি, যা দীর্ঘ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতীক। এটি আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিশ্বে বাংলা ভাষার গৌরব বহন করছে।
0
Updated: 1 day ago
'ত্রিফলা' - কোন ধরনের সমাস সাধিত শব্দ?
Created: 3 weeks ago
A
উপমান কর্মধারয় সমাস
B
দিগু কর্মধারয় সমাস
C
উপমিত কর্মধারয় সমাস
D
রূপক কর্মধারয় সমাস
কর্মধারয় সমাসের বিভিন্ন রূপের মধ্যে দিগু, উপমান, উপমিত এবং রূপক কর্মধারয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতিটি রূপে পূর্বপদ ও উত্তরপদের মধ্যে অর্থগত সম্পর্ক ভিন্ন হয়, ফলে সমাসের ভাবও পরিবর্তিত হয়।
দিগু কর্মধারয় সমাস:
যেসব কর্মধারয় সমাসের পূর্বপদ সংখ্যা নির্দেশ করে, সেগুলোকে দিগু কর্মধারয় সমাস বলা হয়।
উদাহরণ:
-
তিন ফলের সমাহার = ত্রিফলা
-
চার রাস্তার মিলন = চৌরাস্তা
উপমান কর্মধারয় সমাস:
যার সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাকে উপমান বলে। কিছু কর্মধারয় সমাসে উপমানের সঙ্গে গুণবাচক শব্দের যোগে গঠিত সমাসকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণ:
-
কাজলের মতো কালো = কাজলকালো
-
শশের মতো ব্যস্ত = শশব্যস্ত
উপমিত কর্মধারয় সমাস:
যাকে তুলনা করা হয়, তাকে উপমেয় বলে। কিছু কর্মধারয় সমাসে উপমেয় পদের সঙ্গে উপমান পদের সমাস হয়— একে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণ:
-
পুরুষ সিংহের ন্যায় = সিংহপুরুষ
-
আঁখি পদ্মের ন্যায় = পদ্মআঁখি
রূপক কর্মধারয় সমাস:
যেসব কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়ের অভেদ কল্পনা করা হয়, অর্থাৎ উপমানকে উপমেয়রূপে কল্পনা করা হয়, সেগুলোকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে।
উদাহরণ:
-
বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধু
-
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
0
Updated: 3 weeks ago
"চৌকা > চৌকো" - কোন ধরনের ধ্বনি পরিবর্তন?
Created: 1 month ago
A
প্রগত স্বরসঙ্গতি
B
পরাগত স্বরসঙ্গতি
C
মধ্যগত স্বরসঙ্গতি
D
অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি
স্বরসঙ্গতি:
একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যথা-
• প্রগত স্বরসঙ্গতি:
আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন:
- মুলা > মুলো;
- শিকা > শিকে;
- চৌকা > চৌকো;
- তুলা > তুলো।
• পরাগত স্বরসঙ্গতি:
অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন:
- আখো > আখুয়া > এখো;
- দেশি > দিশি।
• মধ্যগত স্বরসঙ্গতি:
আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন:
- বিলাতি > বিলিতি।
• অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি:
আদ্য ও অন্ত্য দুই স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যোন্য স্বরসঙ্গতি হয়।
যেমন:
- মোজা > মুজো।
0
Updated: 1 month ago
দ্বিস্বরধ্বনিযুক্ত শব্দ কোনটি?
Created: 3 weeks ago
A
বল
B
তাই
C
চাঁদ
D
নদ
“তাই” শব্দে [আ] পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং [ই্] অর্ধস্বরধ্বনি মিলে একটি দ্বিস্বরধ্বনি [তাই] সৃষ্টি করেছে। অর্থাৎ এখানে দুটি স্বরধ্বনি পাশাপাশি অবস্থান করে একসঙ্গে উচ্চারিত হয়েছে, ফলে এটি একটি যৌগিক বা দ্বিস্বরধ্বনি শব্দে পরিণত হয়েছে।
অন্যান্য বিকল্পগুলোর বিশ্লেষণ:
-
নদ: এখানে কেবল /অ/ স্বরধ্বনি রয়েছে, তাই এটি দ্বিস্বরধ্বনি নয়।
-
চাঁদ: এখানে /আ/ স্বরধ্বনি দীর্ঘ উচ্চারণে ব্যবহৃত হলেও এটি একক স্বর, তাই দ্বিস্বরধ্বনি নয়।
-
বল: এই শব্দে /অ/ একমাত্র স্বরধ্বনি, দ্বিস্বরধ্বনির কোনো উপস্থিতি নেই।
দ্বিস্বরধ্বনি সম্পর্কে মূল ধারণা:
-
পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি যখন দ্রুত উচ্চারিত হয়ে একত্রে একটি সংযুক্ত স্বর তৈরি করে, তখন তাকে দ্বিস্বরধ্বনি বা যৌগিক স্বর বলা হয়।
-
দ্বিস্বরধ্বনিতে সাধারণত একটি পূর্ণ স্বর ও একটি অর্ধস্বর একত্রে উচ্চারিত হয়।
-
বাংলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরের স্বরটি অর্ধস্বর হয়।
-
বাংলা ভাষায় মোট ২৫টি যৌগিক স্বরধ্বনি বিদ্যমান।
-
বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বর নির্দেশক দুটি বর্ণ হলো ঐ ও ঔ; অন্য যৌগিক স্বরের জন্য কোনো পৃথক বর্ণ নেই।
-
উদাহরণ: কৈ, বৌ।
অতিরিক্ত উদাহরণ:
পূর্ণ ও অর্ধস্বরধ্বনি মিললে দ্বিস্বরধ্বনি তৈরি হয়। যেমন—‘লাউ’ শব্দে [আ] পূর্ণ স্বরধ্বনি এবং [উ্] অর্ধস্বরধ্বনি মিলিত হয়ে [লাউ] দ্বিস্বরধ্বনি গঠন করেছে।
দ্বিস্বরধ্বনির কিছু উদাহরণ:
-
[আই্]: তাই, নাই
-
[এই্]: সেই, নেই
-
[আও্]: যাও, দাও
-
[আএ্]: খায়, যায়
-
[উই্]: দুই, রুই
-
[অএ্]: নয়, হয়
-
[ওউ্]: মৌ, বউ
-
[ওই্]: কৈ, দই
-
[এউ্]: কেউ, ঘেউ
0
Updated: 3 weeks ago