উপজাতীয় জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত উপন্যাস কোনটি?
A
সংশপ্তক
B
কর্ণফুলি
C
যাপিত জীবন
D
খোয়াবনাম
উত্তরের বিবরণ
উ. কর্ণফুলি
এই উপন্যাসটি উপজাতীয় জীবনের বাস্তবতা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে রচিত। লেখক এখানে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনধারা, তাদের সামাজিক রীতি, সংস্কৃতি, প্রকৃতিনির্ভর জীবন ও বৈষম্যের চিত্র অত্যন্ত বাস্তবভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘কর্ণফুলি’ মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আদিবাসী জনগণের জীবনসংগ্রাম, আশা-নিরাশা ও মানবিক টানাপোড়েনের এক চিত্রকল্প।
এই উপন্যাসে উপজাতীয় সমাজের সরলতা ও নিসর্গপ্রেম প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে। লেখক দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রকৃতি ও মানুষ এখানে পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। উপজাতি জনগোষ্ঠীর জীবনে কর্ণফুলি নদী শুধু একটি নদী নয়, বরং তাদের জীবনের উৎস, আশ্রয় ও জীবিকার প্রতীক। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে তাদের সংস্কৃতি, গান, বিশ্বাস ও জীবনের ছন্দ।
উপন্যাসে উপজাতিদের সামাজিক গঠন, ধর্মীয় আচার, প্রেম-বিরহ ও সংগ্রামী মনোভাব বাস্তবভিত্তিকভাবে চিত্রিত হয়েছে। লেখক কোনো কৃত্রিমতা ছাড়াই তাদের জীবনকে মানুষের সাধারণ মানবিক অভিজ্ঞতার অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। ফলে পাঠক উপজাতি সমাজকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখে—তারা যে কেবল ‘পাহাড়ি’ নয়, বরং এক গভীর মানবিক সমাজের প্রতিনিধি, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এই রচনায় দেখা যায়, সভ্যতার আগ্রাসন ও আধুনিকতার প্রভাব উপজাতি জীবনের শান্ত, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। লেখক এই পরিবর্তনের প্রতি সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং উপজাতীয় জীবনের সহজ সৌন্দর্য ও আত্মমর্যাদা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। ভাষা ও বর্ণনার সরলতা, পরিবেশের রূপলাবণ্য, চরিত্রের স্বাভাবিকতা—সবকিছু মিলিয়ে ‘কর্ণফুলি’ হয়ে উঠেছে একটি শিল্পসমৃদ্ধ উপজাতীয় জীবনচিত্র।
বাংলা সাহিত্যে এ ধরনের উপজাতি-ভিত্তিক উপন্যাস বিরল। তাই ‘কর্ণফুলি’ কেবল একটি সাহিত্যকর্ম নয়, বরং এটি উপজাতীয় সংস্কৃতি ও মানবিক অস্তিত্বের এক ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। উপন্যাসটি পাঠকের মনে প্রকৃতি, মানুষ ও সংস্কৃতির এক অনন্য সেতুবন্ধন তৈরি করে—যেখানে নদী, পাহাড় ও মানুষের জীবন একাকার হয়ে যায়।
0
Updated: 3 days ago
"সাঁঝের মায়া" কবিতাটির রচয়িতা কে?
Created: 2 weeks ago
A
বেগম রোকেয়া
B
নীলিমা ইব্রাহীম
C
সেলিনা হোসেন
D
বেগম সুফিয়া কামাল
‘সাঁঝের মায়া’ হলো সুফিয়া কামালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার সূচনা ও নারীকণ্ঠের এক অনন্য অভিব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত। কাব্যগ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, এবং প্রকাশের পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি পড়ে উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন।
গ্রন্থটিতে মোট ২৮টি কবিতা সংকলিত রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিতে মানবিক অনুভূতি, প্রকৃতিপ্রেম, নারীর হৃদয়জগৎ ও সামাজিক চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে।
সুফিয়া কামাল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
-
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালের ২০ জুন, বরিশালের শায়েস্তাবাদে এক অভিজাত মুসলিম পরিবারে।
-
তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনা হয় ১৯২৬ সালে, যখন তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ প্রকাশিত হয়।
-
সুফিয়া কামাল ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ ও সমাজসংস্কারক।
-
তিনি ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত ‘বেগম’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন।
-
তাঁর দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব ও সংগ্রামী জীবনের জন্য তাঁকে বলা হয় ‘জননী সাহসিকা’।
-
তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর, ঢাকায়।
তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থসমূহ:
-
সাঁঝের মায়া
-
মন ও জীবন
-
উদাত্ত পৃথিবী
-
অভিযাত্রিক
-
মোর যাদুদের সমাধি পরে
-
মায়া কাজল
‘সাঁঝের মায়া’ গ্রন্থের মাধ্যমে সুফিয়া কামাল বাংলা কবিতায় এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বর এনে দিয়েছিলেন—যেখানে মানবতা, নারীর অনুভব, প্রকৃতির মায়া ও সামাজিক চেতনার এক সুষম সংমিশ্রণ দেখা যায়।
0
Updated: 2 weeks ago
নিচের বাক্যটি কোন ধরেনর বাক্য?
