'কবি কঙ্কন' কার উপাধি?
A
বিজয় গুপ্ত
B
দ্বিজ মাধব
C
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
D
ভারতচন্দ্র
উত্তরের বিবরণ
উ. মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
‘কবি কঙ্কন’ উপাধিটি পেয়েছিলেন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, যিনি মধ্যযুগের বাংলা মঙ্গলকাব্য ধারার একজন বিশিষ্ট কবি। তিনি তাঁর বিখ্যাত কাব্য ‘চণ্ডীমঙ্গল’ রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। এই কাব্যেই তাঁর অসাধারণ কাব্যপ্রতিভা, ভাষার শক্তি ও সমাজচিত্রের বাস্তবতা ফুটে ওঠায় তাঁকে এই উপাধি দেওয়া হয়।
মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ছিলেন ষোড়শ শতকের কবি, যিনি বঙ্গদেশের জনজীবন, ধর্মবিশ্বাস ও সামাজিক অবস্থার বাস্তব রূপ কাব্যে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখায় দেবী চণ্ডীর মাহাত্ম্য যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও সংগ্রামের গল্পও স্থান পেয়েছে। ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য শুধু ধর্মীয় নয়, এটি এক অর্থে মানবজীবনের ইতিহাস।
তিনি তাঁর কাব্যে দেবতার কাহিনির সঙ্গে মানুষের জীবনের টানাপোড়েন মিলিয়ে এক বাস্তবধর্মী সমাজচিত্র অঙ্কন করেছেন। এতে যেমন আছে ভক্তি, তেমনি আছে প্রেম, সংগ্রাম, লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা ও ন্যায়ের প্রতীকী উপস্থাপন। তাঁর ভাষা ছিল সহজ, প্রাঞ্জল ও শক্তিশালী, যা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে অনুরণন তোলে।
‘কবি কঙ্কন’ উপাধির অর্থ হলো কাব্যের অলংকারে দীপ্ত কবি, অর্থাৎ যিনি তাঁর কাব্যের মাধ্যমে ভাষাকে মূল্যবান অলংকারে পরিণত করেছেন। মুকুন্দরামের লেখায় এই দীপ্তি স্পষ্ট। তাঁর কবিতায় শব্দচয়ন, ছন্দ ও রূপক ব্যবহারের যে মাধুর্য দেখা যায়, তা তাঁকে সমসাময়িকদের মধ্যে আলাদা মর্যাদায় পৌঁছে দেয়।
তাঁর কাব্যে দেবতা ও মানুষের সম্পর্ক কেবল ধর্মীয় সীমায় আবদ্ধ নয়; তিনি এই সম্পর্ককে মানবিক আবেগ ও সমাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখিয়েছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি তাঁকে কেবল একজন ধর্মীয় কবি নয়, বরং একজন জনজীবনের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের মাধবচন্দ্র ও খেলা-চাঁদের কাহিনি মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক ন্যায়ের ধারণা ও কর্মফলের চিরন্তন সত্য তুলে ধরে। এ কারণেই মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন ‘কবি কঙ্কন’ নামে। তাঁর কাব্য কেবল ধর্মীয় সাহিত্য নয়, বরং বাংলা সমাজ-সংস্কৃতির এক ঐতিহাসিক দলিল।
অতএব, ‘কবি কঙ্কন’ উপাধিটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর প্রাপ্য, কারণ তাঁর কাব্যে যে কাব্যিক মহিমা, মানবিক সত্য ও নান্দনিক গভীরতা প্রকাশ পেয়েছে, তা বাংলা সাহিত্যকে করেছে আরও সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত।
0
Updated: 3 days ago