মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার অবস্থান এবং তার সামরিক গুরুত্ব বোঝার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনী দেশকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে পরিকল্পিতভাবে অভিযান চালিয়েছিল। প্রতিটি সেক্টরের নেতৃত্ব এবং এলাকার দায়িত্ব নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে মুক্তিবাহিনী সংগঠিতভাবে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ ও আক্রমণ চালাতে পারে। এই সেক্টর ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত ও কার্যকর করে তুলেছিল।
ঢাকা শহর, যেহেতু তখন পাকিস্তানি সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো, তাই এটি ২নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২নং সেক্টরের অধীনে মূলত ঢাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল। এই সেক্টরের মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকাকে ঘিরে মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত রাখা, পাক সেনাদের যোগাযোগ লাইন ছিন্ন করা এবং শহরের আশপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে সাপোর্ট নেওয়া।
মূল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করলে সহজে বোঝা যায়:
সেক্টর ব্যবস্থা: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতিটি সেক্টরের নিজস্ব কমান্ডার ও সহকারী কমান্ডার থাকতেন।
২নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত এলাকা: ঢাকার পাশাপাশি এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা শহরকে নিরাপত্তা এবং রণকৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল।
সেক্টরের কার্যাবলী: প্রতিটি সেক্টর মূলত তিনটি কাজ করত — মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত করা, পাক সেনাদের প্রতিরোধ করা, এবং স্থানীয় জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সচেতন ও সমর্থন দেওয়া।
২নং সেক্টরের নেতৃত্ব: এই সেক্টরের নেতৃত্বের অধীনে মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন গুপ্তচর এবং প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনা করত, যা ঢাকার মুক্তি ও পাকিস্তানি সেনাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সহায়ক ছিল।
ঢাকার সামরিক গুরুত্ব: রাজধানী হওয়ায় ঢাকা ছিল যোগাযোগ ও প্রশাসনিক কেন্দ্র, তাই ২নং সেক্টরের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনী ঢাকার আশেপাশের এলাকা থেকে নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করত এবং প্রয়োজনীয় হামলা চালাত।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা শহর ২নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ঢাকাকে ঘিরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রমকে কার্যকর ও সুসংগঠিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা ছিল। এটি শুধু শহরের প্রতিরক্ষা নয়, বরং পুরো যুদ্ধ পরিকল্পনার একটি মূল কৌশল ছিল। ২নং সেক্টরের কার্যক্রম ঢাকার মুক্তি এবং মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।