'সে যে কোথায় আমার তা জানা নেই'
Created: 1 month ago
A
যৌগিক
B
জটিল
C
সরল
D
খণ্ড বাক্য
জটিল বাক্য হলো এমন বাক্য যেখানে একটি মূল বাক্যের সাথে এক বা একাধিক আশ্রিত বাক্য বা বাক্যাংশ যুক্ত থাকে। এতে সাধারণত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ যোজক ব্যবহৃত হয়, যা মূল বাক্যের সাথে অধীন বাক্যগুলোকে যুক্ত করে।
সাপেক্ষ সর্বনামের উদাহরণ: যে-সে, যারা-তারা, যিনি-তিনি, যাঁরা-তাঁরা, যা-তা ইত্যাদি।
সাপেক্ষ যোজকের উদাহরণ: যদি-তবে, যদিও-তবু, যেহেতু-সেহেতু, যত-তত, যেটুকু-সেটুকু, যেমন-তেমন, যখন-তখন ইত্যাদি।
উদাহরণসমূহ:
-
সে যে কোথায় আছে, আমার তা জানা নেই। (এখানে “সে-যে” সাপেক্ষ সর্বনাম ব্যবহৃত হওয়ায় বাক্যটি জটিল।)
-
যে ছেলেটি এখানে এসেছিল, সে আমার ভাই।
-
যদি তুমি যাও, তবে তার দেখা পাবে।
-
যখন বৃষ্টি নামল, তখন আমরা ছাতা খুঁজতে শুরু করলাম।
-
যদি তোমার কিছু বলার থাকে, তবে এখনই বলে ফেলো।
-
যদিও পথ দীর্ঘ, তবু আমরা হাল ছাড়ব না।
অতএব, বলা যায় যে বাক্যে যদিও—তবু/যদিও—তথাপি থাকলেও সেটি জটিল বাক্য হিসেবে গণ্য হয়।
উৎস:
0
Updated: 1 month ago
বিধবার প্রেম নিয়ে রচিত উপন্যাস কোনটি?
Created: 1 month ago
A
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শেষ প্রশ্ন’
B
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’
C
কাজী নজরুল ইসলামের ‘কুহেলিকা’
D
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কপালকুণ্ডলা’
চোখের বালি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘চোখের বালি’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস।
-
এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯০৩ সালে।
-
এই রচনার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বাংলা উপন্যাসকে এক নতুন ধারায় নিয়ে আসেন।
-
তিনি এখানে কাহিনির ভার কমিয়ে চরিত্রের মনের দ্বন্দ্ব, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সংকটকে মূল বিষয় হিসেবে ব্যবহার করেন।
-
প্রধান চরিত্র বিনোদিনী ছিলেন এক বিধবা; তার প্রেম, দুঃখ, প্রত্যাশা কাহিনিকে সামনে এগিয়ে নেয়।
-
আশালতা ছিলেন মহেন্দ্রর স্ত্রী ও পতিব্রতা নারী। কিন্তু মহেন্দ্র স্ত্রীকে উপেক্ষা করে বিধবা বিনোদিনীর প্রতি আকৃষ্ট হন।
প্রধান চরিত্র: বিনোদিনী, মহেন্দ্র, আশালতা, বিহারী, রাজলক্ষ্মী প্রমুখ।
শেষ প্রশ্ন (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
-
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাসে তিনি বিশ শতকের প্রথম ভাগের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজকে চিত্রিত করেছেন।
-
মানুষের রূপান্তরশীল জীবন, সমাজ ও মানসিকতার পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনি গড়ে ওঠে।
কুহেলিকা (কাজী নজরুল ইসলাম)
-
কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘কুহেলিকা’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৪১ বঙ্গাব্দে (১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে) ‘নওরোজ’ পত্রিকায়।
-
এটি একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটভিত্তিক উপন্যাস, যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইঙ্গিত ও সমাজচিত্র এক বৃহৎ ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে।
-
উপন্যাসের নায়ক জাহাঙ্গীর।
-
বিখ্যাত উক্তি: “ইহারা মায়াবিনীর জাত, ইহারা সকল কল্যাণের পথে মায়াজাল পাতিয়া রাখিয়াছে।”
চরিত্র: কুহেলিকা, তাহমিনা, ফিরদৌস বেগম ইত্যাদি।
কপালকুণ্ডলা (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
-
‘কপালকুণ্ডলা’ (১৮৬৬) বঙ্কিমচন্দ্রের দ্বিতীয় উপন্যাস।
-
এটি একদিকে রোমান্টিক, অন্যদিকে সমাজ ও সংস্কারের দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে।
-
গল্পের কেন্দ্রে আছে বনবাসিনী কপালকুণ্ডলা এবং নবকুমারের বিবাহ ও সমাজসংঘাত।
-
উপন্যাসে প্রকৃতির সৌন্দর্য, রহস্য এবং চরিত্রের ট্র্যাজিক পরিণতি একে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
-
নায়িকা কপালকুণ্ডলার সংলাপ “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?” – বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক সংলাপ হিসেবে খ্যাত।
-
লেখকের জীবদ্দশায় এর আটটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং এটি অনেকের মতে বঙ্কিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
চরিত্র: কপালকুণ্ডলা, নবকুমার, কাপালিক ইত্যাদি।
উৎস: বাংলাপিডিয়া এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।
0
Updated: 1 month ago