সোনার তরী কবিতা কোন ছন্দে রচিত?
A
অক্ষরবৃত্ত
B
স্বরবৃত্ত
C
মাত্রাবৃত্ত
D
মিশ্রবৃত্ত
উত্তরের বিবরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কবিতাটি বাংলা কাব্যসাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি, যা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। এই ছন্দটি বাংলা কবিতার একটি প্রাচীন ও সুরময় রূপ, যেখানে প্রতিটি পঙ্ক্তি নির্দিষ্ট মাত্রার গণনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এর সুর ও লয়ের মাধুর্য কবিতাকে পাঠকের মনে গভীরভাবে অনুরণিত করে। নিচে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ ও ‘সোনার তরী’ কবিতার সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো।
-
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের পরিচয়: মাত্রাবৃত্ত ছন্দকে কলাবৃত্ত বা ধ্বনিপ্রধান ছন্দও বলা হয়। এখানে পঙ্ক্তির ভার নির্ধারিত হয় অক্ষরের ধ্বনি-গণনা (মাত্রা) দ্বারা। একমাত্রা সাধারণত স্বল্প ধ্বনি (যেমন “ত”, “ক”), আর দ্বিমাত্রা দীর্ঘ ধ্বনি (যেমন “তা”, “না”) নির্দেশ করে। কবি প্রতিটি পঙ্ক্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা বজায় রাখেন, যা কবিতায় সঙ্গীতধর্মী সৌন্দর্য সৃষ্টি করে।
-
বাংলা কবিতায় প্রধান তিন ছন্দ:
বাংলা ছন্দকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়—
অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত, ও মাত্রাবৃত্ত।
অক্ষরবৃত্তে অক্ষরের সংখ্যা, স্বরবৃত্তে শব্দাংশের সংখ্যা, আর মাত্রাবৃত্তে ধ্বনির মাত্রা গণনা প্রধান। -
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের গঠনধারা: এই ছন্দে প্রতি পঙ্ক্তিতে ৪, ৫, ৬ বা ৭ মাত্রা থাকে। পঙ্ক্তিগুলোর ছন্দে সমতা ও ভারসাম্য বজায় থাকে। অনেক সময় দুটি বা চারটি পঙ্ক্তি মিলিয়ে একটি স্তবক তৈরি হয়। এতে সুর, তাল, ও ছন্দের ঐক্য থাকে, যা পাঠের সময় একটি ছন্দময় প্রবাহ সৃষ্টি করে।
-
‘সোনার তরী’ কবিতায় ছন্দের প্রয়োগ:
‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৮৯৪ সালে, যখন রবীন্দ্রনাথের কাব্যরুচি পূর্ণতা পাচ্ছিল। এতে প্রতিটি কবিতায় জীবনের দর্শন, বেদনা ও সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে মাত্রাবৃত্ত ছন্দের সুরে।
এই ছন্দ কবিতাটিকে করেছে সহজ, ললিত ও সঙ্গীতময়। পঙ্ক্তিগুলোর ধ্বনি ও তাল পাঠককে এক ধরনের আবেগময় প্রবাহে ভাসিয়ে নেয়। উদাহরণস্বরূপ—
“সব লোকে কয় লোকে কয়, সোনার তরী যায়।”
এই পঙ্ক্তিতে প্রতিটি শব্দে ধ্বনি-মাত্রার সমানুপাত লক্ষ্য করা যায়, যা মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য বহন করে। -
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য:
• প্রতি পঙ্ক্তির মূলপর্বে নির্দিষ্ট সংখ্যক মাত্রা থাকে।
• ধ্বনিগত সাদৃশ্যের কারণে ছন্দের সুরধ্বনি মনোমুগ্ধকর হয়।
• লয়ের পুনরাবৃত্তি পাঠকের মনে সংগীতের আবেশ সৃষ্টি করে।
• কবিতার ভাবপ্রকাশ হয় সহজ ও ছন্দোবদ্ধভাবে।
• বাংলা গীতিকবিতায় এই ছন্দ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। -
অন্য দুটি ছন্দের সঙ্গে তুলনা: অক্ষরবৃত্ত ছন্দে অক্ষরের সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকলেও ধ্বনির লয় সবসময় সমান থাকে না। স্বরবৃত্ত ছন্দে শব্দাংশ গণনা হয়, যা উচ্চারণে সহজ, কিন্তু মাত্রাবৃত্ত ছন্দে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে শ্রুতিমধুর ছন্দের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়।
-
বাংলা কবিতায় প্রয়োগ: রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জসীমউদ্দীন, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ কবিরা মাত্রাবৃত্ত ছন্দে অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। যেমন— নজরুলের “বিদ্রোহী” ও জসীমউদ্দীনের “নকশী কাঁথার মাঠ” কবিতায় এই ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
-
‘সোনার তরী’ কবিতায় মাত্রাবৃত্ত ছন্দের প্রয়োগ কবিতাকে দিয়েছে এক সুরেলা রূপ, যা পাঠকের মনে ছন্দ ও ভাবের মিশেলে অনন্ত সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। এজন্যই এই ছন্দকে বাংলা কবিতার সবচেয়ে সংগীতধর্মী ও আবেগঘন ছন্দ বলা হয়।
0
Updated: 1 day ago
'বিদ্রোহী' কবিতা কোন কাব্যের অন্তর্গত?
