‘চর্যাপদ’ কোথা থেকে আবিষ্কার করা হয়?
A
শ্রীলঙ্কা
B
পশ্চিমবঙ্গ
C
ভুটান
D
নেপাল
উত্তরের বিবরণ
চর্যাপদ একটি প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের নিদর্শন, যা নেপাল থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি এক ধরনের বৌদ্ধ ধর্মীয় গাথা বা কবিতা, যা মূলত তন্ত্র এবং শাক্ত ধর্মের প্রভাবিত। এই চর্যাপদ গুলোর মধ্যে সাধকরা তাঁদের সাধনাপথ এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
-
অবস্থান: চর্যাপদ প্রথমে নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার একটি গুহায় আবিষ্কৃত হয়। এখানে প্রাচীনকাল থেকে বৌদ্ধ ধর্মের অনেক গাথা লেখা হয়েছিল।
-
বৌদ্ধ তন্ত্র: চর্যাপদ মূলত তন্ত্রধর্মী কবিতা, যা বৌদ্ধ সাধকদের জীবনের নানা দিক এবং তাদের শুদ্ধতার সাধনা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
-
বিশেষত্ব: এটি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে পুরনো সাহিত্য রচনা হিসেবে পরিচিত, যেখানে তন্ত্র, ব্রাহ্মণধর্ম, এবং বৌদ্ধ দর্শন একত্রিত হয়েছে।
-
চর্যাগান: চর্যাপদ গুলোর মধ্যে সাধকদের নানা ধরনের অভিজ্ঞতা এবং সাধনার চিত্র ফুটে উঠেছে। এর মধ্যে কিছু কবিতা অতি সাধারণ মানুষের কথাও বলেছে, যা তখনকার সমাজের জীবনচিত্র তুলে ধরে।
-
গুরুত্ব: চর্যাপদ আবিষ্কার হওয়ায় বাংলা সাহিত্যে এটি একটি অনন্য অবদান রেখেছে, যা পরবর্তীতে সাহিত্যের বিভিন্ন ধারার বিকাশে প্রভাব ফেলেছে।
এটি একটি ঐতিহাসিক আবিষ্কার, যা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতার নিদর্শন এবং বৌদ্ধ ধর্মীয় সাহিত্যকে আরও গভীরভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করে।
0
Updated: 3 days ago
'চর্যাপদ' প্রথম কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?
Created: 8 hours ago
A
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ
B
শ্রীরামপুর মিশন
C
এশিয়াটিক সোসাইটি
D
ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ
‘চর্যাপদ’ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে, যা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চর্যাপদের আবিষ্কার ও প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপের ঐতিহাসিক পরিচয় উন্মোচিত হয়, যা সাহিত্য ইতিহাসে এক অসামান্য অবদান হিসেবে গণ্য।
• চর্যাপদ হলো বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত ধর্মীয় গীতিকাব্যের সংকলন। এতে মোট ৪৭টি পদ রয়েছে, যা পাল যুগের (৮ম থেকে ১২শ শতক) সময় রচিত।
• এই পদের ভাষা ছিল প্রাকৃত বা অপভ্রংশজাত প্রাচীন বাংলা, যা পরবর্তী কালে আধুনিক বাংলা ভাষায় পরিণত হয়।
• চর্যাপদ আবিষ্কারের কৃতিত্ব যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কাছে। তিনি ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন।
• পরে তিনি এই পুঁথিটি বিশ্লেষণ ও সম্পাদনা করে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশ করেন। এর ফলে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ইতিহাসের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়।
• বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায়। এই প্রতিষ্ঠান বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। চর্যাপদের প্রকাশ তাদের অন্যতম বড় কীর্তি হিসেবে বিবেচিত।
• চর্যাপদ প্রকাশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে বাংলা ভাষার উৎপত্তি আরও প্রাচীন এবং তার সাহিত্যিক ঐতিহ্য দীর্ঘকাল ধরে বিকশিত হয়েছে।
• চর্যাপদের রচয়িতারা ছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ, যেমন লুইপা, কাহ্নপা, সরহপা, ভুসুকুপা প্রমুখ। তাঁরা সহজিয়া দর্শনের অনুসারী ছিলেন, যা আত্মিক মুক্তি ও মানবিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দেয়।
• এই পদগুলোর ভাষা “সন্ধ্যা ভাষা” নামে পরিচিত, কারণ এতে গুপ্ত অর্থ বা দার্শনিক ভাব প্রকাশ করা হয়েছে।
• চর্যাপদে পাওয়া যায় ধর্মীয়, দার্শনিক ও মানবিক চিন্তার সমন্বয়, যা বাংলা কাব্যের সূচনা চিহ্নিত করে।
• সাহিত্য বিশারদদের মতে, চর্যাপদ শুধু ধর্মীয় রচনা নয়; এটি বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল।
সবশেষে বলা যায়, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে চর্যাপদের প্রকাশ ছিল বাংলা সাহিত্য গবেষণার মোড় পরিবর্তনের ঘটনা। এই প্রকাশের মাধ্যমেই বাংলা ভাষা প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলা সাহিত্য ইতিহাসে নতুন আলোকবর্তিকা জ্বলে ওঠে।
0
Updated: 8 hours ago