পরিসংখ্যান এমন একটি জ্ঞানক্ষেত্র যেখানে তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস, বিশ্লেষণ ও উপসংহার টানা হয়। এটি শুধু সংখ্যার হিসাব নয়, বরং তথ্য থেকে বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া। এই কারণে পরিসংখ্যানকে একদিকে বিজ্ঞান, অন্যদিকে কলা বলা হয়।
নিচে বিস্তারিতভাবে বিষয়টি বোঝানো হলো:
-
বিজ্ঞানের দিক:
-
পরিসংখ্যান তথ্য বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক নিয়ম, সূত্র এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে।
-
এতে পরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও নির্ভুল গণনার মাধ্যমে ফলাফল নির্ণয় করা হয়।
-
উদাহরণস্বরূপ, একটি জনসংখ্যার গড় আয় বা একটি বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করার সময় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
-
যেমন, গড় (Mean), মধ্যক (Median), মোড (Mode) বা মান বিচ্যুতি (Standard Deviation) ইত্যাদি ব্যবহারে পরিসংখ্যান বৈজ্ঞানিক রূপ নেয়।
-
-
কলার দিক:
-
তথ্য বিশ্লেষণের ফল থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি দক্ষতা বা কলা।
-
পরিসংখ্যানবিদকে বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচার-বিশ্লেষণ করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত দিতে হয়, যা কেবল সূত্রে নয়, অভিজ্ঞতা ও যুক্তিবোধের ওপরও নির্ভরশীল।
-
যেমন, কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রির তথ্য দেখে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে—এটি পরিসংখ্যানের ব্যবহারিক কলা।
-
-
সংজ্ঞা:
-
পরিসংখ্যান শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Status থেকে, যার অর্থ “State” বা “অবস্থা”।
-
সহজভাবে, পরিসংখ্যান হলো—“তথ্য সংগ্রহ, শ্রেণিবিন্যাস, উপস্থাপন ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া।”
-
-
পরিসংখ্যানের উদ্দেশ্য:
-
তথ্যকে সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করা।
-
তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাস্তব চিত্র বোঝানো।
-
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা।
-
সমাজ, অর্থনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা।
-
-
পরিসংখ্যানের ব্যবহারিক গুরুত্ব:
-
সরকার জনসংখ্যা, কৃষি উৎপাদন বা শিক্ষার হার নির্ধারণে পরিসংখ্যান ব্যবহার করে।
-
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রয়, মুনাফা, বাজার বিশ্লেষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ অপরিহার্য।
-
গবেষণায় বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই ও ফলাফল নির্ণয়ে পরিসংখ্যান প্রয়োজন।
-
চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্যে রোগের হার ও চিকিৎসার ফলাফল নির্ধারণে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
-
উপসংহার:
পরিসংখ্যান একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক সূত্র ও নিয়মে পরিচালিত হয়, তেমনি এটি মানুষের বিচারশক্তি ও অভিজ্ঞতার ব্যবহারও দাবি করে। তাই পরিসংখ্যানকে শুধু বিজ্ঞান নয়, বরং “বিজ্ঞান ও কলার সমন্বিত রূপ” বলা হয়।