Created: 2 months ago
A
দোলনচাঁপা
B
বিষের বাঁশী
C
সাম্যবাদী
D
অগ্নিবীণা
‘বিদ্রোহী’ কবিতা
-
‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এবং এটি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’-র দ্বিতীয় কবিতা।
-
কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২২ পৌষ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ (৬ জানুয়ারি, ১৯২২ সালে) সাপ্তাহিক ‘বিজলী’ পত্রিকায়।
-
নজরুল অনেক বিদ্রোহী মনোভাবের কবিতা লিখেছেন, কিন্তু ‘বিদ্রোহী’ কবিতার কারণেই তিনি চিরকাল ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিত।
-
এই কবিতার মূল ভাবনা হলো — বিদ্রোহ ও বিপ্লবের তীব্র আবেগ।
‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ
-
‘অগ্নিবীণা’ ছিল নজরুলের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
-
তিনি এই কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেছিলেন বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে।
-
এতে মোট ১২টি কবিতা রয়েছে।
‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো হলো
-
প্রলয়োল্লাস (প্রথম কবিতা)
-
বিদ্রোহী
-
রক্তাম্বরধারিণী মা
-
আগমনী
-
ধুমকেতু
-
কামালপাশা
-
আনোয়ার
-
রণভেরী
-
শাত-ইল-আরব
-
খেয়াপারের তরণী
-
কোরবানী
-
মোহররম
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
0
Updated: 2 months ago
বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক সমৃদ্ধ ধারা-
Created: 5 months ago
A
নাটক
B
ছোট গল্প
C
প্রবন্ধ
D
গীতি কবিতা
গীতিকবিতা
গীতিকবিতা এমন এক ধরনের কবিতা যেখানে কবির হৃদয়ের অন্তর্নিহিত অনুভূতি সুর ও সঙ্গীতের ছন্দে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এখানে ব্যক্তিগত আবেগ, কামনা-বাসনা, আনন্দ ও বেদনার প্রকাশ ঘটে আবেগঘন ভাষায়।
যেসব কবিতায় কবির অন্তরের গভীর অনুভূতি সঙ্গীততাড়িত কণ্ঠে প্রকাশিত হয় এবং যে ভাবাবেগ পূর্ণতা নিয়ে প্রকাশ পায়—তাকেই গীতিকবিতা বলা হয়।
গীতিকবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য
-
আন্তরিক আবেগের প্রকাশ
-
সংক্ষিপ্ত রচনার গঠন
-
সঙ্গীতধর্মী ছন্দ ও সুরেলা ভাষা
-
গতিময়তা ও স্বচ্ছন্দ গতি
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, গীতিকাব্য হলো বক্তার অন্তর্দাহ ও আবেগের উচ্ছ্বাসপূর্ণ প্রকাশমাত্র, যার উদ্দেশ্য একান্তই হৃদয়ের ভাবের প্রকাশ। যেহেতু এই অনুভূতিগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই গীতিকবিতাও সাধারণত ছোট হয়।
তবে গীতিকবিতার ভাববস্তুর ব্যাপ্তি কখনো কখনো বড় হতে পারে, আবার কখনো তা হয় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এ কারণে গীতিকবিতার নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য নির্ধারণ সম্ভব নয়।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বৈষ্ণব পদাবলির মধ্য দিয়ে গীতিকবিতার রূপ প্রথম স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। যদিও কাব্যধারা প্রাচীন ও মধ্যযুগে শুরু হয়েছিল, গীতিকবিতা আসলে আধুনিক যুগেই সম্পূর্ণতা লাভ করে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতা হয়ে উঠেছে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও জনপ্রিয় ধারাগুলোর একটি।
উল্লেখযোগ্য তথ্য
-
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ধারা ছিল বৈষ্ণব সাহিত্য।
উৎস
-
বাংলাপিডিয়া
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর)
-
লাল নীল দীপাবলী (হুমায়ুন আজাদ)
0
Updated: 5 months ago
'দোলনচাঁপা' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা নয় কোনটি?
Created: 1 month ago
A
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
B
বেলাশেষে
C
অবেলার ডাক
D
কাণ্ডারী হুঁশিয়ার
'কাণ্ডারী হুঁশিয়ার' — কবিতা
-
প্রেক্ষাপট: সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা
-
উৎস: সর্বহারা কাব্যগ্রন্থ
'দোলনচাঁপা' — কাব্যগ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কবিতা:
-
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
-
পূজারিণী
-
বেলাশেষে
-
চোখের চাতক
-
অবেলার ডাক
-
অভিশাপ
-
ইত্যাদি
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা; দোলনচাঁপা ও সর্বহারা কাব্যগ্রন্থ।
0
Updated: 1 month ago