'ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ'- কে বলেছেন?
A
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
B
ড. আহম্মদ শরীফ
C
মুনীর চৌধুরী
D
ড. মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
উত্তরের বিবরণ
উ. মুনীর চৌধুরী
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে মুনীর চৌধুরী ছিলেন গভীর চিন্তাশীল এক মনীষী। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ" বাংলা ভাষার বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। তিনি এই উক্তির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলা ভাষা কেবল একটি নির্দিষ্ট রূপে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর রয়েছে অসংখ্য ধ্বনি, উপভাষা ও প্রকাশভঙ্গি।
এই উক্তির মূল বক্তব্য হলো, মাতৃভাষা কোনো যান্ত্রিক বা একঘেয়ে মাধ্যম নয়। এটি মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, সংস্কৃতি ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত ও প্রসারিত হয়। মুনীর চৌধুরীর মতে, বাংলা ভাষার সৌন্দর্য এর বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিহিত।
ভাষার এই বৈচিত্র্য প্রকাশ পায় শব্দের উচ্চারণ, শব্দভাণ্ডার, বাক্যগঠন এবং আঞ্চলিক ব্যবহারে। গ্রামীণ ও শহুরে ভাষার পার্থক্য, সাহিত্যিক ও কথ্য ভাষার ভিন্নতা—সবই এই ভাষার প্রাণচাঞ্চল্যের প্রমাণ।
তিনি আরও মনে করতেন, ভাষার শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে প্রকাশ পায় যখন তা সব শ্রেণি ও অঞ্চলের মানুষের মুখে জীবন্ত থাকে। তাই তিনি বাংলা ভাষার উপভাষা, আঞ্চলিক রূপ এবং লোকজ উচ্চারণের মূল্যায়ন করেছেন। এই ধারণা বাংলা ভাষাকে কৃত্রিম সীমারেখা থেকে মুক্ত করে একটি বহুমাত্রিক মানবিক প্রকাশের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
মুনীর চৌধুরীর ভাষা-ভাবনায় দেখা যায় যে, তিনি বাংলা ভাষাকে কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানে কেবল তার সাহিত্য পড়া নয়, বরং তার প্রতিটি রূপ ও প্রকাশকে শ্রদ্ধা করা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি ভাষার একরূপতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তিনি দেখিয়েছেন যে, একটি ভাষার শক্তি তার শব্দভাণ্ডারের আকারে নয়, বরং তার পরিবর্তন ও অভিযোজনক্ষমতায়। এভাবেই বাংলা ভাষা বিভিন্ন যুগে, অঞ্চলে এবং মানুষের অভিজ্ঞতায় নতুন নতুন রূপ ধারণ করেছে—যা একে জীবন্ত ও চিরন্তন করে তুলেছে।
অতএব, মুনীর চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য, গতিশীলতা ও সার্বজনীনতার এক অনন্য ঘোষণা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ভাষার সৌন্দর্য তার বহুরূপীতায়, একরূপতায় নয়।
0
Updated: 3 days ago
মুনীর চৌধুরীর 'মুখরা রমণী বশীকরণ' একটি-
Created: 1 month ago
A
উপন্যাস
B
ছোটগল্প
C
প্রবন্ধ
D
অনুবাদ নাটক
মুনীর চৌধুরীর ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটক
-
রচনা ও উৎস
‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ হলো বাংলাদেশি নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর অনুবাদ নাটক। এটি উইলিয়াম শেক্সপিয়রের The Taming of The Shrew (টেমিং অব দ্য শ্রু) নাটকের অনুবাদ, ১৯৭০ সালে প্রকাশিত। নাটকটি পাঁচ অঙ্কের কমেডি রূপে উপস্থাপিত। -
পটভূমি ও কাহিনী:
নাটকটির প্রধান চরিত্র দুই কন্যা — ক্যাথেরিনা এবং বিয়াঙ্কা, যাদের পিতা পডুয়া শহরের ধনী ব্যক্তি। ক্যাথেরিনা চঞ্চল ও মুখরায়, আর বিয়াঙ্কা সুন্দরী ও কোমল স্বভাবের। ভেরোনা শহরের যুবক পেট্রুশিও ক্যাথেরিনার আত্মমর্যাদা ও জেদকে চ্যালেঞ্জ করে, শেষে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়।
মুনীর চৌধুরীর ভাষায়, কাহিনিটি স্থূল হলেও এতে হাস্যরস সতেজ, সরস ও উপভোগ্য।
মুনীর চৌধুরী
-
জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯২৫, মানিকগঞ্জ।
-
পেশা: শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বাগ্মী।
-
জীবন: শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রচিত নাটকসমূহ
-
মূল নাটক: রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, কবর, দণ্ডকারণ্য।
-
অনুবাদ নাটক: কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমণী বশীকরণ।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
0
Updated: 1 month ago
'মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়।'- উক্তিটি কোন রচনার অন্তর্ভুক্ত?
