বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক-
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত
C
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
D
কাদের নেওয়াজ
উত্তরের বিবরণ
বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক হলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করেন এবং ইউরোপীয় কাব্যরীতির প্রভাবে বাংলা ছন্দে নতুনত্ব আনেন। তাঁর কাব্যে ছন্দের বাঁধন ভেঙে মুক্তভাবে চিন্তা ও কল্পনার প্রকাশ ঘটেছে। অমিত্রাক্ষর ছন্দ বাংলা কাব্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেয়।
অমিত্রাক্ষর ছন্দ বলতে এমন এক ছন্দকে বোঝায়, যেখানে নির্দিষ্ট মাত্রা বা পদের সংখ্যা থাকলেও মিল থাকে না। অর্থাৎ কবিতার পঙ্ক্তিগুলো মিলবিহীন হলেও ছন্দের স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় থাকে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই ছন্দের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে ইউরোপীয় নাট্য ও মহাকাব্যিক ধারা সংযোজন করেন। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে বাংলা কবিতার স্বরূপ বদলে যায় এবং আধুনিক কবিতার পথ প্রশস্ত হয়।
• মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩) বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের অগ্রদূত। তিনি প্রথম বাংলা মহাকাব্যিক নাট্যরূপ ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন।
• তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত রচনা ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, যা অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। এই কাব্য বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নিদর্শন, যেখানে রাবণের পুত্র মেঘনাদের বীরত্ব, মানবতা ও বেদনাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরা হয়েছে।
• এই ছন্দ ব্যবহার করে তিনি বাংলা ভাষাকে শুধু কাব্যময় করেননি, বরং ইউরোপীয় ধাঁচের শৈল্পিক মর্যাদা এনে দিয়েছেন।
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের মূল বৈশিষ্ট্য হলো মিলবিহীনতা, মাত্রার সামঞ্জস্য, এবং বাক্যের প্রাঞ্জলতা। এই ছন্দে কবির ভাবনা অবাধে প্রবাহিত হতে পারে, যা মিলযুক্ত ছন্দে সম্ভব হয় না।
• ইংরেজ কবি মিল্টন-এর “Paradise Lost” থেকে মাইকেল অনুপ্রাণিত হন। ইংরেজি ব্ল্যাঙ্ক ভার্স (Blank Verse)-এর আদলে তিনি বাংলা অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করেন।
• তাঁর অন্য উল্লেখযোগ্য অমিত্রাক্ষর কাব্যগুলো হলো ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, ‘কৃষ্ণকুমারী নাটক’ ইত্যাদি।
• এই ছন্দ প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যে এক ধ্বনিগত স্বাধীনতা ও রূপগত নবত্ব আনেন, যা পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ বহু কবিকে প্রভাবিত করে।
• রবীন্দ্রনাথ মাইকেলের এই উদ্ভাবনকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করেন এবং বলেন, “মধুসূদন বাংলা কবিতার আকাশে এক জ্যোতির্ময় তারা।”
• মাইকেলের এই অবদান বাংলা সাহিত্যকে ইউরোপীয় সাহিত্যরীতির সঙ্গে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে, এবং তাঁর হাতে বাংলা কবিতা প্রকৃত অর্থে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।
অতএব, বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত—তাঁর হাতেই বাংলা কবিতা পায় নতুন ভাষা, নতুন ছন্দ, ও নতুন দিগন্তের সন্ধান।
0
Updated: 1 day ago
মাইকেল মধুসূদন দত্তের 'কৃষ্ণকুমারী' নাটকের কাহিনীসূত্র কী?
