বিদ্যাপতি কোন ভাষায় তার পদগুলো রচনা করেন?
A
সান্ধ্য ভাষা
B
মৈথলি ভাষা
C
ব্রজবুকি ভাষা
D
আহমিয়া ভাষা
উত্তরের বিবরণ
বিদ্যাপতি ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত কবি, যিনি তাঁর প্রেম, ভক্তি ও মানবিক আবেগে ভরপুর পদাবলীর জন্য পরিচিত। তিনি মূলত মৈথলি ভাষায় তাঁর পদগুলো রচনা করেন। এই ভাষা ছিল তাঁর মাতৃভাষা এবং তাঁর কবিতার মাধ্যমে মৈথলি সাহিত্যের স্বর্ণযুগ সূচিত হয়। তাঁর রচনাগুলো ভক্তিমূলক হলেও তাতে মানবপ্রেম ও রাধাকৃষ্ণের লীলার রোমান্টিক সৌন্দর্য বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
• মৈথলি ভাষা ছিল ভারতের মিথিলা অঞ্চলের লোকভাষা, যা বর্তমানে বিহার ও নেপালের কিছু অংশে প্রচলিত। বিদ্যাপতি এই ভাষায় সাহিত্য রচনা করে একে সাহিত্যের মর্যাদা দেন।
• তাঁর রচিত ‘বিদ্যাপতি পদাবলি’ বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ, যেখানে রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের বিভিন্ন দিক কাব্যিকভাবে ফুটে উঠেছে। এই পদাবলিগুলো পরবর্তীকালে বৈষ্ণব পদাবলীর গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হয়ে ওঠে।
• বিদ্যাপতির ভাষা সহজ, সাবলীল এবং সংগীতধর্মী হওয়ায় তাঁর পদগুলো গীতিকবিতার পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাঁর রচনাগুলো পাঠক ও শ্রোতার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
• যদিও বিদ্যাপতি কিছু রচনা সংস্কৃত ভাষাতেও করেছেন, তাঁর খ্যাতির মূল কারণ মৈথলি ভাষায় রচিত পদাবলি। এই পদগুলোই তাঁকে বাংলাসহ সমগ্র ভারতের ভক্তিকবিতার ধারায় অমর করে তুলেছে।
• বাংলার কবি চণ্ডীদাস ও গোবিন্দদাসের মতো অনেক কবি বিদ্যাপতির প্রভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তীতে বাংলা ভাষায় রাধাকৃষ্ণভক্তিমূলক পদ রচনা করেন।
• বিদ্যাপতির রচনায় লোকজ ভাব, ভক্তি ও প্রেমের সংমিশ্রণ, এবং সঙ্গীতধর্মী ছন্দ একটি স্বতন্ত্র সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। তাঁর ভাষা ও ভাবের মিশ্রণে এক ধরনের মাধুর্য রয়েছে যা পাঠককে মুগ্ধ করে।
• তাঁর পদাবলিতে নারীর অনুভূতি, প্রেমের ব্যাকুলতা, বিরহের কষ্ট এবং মিলনের আনন্দ গভীরভাবে ফুটে উঠেছে, যা তাঁর রচনাকে মানবিক আবেগে ভরপুর করে তুলেছে।
• মৈথলি ভাষার সাহিত্যচর্চা বিদ্যাপতির হাত ধরেই জনপ্রিয়তা পায়, এবং পরবর্তীকালে এই ভাষা বৈষ্ণব ও গীতিকাব্যের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে ওঠে।
• বিদ্যাপতির রচনাশৈলীতে মধুর শব্দচয়ন, সহজ বাক্যগঠন এবং অন্তরের ভাবপ্রকাশ তাঁকে ‘মৈথিল কবিসম্রাট’ উপাধি এনে দেয়।
সুতরাং বলা যায়, বিদ্যাপতি তাঁর পদাবলি রচনা করেন মৈথলি ভাষায়, যা শুধু একটি ভাষার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেনি, বরং ভারতীয় ভক্তিকাব্যের ইতিহাসেও এক অমোঘ ছাপ রেখে গেছে।
 
                            
                        
                        
                        
                        
                        0
Updated: 1 day ago