ধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্য রচনায় কোন মুসলিম শাসকের গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রয়েছে?
A
নাসির উদ্দিন শাহ
B
মুর্শিদ কুলি খান
C
শাহ সুজা
D
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ
উত্তরের বিবরণ
আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন বাংলার নবজাগরণের সূচনাকারী মুসলিম শাসকদের একজন, যিনি মধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্য বিকাশে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নবজীবন লাভ করে। তিনি সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন এবং ধর্ম, সংস্কৃতি ও শিল্পের উন্নয়নে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর শাসনকালকে বাংলা সাহিত্যের সোনালি যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
• আলাউদ্দিন হুসেন শাহ (১৪৯৪–১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন গৌড়ের সুলতান। তাঁর শাসনামলে বাংলার মুসলিম ও হিন্দু সাহিত্যিকেরা সমানভাবে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। তিনি সাহিত্যপ্রেমী রাজা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
• তাঁর অনুপ্রেরণায় বহু সংস্কৃত ধর্মগ্রন্থ বাংলায় অনূদিত হয়। বিশেষত মহাভারত, রামায়ণ ও ভাগবত পুরাণের বাংলা অনুবাদ তাঁর সময়েই জনপ্রিয়তা লাভ করে।
• বিখ্যাত কবি কৃত্তিবাস ওঝা কর্তৃক রচিত কৃত্তিবাসী রামায়ণ এবং কবীন্দ্র পরমেশ্বরের মহাভারত অনুবাদ হুসেন শাহের শাসনকালে সম্পন্ন হয়।
• হিন্দু সাহিত্যিকদের রাজদরবারে সম্মান ও সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এতে মুসলিম ও হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের সাহিত্যিকেরা সমানভাবে সাহিত্যচর্চায় অংশ নেন।
• হুসেন শাহ নিজেও কবিতা ও ধর্মীয় আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন। তিনি শুধু সাহিত্য অনুবাদকেই উৎসাহ দেননি, বরং বাংলা ভাষায় প্রশাসনিক কাজ চালানোরও নির্দেশ দেন, যা বাংলার ভাষা বিকাশে সহায়ক হয়।
• তাঁর শাসনামলেই বাংলার দরবারে সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা ও স্থাপত্যের উত্থান ঘটে। ফলে তিনি “বাংলার অশোক” নামে খ্যাত হন।
• হুসেন শাহের শাসনামলের অনুবাদ সাহিত্য বাংলার সাধারণ মানুষের কাছে ধর্মীয় কাহিনি সহজবোধ্য ও জনপ্রিয় করে তোলে। আগে যে সংস্কৃত সাহিত্য কেবল পণ্ডিত শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা বাংলায় অনূদিত হয়ে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যায়।
• আলাউদ্দিন হুসেন শাহের পরবর্তী সময়েও তাঁর প্রভাব অব্যাহত থাকে। তাঁর পুত্র নাসিরউদ্দিন নসরত শাহও সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মধ্যযুগের অনুবাদ সাহিত্যচর্চা ও বাংলাভাষার বিকাশে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের অবদান ছিল অনন্য ও যুগান্তকারী। তাঁর প্রজ্ঞা ও সহনশীলতার কারণে বাংলা সাহিত্য এক নতুন ধারা লাভ করে, যা পরবর্তী সময়ে চৈতন্যযুগের ভক্তি সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করে।
 
                            
                        
                        
                        
                        
                        0
Updated: 1 day ago