উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপনে যে বিজ্ঞানীর ভূমিকা সর্বাধিক, তিনি হলেন থিওফ্রাসটাস (Theophrastus)। তিনি গ্রিক দার্শনিক এবং এরিস্টটলের শিষ্য ছিলেন। তাঁর গবেষণা, বিশ্লেষণ ও লেখার মাধ্যমে উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারাবাহিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সূচনা ঘটে। এজন্য তাঁকে ‘উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক’ বলা হয়।
তাঁর অবদানের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো—
- 
জন্ম ও পরিচয়: থিওফ্রাসটাসের জন্ম খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭১ সালে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে। তিনি ছিলেন এরিস্টটলের ঘনিষ্ঠ শিষ্য এবং তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে লাইকিয়াম (Lyceum) নামের বিদ্যালয়ের প্রধানও ছিলেন। 
- 
বৈজ্ঞানিক অবদান: থিওফ্রাসটাস প্রায় ৫০০-৫৫০ প্রজাতির উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক বর্ণনা প্রদান করেন। তিনি উদ্ভিদকে তাদের আকৃতি, বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ও ব্যবহার অনুসারে শ্রেণিবিন্যাস করেন। 
- 
বিখ্যাত গ্রন্থ: তাঁর দুটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হলো - 
“Historia Plantarum” (উদ্ভিদের ইতিহাস) 
- 
“De Causis Plantarum” (উদ্ভিদের কারণসমূহ) 
 এই দুটি বইয়ে তিনি উদ্ভিদের জীবনচক্র, অঙ্কুরোদ্গম, পাতা, ফুল, ফল ও বীজের গঠন বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন।
 
- 
- 
উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস: থিওফ্রাসটাসই প্রথম উদ্ভিদকে গাছ, গুল্ম, ও ভেষজ — এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করেন। আধুনিক শ্রেণিবিন্যাস না হলেও, এটি ছিল পরবর্তী বৈজ্ঞানিক শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি। 
- 
অভিজ্ঞতার ব্যবহার: তাঁর গবেষণা শুধুমাত্র তত্ত্বনির্ভর ছিল না; তিনি প্রকৃতিতে উদ্ভিদের বৃদ্ধি, ঋতু পরিবর্তন, ও মাটির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করতেন। এই পর্যবেক্ষণই উদ্ভিদবিজ্ঞানের প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক দিক তৈরি করে। 
- 
প্রভাব ও উত্তরাধিকার: থিওফ্রাসটাসের গবেষণালব্ধ জ্ঞান রোমান যুগ থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত ইউরোপে উদ্ভিদবিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৬শ শতকে উদ্ভিদ শ্রেণিবিন্যাস পুনরায় শুরু হলে তাঁর কাজগুলো দিকনির্দেশনা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 
- 
আধুনিক বিজ্ঞানে প্রভাব: কার্ল লিনিয়াসসহ পরবর্তী বিজ্ঞানীরা থিওফ্রাসটাসের পদ্ধতিকে আরও উন্নত করেন। তবে বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার সূচনা তাঁর হাতেই হয়েছিল, তাই তিনি “Father of Botany” নামে পরিচিত। 
- 
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার: তিনি মৃত্যুবরণ করেন খ্রিষ্টপূর্ব ২৮৭ সালে, তবে তাঁর রচিত গ্রন্থ ও চিন্তা আজও উদ্ভিদবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অমর অধ্যায়। 
সংক্ষেপে বলা যায়, থিওফ্রাসটাসই প্রথম উদ্ভিদকে বিজ্ঞান হিসেবে অধ্যয়ন শুরু করেন। তিনি উদ্ভিদের প্রকৃতি, গঠন ও ব্যবহারের উপর বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ গবেষণার পথ উন্মুক্ত করেন। এজন্যই তাঁকে যথার্থভাবে “উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক” বলা হয়।
