‘কৃতঘ্ন’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত, যার মূল অর্থ এমন একজন ব্যক্তি, যে উপকারীর অপকার করে। এটি নৈতিকভাবে অত্যন্ত নেতিবাচক একটি গুণ, যা কৃতজ্ঞতার সম্পূর্ণ বিপরীত। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে অন্যের উপকারে উপকৃত হয়, আর সেই উপকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা মানবধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু কৃতঘ্ন ব্যক্তি উপকার পাওয়ার পরও সেই উপকারীর প্রতি অন্যায় আচরণ করে বা ক্ষতি করার চেষ্টা করে।
– ‘কৃত’ মানে করা বা সম্পন্ন, আর ‘ঘ্ন’ মানে হত্যা বা বিনাশ করা। অর্থাৎ, কৃতঘ্ন শব্দের আক্ষরিক অর্থ দাঁড়ায়—যে উপকারের বিনাশ করে বা উপকারীর ক্ষতি করে।
– সমাজে কৃতঘ্নতা একটি নিন্দনীয় স্বভাব হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি কৃতজ্ঞতার অভাব এবং নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন।
– কৃতঘ্ন ব্যক্তি সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ হয়ে থাকে, যে নিজের লাভের জন্য অন্যের উপকার ভুলে যায় এবং সুযোগ পেলে সেই উপকারীর ক্ষতি করে।
– বাংলা সাহিত্যেও কৃতঘ্নতার নিন্দা করা হয়েছে; কবি ও সাহিত্যিকরা মানবিক সম্পর্কের মূল্যবোধ বজায় রাখতে কৃতজ্ঞতাকে মহৎ গুণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
– ইতিহাস ও ধর্মীয় কাহিনিতেও দেখা যায়, কৃতঘ্ন ব্যক্তি কখনোই শেষ পর্যন্ত সম্মান বা সুখ লাভ করে না, বরং সমাজে তার অবস্থান হয় ঘৃণিত।
– অন্যদিকে, কৃতজ্ঞ ব্যক্তি সমাজে সম্মান পায়, কারণ সে অন্যের অবদান স্বীকার করে এবং সম্পর্কের মর্যাদা রক্ষা করে।
– কৃতঘ্নতা কেবল ব্যক্তিগত চরিত্রের দুর্বলতা নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণ, যা বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তি নষ্ট করে দেয়।
– শব্দটি ব্যবহারিক জীবনে এমন ব্যক্তিকে বোঝাতেও প্রয়োগ করা হয়, যে কোনো কারণে নিজের উপকারীর বিরুদ্ধাচরণ করে বা কৃতজ্ঞতার বদলে কটুক্তি করে।
– প্রবাদে বলা হয়, “কৃতঘ্নের কোনো বন্ধু নেই,” অর্থাৎ যে উপকারীর ক্ষতি করে, সে শেষ পর্যন্ত সমাজে একঘরে হয়ে পড়ে।
– ভাষা ও সাহিত্যে ‘কৃতঘ্ন’ শব্দটি সতর্কবাণী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, যেন মানুষ কৃতজ্ঞ হতে শেখে এবং অন্যের মঙ্গলচিন্তায় সদা সচেতন থাকে।
অতএব, ‘কৃতঘ্ন’ শব্দের অর্থ — যে উপকারীর অপকার করে, এবং এটি এমন এক নিন্দনীয় মানবগুণ যা সমাজে অবিশ্বাস, অবজ্ঞা ও সম্পর্কের ভাঙন সৃষ্টি করে।