'মেঘনাদবধ' গ্রন্থে কোনটির প্রবল প্রকাশ ঘটেছে
A
জাতিসত্তা
B
দেশপ্রেম
C
স্বজনপ্রিতি
D
আত্নপ্রীতি
উত্তরের বিবরণ
মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সৃষ্টি, যেখানে কাব্যের মাধ্যমে কবি নিজের দেশপ্রেম ও জাতিসচেতনতার গভীর প্রকাশ ঘটিয়েছেন। মূলত রামায়ণের কাহিনি অবলম্বনে রচিত হলেও, এই কাব্যে মধুসূদন তার নিজের যুগচেতনা, সমাজচিত্র ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে কাব্যিক রূপে তুলে ধরেছেন। কাব্যটির প্রতিটি স্তবকেই যেন বীরত্ব, আত্মমর্যাদা ও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা প্রতিফলিত হয়েছে।
কবি রামায়ণের প্রচলিত কাহিনিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়েছেন। এখানে রাবণকে নিছক এক দানব নয়, বরং এক দেশপ্রেমিক রাজা ও মহাবীর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাঁর আত্মত্যাগ, দেশের প্রতি আনুগত্য ও সাহসিকতা কবির দৃষ্টিতে বীরত্বের প্রতীক। এর মধ্য দিয়েই কবি নিজের দেশপ্রেম ও জাতীয় গৌরবের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
প্রধান তথ্যসমূহঃ
-
‘মেঘনাদবধ কাব্য’ প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালে, যা বাংলা মহাকাব্য সাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
-
কবি ইউরোপীয় ধাঁচে রচিত হলেও কাব্যের মূল ভাবনা ভারতীয় ঐতিহ্য ও দেশপ্রেমের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত।
-
কাব্যে রাবণ, মেঘনাদ, প্রমথ ও প্রহ্লাদের চরিত্রের মাধ্যমে আত্মত্যাগ ও দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রতীকায়িত হয়েছে।
-
রাবণকে একজন দেশরক্ষাকারী রাজা হিসেবে দেখিয়ে কবি প্রকৃত দেশপ্রেমিকের মর্যাদা দিয়েছেন, যা তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনের অধীন বাংলার জন্য ছিল এক পরোক্ষ প্রতিবাদ।
-
“দেশপ্রেম” কাব্যের মূল চালিকা শক্তি, যেখানে নিজের জাতি ও সংস্কৃতির প্রতি গর্ব প্রকাশ পেয়েছে।
-
কবির ইউরোপীয় শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও, তাঁর মন ছিল দেশের মাটির প্রতি নিবেদিত; তিনি পশ্চিমের কাব্যরীতিকে ব্যবহার করেছেন দেশের মঙ্গল ও মর্যাদা প্রকাশে।
-
এই কাব্যের ভাষা, ভাব ও প্রতীকচিত্রে দেশীয় চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এছাড়াও, মধুসূদনের দেশপ্রেম কেবল কাব্যের বিষয়বস্তুতেই নয়, তাঁর চরিত্রচিত্রণ ও নায়কদের আদর্শেও প্রকাশ পেয়েছে। মেঘনাদ যেমন নিজের দেশ ও পিতার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তেমনি কবি নিজেও তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে বাঙালির আত্মসম্মান রক্ষায় অবদান রেখেছেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর মূল ভাবধারা দেশপ্রেম, যা রাবণের পতনের মধ্য দিয়েও মানবতার জয় ও জাতির গৌরব প্রকাশ করে। এই কাব্য কেবল এক সাহিত্যকর্ম নয়, বরং তা এক জাতির আত্মমর্যাদা ও স্বাধীন চেতনার কাব্যিক ঘোষণা।
0
Updated: 1 day ago
"পুতুলনাচের ইতিকথা" গ্রন্থের রচয়িতা কে?
