বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক পত্রিকা-
A
দিগদর্শন
B
সমাচার দর্পণ
C
সংবাদ প্রভাকর
D
আজিজননেহার
উত্তরের বিবরণ
উ. দিগদর্শন
বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক পত্রিকা ছিল ‘দিগদর্শন’, যা ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশনার সূচনা ঘটায় এবং বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে। এই পত্রিকাটি প্রকাশ করেছিলেন সেরামপুর মিশন প্রেস, যা পরিচালনা করতেন বিশপ উইলিয়াম কেরি ও তাঁর সহকর্মীরা।
‘দিগদর্শন’-এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে শিক্ষা, জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানো। পত্রিকাটি মূলত শিক্ষিত ও চিন্তাশীল পাঠকের জন্য রচিত হয় এবং এতে বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, ভূগোল, সাহিত্য ও সাধারণ জ্ঞানের নানা বিষয় প্রকাশ পেত। এটি শুধু একটি সংবাদপত্র ছিল না; বরং একটি জ্ঞানমূলক সাময়িক পত্রিকা, যা পাঠকদের মধ্যে নতুন চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।
এই পত্রিকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর দ্বিভাষিক রূপ—বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় প্রকাশ পেত। এর মাধ্যমে একদিকে ইংরেজি শিক্ষিত সমাজ বাংলা ভাষার সঙ্গে পরিচিত হতে পারত, অন্যদিকে বাংলাভাষী পাঠকরা ইউরোপীয় জ্ঞান ও ভাবধারার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করত। ফলে, ‘দিগদর্শন’ শুধু একটি পত্রিকা নয়, বরং বাংলা রেনেসাঁর সূচনাপর্বের একটি অনুঘটক হয়ে ওঠে।
এই পত্রিকা বাংলা ভাষায় গদ্য লেখার ধারা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তখন বাংলা ভাষায় গদ্য রচনা সীমিত ছিল, কিন্তু ‘দিগদর্শন’-এর লেখাগুলো পাঠকদের মধ্যে গদ্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে বাংলা গদ্যভাষার বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতার পথ সুগম করে।
‘দিগদর্শন’-এর পর ১৮১৮ সালের জুন মাসেই একই মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় আরেকটি পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’, যা সংবাদভিত্তিক ছিল। তবে প্রথম সাময়িক বা জ্ঞানবহ পত্রিকা হিসেবে ‘দিগদর্শন’-ই অগ্রগণ্য।
অতএব, বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাময়িক পত্রিকা হলো ‘দিগদর্শন’, যা বাংলা সাংবাদিকতা ও জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এক অমলিন সূচনা হিসেবে চিহ্নিত।
0
Updated: 3 days ago
'একুশে ফেব্রুয়ারি' প্রথম সংকলনের সম্পাদক কে?
Created: 3 months ago
A
শওকত ওসমান
B
জহির রায়হান
C
আব্দুল গণি হাজারী
D
হাসান হাফিজুর রহমান
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ঘটে যাওয়া রক্তঝরা আন্দোলনের স্মৃতিকে ধারণ করে ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় এক অনন্য সাহিত্য সংকলন—‘একুশে ফেব্রুয়ারী’।
এই সংকলনের সম্পাদনায় ছিলেন কবি ও সাহিত্যিক হাসান হাফিজুর রহমান এবং প্রকাশনায় ছিলেন মোহাম্মদ সুলতান। উভয়েই তৎকালীন বামপন্থি রাজনৈতিক চিন্তাধারার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এই সংকলনটি বাংলা সাহিত্যে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখে, যেখানে ২২ জন লেখক ছয়টি বিভাগে লিখেছেন—কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, গান, নক্শা ও ইতিহাস। এ গ্রন্থেই প্রথমবার প্রকাশিত হয় ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অমর গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো”,
যার রচয়িতা ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। তবে স্বাধীন মতপ্রকাশ সহ্য করতে না পেরে পাকিস্তানি সরকার সংকলনটি প্রকাশের মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই বাজেয়াপ্ত করে।
হাসান হাফিজুর রহমান: কবি, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক
জন্ম: ১৯৩২, জামালপুর
