উত্তর: ঘ) দেবদাস
‘দেবদাস’ উপন্যাসটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেননি; এটি লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। অপরদিকে, ‘কপালকুন্ডলা’, ‘মৃণালিনী’ ও ‘বিষবৃক্ষ’—এই তিনটি উপন্যাসই বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্টি, যা বাংলা সাহিত্যে তাকে উপন্যাসকার হিসেবে অমর করেছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তিনি বাংলা উপন্যাসে আধুনিকতার সূচনা ঘটান এবং সমাজজীবনের নানান দিক সাহিত্যরূপে প্রকাশ করেন। তার উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘কপালকুন্ডলা’ (১৮৬৬), ‘মৃণালিনী’ (১৮৬৯), ‘বিষবৃক্ষ’ (১৮৭৩), ‘আনন্দমঠ’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অন্যদিকে ‘দেবদাস’ হল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত প্রেমভিত্তিক উপন্যাস, যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৭ সালে। এটি এক ধনী তরুণ দেবদাস ও তার শৈশবসখী পার্বতীর করুণ প্রেমকাহিনি। উপন্যাসটি মানুষের আবেগ, সামাজিক বাধা, শ্রেণিবিভেদ ও মানসিক দ্বন্দ্বের প্রতীক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দখল করেছে।
বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলোতে দেখা যায়—
-
সমাজ ও ধর্মজীবনের বিশ্লেষণ, যেখানে নৈতিকতা, প্রেম, কর্তব্য ও ত্যাগের বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে।
-
ভাষা ও রচনাশৈলীতে একধরনের কাব্যিক গাম্ভীর্য ও বর্ণনাশৈলীর শৃঙ্খলা বিদ্যমান।
-
তাঁর চরিত্রগুলো সাধারণত আদর্শবাদী ও নৈতিকতার প্রতীক, যারা সমাজে ন্যায় ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে।
-
নারীর চরিত্রায়নে তিনি দেখিয়েছেন সাহস, মমতা ও আত্মমর্যাদার সমন্বয়।
-
তাঁর সাহিত্য সমাজসংস্কার ও জাতীয় চেতনা জাগ্রত করার এক শক্তিশালী মাধ্যম ছিল।
অন্যদিকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ তুলনামূলকভাবে মানবিক দুর্বলতা, আবেগ ও বাস্তব জীবনসংঘাতের চিত্র তুলে ধরে। যেখানে বঙ্কিমচন্দ্র সমাজের বৃহত্তর আদর্শ নিয়ে কাজ করেছেন, শরৎচন্দ্র সেখানে মানুষের অন্তর্জগত ও অনুভূতির সূক্ষ্ম দিকগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
সুতরাং স্পষ্টভাবে বলা যায়, ‘দেবদাস’ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনা করেননি, বরং এটি শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি। এই প্রশ্নটি বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে দুই ভিন্ন যুগের দুই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকের সাহিত্যধারা বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।