সূর্য পৃথিবীর আলোক ও শক্তির প্রধান উৎস। বাংলা ভাষায় “সূর্য” শব্দের অনেক সমার্থক শব্দ আছে, যা সাহিত্য, কাব্য ও সংস্কৃত গ্রন্থে সৌন্দর্য ও প্রতীকের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়। এই শব্দগুলো শুধু সূর্যের নাম নয়, বরং তার জ্যোতি, তাপ ও জীবনীশক্তির প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
মূল তথ্য:
-
তপন শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “তপ” ধাতু থেকে, যার অর্থ “তাপ” বা “উষ্ণতা”। তাই “তপন” মানে যে তাপ দেয় বা জ্বলে ওঠে — অর্থাৎ সূর্য। সাহিত্যিকরা সূর্যের তাপের রূপকে বোঝাতে “তপন” শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করেন।
-
পূষণ শব্দটি সংস্কৃত উৎসের। এটি সূর্যের আরেকটি নাম, যার অর্থ “পালনকারী” বা “পোষক”। সূর্য পৃথিবীর জীবজগতকে আলো ও তাপ দিয়ে লালন করে, তাই তাকে “পূষণ” বলা হয়েছে।
-
সূর্যের অন্যান্য প্রচলিত সমার্থক শব্দের মধ্যে রয়েছে অরুণ, দিনকর, ভাস্কর, দিবাকর, রবি, ভানু, অদিত্য, মিহির, ভানুজ, ভাস্কর্য, ইত্যাদি।
-
অরুণ সূর্যের পূর্বদিগন্তে উদয়ের সময়কার লালচে আভাকে বোঝায়। তাই কবিরা “অরুণোদয়” বা “অরুণকিরণ” শব্দে সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য প্রকাশ করেন।
-
দিনকর শব্দের অর্থ “দিনের কর বা আলো প্রদানকারী”— যে দিনকে আলোকিত করে, অর্থাৎ সূর্য।
-
ভাস্কর শব্দটির অর্থ “উজ্জ্বলতাকারী” বা “আলোকদানকারী”, যা সূর্যের জ্যোতিকে প্রকাশ করে।
-
রবি শব্দটি সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত সমার্থক, যা অনেক কবি ও সাহিত্যিক রচনায় সূর্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামের “রবি” অংশটিও সূর্যের প্রতীক।
-
অদিত্য শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “অদিতি” দেবীর নাম থেকে, যিনি দেবগণের জননী। সূর্যকে অদিতির পুত্র বলা হয়, তাই তার নাম “অদিত্য”।
-
ভানু মানে “আলোদাতা”। এটি সূর্যের এক প্রাচীন নাম, যা প্রায়ই পৌরাণিক কাব্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
-
মিহির শব্দটি আলো বা দীপ্তির প্রতীক, যার দ্বারা সূর্যের কিরণকে বোঝানো হয়।
এই সব সমার্থক শব্দগুলো প্রাচীন সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ ও কবিতায় সূর্যের বিভিন্ন রূপ ও গুণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। একেকটি শব্দ সূর্যের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য— যেমন তাপ, আলো, পালন, উদয় বা দীপ্তি— প্রকাশ করে। তাই “তপন” ও “পূষণ” শব্দদ্বয় সূর্যের যথাযথ ও প্রাচীনতম সমার্থক শব্দ হিসেবে স্বীকৃত।