বিশেষ পরিচিতি: কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক
হাসান হাফিজুর রহমান বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র’ নামক গুরুত্বপূর্ণ দলিল সংকলনেরও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর সাহিত্যকর্ম:
প্রবন্ধসমূহ:
-
আধুনিক কবি ও কবিতা
-
মূল্যবোধের জন্য
-
সাহিত্য প্রসঙ্গ
-
আলোকিত গহ্বর
কাব্যগ্রন্থ:
-
বিমুখ প্রান্তর
-
প্রতিবিম্ব
-
আর্ত শব্দাবলী
-
অন্তিম শহরের মতো
-
যখন উদ্যত সঙ্গীন
-
ভবিতব্যের বাণিজ্য তরী
-
শোকার্ত তরবারী
গল্প:
-
আরো দুটি মৃত্যু
এই সংকলন ও এর সম্পাদক বাংলা জাতিসত্তার আত্মপ্রকাশ, সাহিত্য ও ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। ভাষার জন্য প্রাণ দেওয়া শহিদদের স্মরণে সাহিত্যের এ মহাকাব্যিক প্রকাশ বাংলা সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর), বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 3 months ago
বাংলাদেশের ছোট কাগজ 'কন্ঠস্বর' এর সম্পাদক কে?
Created: 2 weeks ago
A
হুমায়ুন আজাদ
B
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
C
হাসান আজিজুল হক
D
আবুল হাসনাত
বিশ শতকের ষাটের দশকের অন্যতম সাহিত্যপত্রিকা ‘কণ্ঠস্বর’, যা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নতুন ভাবধারা ও আধুনিক চিন্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, যিনি সাহিত্য, সমালোচনা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
-
‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকা মূলত নতুন প্রজন্মের সাহিত্যিকদের চিন্তা ও সৃজনশীলতা প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে ওঠে।
-
এটি বাংলাদেশের আধুনিক সাহিত্যচর্চায় নতুন ভাষা, নতুন ভাবনা ও মুক্তচেতা দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারে সহায়ক হয়।
-
পত্রিকাটি কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প ও সমালোচনামূলক রচনার মাধ্যমে ষাটের দশকের সাহিত্য আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
-
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের সম্পাদনায় এই পত্রিকা বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার ধারায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
0
Updated: 2 weeks ago
সবুজপত্র পত্রিকাটির সম্পাদক কে?
Created: 1 month ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
শেখ ফজলুল করিম
C
প্রমথ চৌধুরী
D
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন
'সবুজপত্র' পত্রিকা বাংলা সাহিত্যের চলতি গদ্যরীতির প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এটি প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় ১৯১৪ সালে মাসিক হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় এবং বাংলা বৈশাখ ১৩২১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হওয়া এটি বাংলা গদ্যরীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
পত্রিকাটি সাধু গদ্যরীতির পরিবর্তে চলিত গদ্যরীতিকে ব্যবহার ও প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়ক হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে চলিত গদ্যরীতির স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তা চর্চা করেন।
এছাড়াও, সাহিত্য জগতে 'সবুজপত্র গোষ্ঠী' গঠনের ক্ষেত্রেও পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পত্রিকাটি ১৯২৭ সালে বন্ধ হয়ে যায়।
-
সম্পাদক: প্রমথ চৌধুরি
-
প্রথম প্রকাশ: ১৯১৪, মাসিক 'সবুজপত্র'
-
বাংলা বৈশাখ ১৩২১ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশ
-
গদ্যরীতিতে প্রভাব: চলিত গদ্যরীতি প্রচলন ও প্রতিষ্ঠা
-
বিশিষ্ট অবদান: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চলিত গদ্যরীতি চর্চায় সহায়ক
-
সাহিত্যকেন্দ্রিক ভূমিকা: 'সবুজপত্র গোষ্ঠী' গঠনে সহায়ক
-
সমাপ্তি: ১৯২৭ সালে বন্ধ
0
Updated: 1 month ago