Created: 2 months ago
A
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
B
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
C
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
D
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
• মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস- 'পুতুলনাচের ইতিকথা'।
---------------------------
• পুতুলনাচের ইতিকথা:
- উপন্যাসটি ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয়।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন: 'সাহিত্যিকেরও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা প্রয়োজন।' 'পুতুলনাচের ইতিকথা'য় সেই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ আছে।
- ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের অন্তর্গত টানাপোড়েন ও অস্তিত্ব সংকট শশী চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত।
- 'পুতুলনাচের ইতিকথা'য় পুতুল বলতে এই মানুষগুলোকেই বোঝানো হয়েছে, যারা চারিত্রিক দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারে না; পুতুলের মতো অন্যের অল্প ধাক্কাতেই চালিত হয়।
- উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্র: হারু ঘোষ, শশী, কুসুম ইত্যাদি।
----------------------------
• মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়:
- ১৯০৮ সালে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
- তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের নিকট মালবদিয়া গ্রামে।
- পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার, ‘মানিক’ তাঁর ডাকনাম।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ত্রিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক।
- স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় বিচিত্রা পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প 'অতসী মামী' (১৯২৮) প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
- সাহিত্যের মাধ্যমে মার্ক্সের শ্রেণিসংগ্রামতত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং মানুষের মনোরহস্যের জটিলতা উন্মোচনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষশিল্পী।
- 'পদ্মানদীর মাঝি' ও 'পুতুলনাচের ইতিকথা' উপন্যাস দুটি তাঁর বিখ্যাত রচনা। এ দুটির মাধ্যমেই তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পদ্মানদীর মাঝি চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে।
- তিনি ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা যান।
• তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো:
- জননী,
- দিবারাত্রির কাব্য,
- পদ্মানদীর মাঝি,
- পুতুলনাচের ইতিকথা,
- শহরতলী,
- চিহ্ন,
- চতুষ্কোণ,
- সার্বজনীন,
- আরোগ্য প্রভৃতি।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর ও বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 2 months ago
'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' কার রচিত গ্রন্থ?
Created: 2 months ago
A
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
B
শেখ হাসিনা
C
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
D
এ. কে. ফজলুল হক
‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’
-
এই বইটির লেখক বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
-
তাঁর লেখা প্রথম বই হিসেবে এটি ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়।
-
বইটি তিনি লিখেছিলেন ১৯৬৭ সালের দিকে, কারাগারে থাকার সময়।
-
এতে তিনি নিজের জন্মকাল থেকে শুরু করে পিতৃপুরুষদের গল্পও বর্ণনা করেছেন।
-
আত্মজীবনীর বিবরণ শেষ হয়েছে ১৯৫৪ সালের রাজনৈতিক ঘটনাবলির মাধ্যমে।
উৎস: প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০২০ এর প্রতিবেদন
0
Updated: 2 months ago
‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ গ্রন্থের সম্পাদক কে ছিলেন?
Created: 5 months ago
A
হাসান হাফিজুর রহমান
B
বেগম সুফিয়া কামাল
C
মুনীর চৌধুরী
D
আবুল বরকত
একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলন:
১৯৫৩ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় প্রথমবারের মতো 'একুশে ফেব্রুয়ারি' শীর্ষক একটি সাহিত্য সংকলন প্রকাশ পায়। এই সংকলনে একুশে ফেব্রুয়ারীর বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, গান, নকশা ও ঐতিহাসিক বিষয়ভিত্তিক রচনাসমূহ স্থান পেয়েছিল।
উক্ত সংকলনটি ১৯৫৩ সালে বামপন্থী বিশিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী মোহাম্মদ সুলতানের তত্ত্বাবধানে ‘পুথিপত্র’ থেকে প্রকাশিত হয়।
সংকলনের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত গানটি—
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো / একুশে ফেব্রুয়ারি / আমি কি ভুলিতে পারি” — যা প্রথমবার এ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
তবে প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তান সরকার এই সংকলন বাজেয়াপ্ত করে।
হাসান হাফিজুর রহমান:
হাসান হাফিজুর রহমান ১৯৩২ সালে জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভাষা আন্দোলন বিষয়ক প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ এর সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের সম্পাদক হিসেবেও পরিচিত।
হাসান হাফিজুর রহমানের রচিত প্রবন্ধসমূহ:
-
আধুনিক কবি ও কবিতা
-
মূল্যবোধের জন্য
-
সাহিত্য প্রসঙ্গ
-
আলোকিত গহ্বর
হাসান হাফিজুর রহমানের কাব্যগ্রন্থসমূহ:
-
বিমুখ প্রান্তর
-
প্রতিবিম্ব
-
আর্ত শব্দাবলী
-
অন্তিম শহরের মতো
-
যখন উদ্যত সঙ্গীন
-
ভবিতব্যের বাণিজ্য তরী
-
শোকার্ত তরবারী
হাসান হাফিজুর রহমানের গল্প:
-
আরো দুটি মৃত্যু
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর ও বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 5 months ago