উত্তর: ঘ) সিলেট
এই উত্তরটি সঠিক কারণ খাসিয়া উপজাতিরা বাংলাদেশের মধ্যে প্রধানত সিলেট অঞ্চলে বসবাস করে। খাসিয়া জনগোষ্ঠী উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং পাহাড়ি ও উপত্যকাজাতীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছে। সিলেটের পাহাড়ি ও চা-বাগানভিত্তিক পরিবেশ তাদের জীবনধারার সঙ্গে অত্যন্ত সুসংগত। সিলেটে তাঁরা সাংস্কৃতিক ও সামাজিকভাবে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে, যা তাদের অন্যতম প্রধান আবাস হিসেবে পরিচিত।
খাসিয়া জনগোষ্ঠীর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাঁদের ভাষা, সংস্কৃতি ও প্রথা। তাঁরা খাসিয়া ভাষায় কথা বলে, যা টিপ্রা-খাসিয়া ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তাঁদের প্রধান উৎসব হলো ‘চাফাইমা’ ও ‘বাক্যুম’ যা সমাজের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য রক্ষা করে। খাসিয়া উপজাতিরা চা-বাগান ও কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, পাহাড়ি এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশে তাঁরা মূলত চাষাবাদ ও পশুপালনে নিয়োজিত।
সিলেটের খাসিয়া সম্প্রদায়ের অবস্থান মূলত হালুয়া পাহাড়, জাফলং ও ছোট পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নিজেদের জীবনযাপন করে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও খাসিয়া সম্প্রদায় অল্পসংখ্যক রয়েছে, কিন্তু সংখ্যাগতভাবে সিলেটই তাদের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
খাসিয়া উপজাতিরা সামাজিকভাবে খুব সংগঠিত। তাঁরা নিজেদের স্থানীয় সভা বা ‘ডংমা’ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এছাড়া তাঁদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস ও শৈল্পিক কর্মকাণ্ড যেমন বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, তাঁতশিল্প ও স্থানীয় নৃত্যাভিনয়, সিলেট অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
সিলেট অঞ্চলে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি স্থানীয় অর্থনীতি ও পর্যটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যটকরা জাফলং, টুরিস্ট স্পট ও চা-বাগান এলাকা ঘুরতে গেলে খাসিয়া সম্প্রদায়ের জীবনধারা, খাদ্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত হয়।
সুতরাং, খাসিয়া জনগোষ্ঠীর ঘনবসতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে সিলেট জেলার অবস্থানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সিলেটকে খাসিয়া উপজাতির প্রধান আবাসিক জেলা বলা যায়। এই কারণেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হলো ঘ) সিলেট।