Created: 2 weeks ago
A
ভারতীয় পুরাণ
B
টডের এনালল এন্ড এন্টিকুইটিজ অব রাজস্থান
C
বাংলার সেন বংশের ইতিহাস
D
নাট্যকারের কল্পনা
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১) নাটকের কাহিনি ইংরেজ ঐতিহাসিক উইলিয়াম টডের ‘রাজস্থান’ (Rajasthan) নামক গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত। বঙ্কিমচন্দ্র এই ঐতিহাসিক উপাদানকে অবলম্বন করে নাট্যরূপ দিয়েছেন, যেখানে রাজকন্যা কৃষ্ণকুমারীর ত্যাগ, সম্মানবোধ ও আত্মোৎসর্গের আদর্শ ফুটে উঠেছে।
-
উইলিয়াম টডের ‘রাজস্থান’ গ্রন্থে রাজপুত জাতির বীরত্ব, দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বর্ণনা রয়েছে, যা বঙ্কিমচন্দ্রকে প্রভাবিত করে।
-
‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনার কাঠামো বজায় রেখে তাতে নাটকীয়তা, সংলাপ ও চরিত্রগভীরতা সংযোজন করেছেন।
-
এই নাটক বাংলা সাহিত্যে প্রথমদিকের ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
-
এতে রাজপুত নারী কৃষ্ণকুমারীর আত্মসম্মান রক্ষায় আত্মত্যাগের কাহিনি এক মহৎ নৈতিক বোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
0
Updated: 2 weeks ago
'ভিমসিংহ' মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোন সাহিত্যকর্মের চরিত্র?
Created: 2 months ago
A
পদ্মাবতী
B
বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ
C
শর্মিষ্ঠা
D
কৃষ্ণকুমারী
‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক
-
‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১) নাটকের কাহিনি সংগৃহীত হয়েছে উইলিয়াম টডের ‘রাজস্থান’ গ্রন্থ থেকে।
-
নাটকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক ট্রাজেডি রচনা করেছেন।
-
উল্লেখযোগ্য চরিত্রসমূহ: কৃষ্ণকুমারী, মদনিকা, ভীমসিংহ, জগৎসিংহ, ধনদাস।
-
যদিও প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালে, রচনা করা হয়েছিল ১৮৬০ সালে।
-
রচনার প্রায় সাত বছর পর, ১৮৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘শোভাবাজার থিয়েটার’ এ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের অন্যান্য নাটক
-
শর্মিষ্ঠা
-
পদ্মাবতী
-
কৃষ্ণকুমারী
উৎস:
১) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা
২) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, মাহবুবুল আলম
৩) বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 2 months ago
কোনটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পত্রকাব্য?
Created: 3 months ago
A
ব্রজাঙ্গনা
B
বিলাতের পত্র
C
বীরাঙ্গনা
D
হিমালয়
বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২)
-
এটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা একটি পত্রকাব্য (চিঠির আকারে লেখা কবিতা)।
-
বাংলা সাহিত্যে পত্রকাব্যের এটি ছিল প্রথম উদাহরণ।
-
রোমান কবি ওভিদের ‘Heroides’ কাব্য অনুসরণে এটি লেখা হয়।
-
এই কাব্যে মোট ১১টি পত্র (চিঠি) আছে।
-
যেমন:
-
দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলার চিঠি,
-
দশরথের প্রতি কৈকেয়ীর চিঠি,
-
সোমের প্রতি তারা,
-
নীলধ্বজের প্রতি জনার চিঠি — এসব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
-
-
পৌরাণিক নারীদের নতুনভাবে জীবন্ত করে তুলেছেন কবি। তারা এখানে নিজের ভালোবাসা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে দ্বিধা করে না।
-
এই সাহসী রচনার জন্য তখন মধুসূদন অনেক সমালোচিত হয়েছিলেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪–১৮৭৩)
-
জন্ম: ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি, যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে (কপোতাক্ষ নদীর তীরে)।
-
পরিবার: জমিদার পরিবারে জন্ম।
-
পিতা: রাজনারায়ণ দত্ত (কলকাতার নামকরা উকিল)।
-
মাতা: জাহ্নবী দেবী।
-
-
শিক্ষা:
-
১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন।
-
বাংলা, সংস্কৃত, ফারসি ভাষা শেখেন।
-
ছাত্রজীবনেই বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।
-
-
১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং তখন থেকেই তাঁর নাম হয় “মাইকেল মধুসূদন দত্ত”।
-
মৃত্যু: ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন, স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিন দিন পর কলকাতায় মারা যান।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ
-
তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
-
ব্রজাঙ্গনা কাব্য (গীতিকাব্য)
-
মেঘনাদবধ কাব্য
-
বীরাঙ্গনা কাব্য
-
চতুর্দশপদী কবিতাবলী (বাংলা সনেট)
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর ও বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 3 months ago