Created: 1 month ago
A
সাজাহান
B
কবর
C
রক্তাক্ত প্রান্তর
D
নুরলদীনের সারাজীবন
রক্তাক্ত প্রান্তর ও মুনীর চৌধুরী
-
‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকটি মুনীর চৌধুরী রচিত এবং মহাকবি কায়কোবাদের ‘মহাশ্মশান’ গ্রন্থের কাহিনি অবলম্বনে রচিত।
-
এটি মুনীর চৌধুরীর প্রথম পূর্ণাঙ্গ মৌলিক নাটক।
-
নাটকটি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধ (১৭৬১)-এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন অঙ্কে রচিত।
-
যদিও ঘটনাভিত্তিক, এটি একটি ইতিহাস-আশ্রিত নাটক, সরাসরি ঐতিহাসিক রচনা নয়।
-
নাটকের জনপ্রিয় উক্তি: “মানুষ মরে গেলে পচে যায়। বেঁচে থাকলে বদলায়।” — নবাব সুজাউদ্দৌলার মুখোমুখি বলা।
নাটকের প্রধান চরিত্র:
-
ইব্রাহিম কার্দি
-
জোহরা
-
হিরণবালা
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নাটক:
-
‘সাজাহান’ — দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ঐতিহাসিক নাটক (১৯০৯)
-
‘কবর’ — মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক, ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা; ১৯৫৩ সালে জেলের রাজবন্দিদের দ্বারা প্রথম অভিনীত, ১৯৬৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত।
-
‘নুরলদীনের সারাজীবন’ — সৈয়দ শামসুল হক রচিত ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটক।
0
Updated: 1 month ago
মুনীর চৌধুরীর অনূদিত নাটক কোনটি?
Created: 2 months ago
A
কবর
B
চিঠি
C
রক্তাক্ত প্রান্তর
D
মুখরা রমণী বশীকরণ
মুনীর চৌধুরীর নাটক ও অনুবাদ
১. মুখরা রমণী বশীকরণ:
-
মুনীর চৌধুরী উইলিয়াম শেক্সপিয়রের The Taming of The Shrew নাটকটি অনুবাদ করে বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করেছেন মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০)।
-
এটি পাঁচ অঙ্ক বিশিষ্ট একটি কমেডি নাটক।
-
গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: পদুয়া শহরের ধনী দুই কন্যা, ক্যাথেরিনা এবং বিয়াঙ্কা। ক্যাথেরিনা তীক্ষ্ণ ও মুখর, আর বিয়াঙ্কা খুব সুন্দরী। ভেরোনা শহরের যুবক পেট্রুশিও ক্যাথেরিনার অহংকার ভেঙে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
-
মুনীর চৌধুরীর নিজের মন্তব্য অনুযায়ী, নাটকের কাহিনী স্থুল হলেও হাস্যরসটি সতেজ, সরস ও আনন্দদায়ক।
২. কবর নাটক:
-
মার্কিন নাট্যকার ইরভিন শ’র Bury The Dead নাটক থেকে প্রেরণা নিয়ে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘কবর’ নাটক রচিত হয়েছে।
-
মূল থিমটি অনুকরণ হলেও, ‘কবর’ একটি অনুবাদ নাটক নয়।
-
নাটকে সমাধি থেকে মানুষের আত্মার পুনরুত্থান ঘটার ঘটনার অনুকরণ আছে, যা মূল Bury The Dead নাটকে দেখা যায়।
৩. মুনীর চৌধুরীর জীবন ও সৃজন:
-
মুনীর চৌধুরী (জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯২৫, মানিকগঞ্জ) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বাগ্মী।
-
শিক্ষা ও কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
৪. মুনীর চৌধুরীর নাটকসমূহ:
-
মৌলিক নাটক: রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, কবর, দণ্ডকারণ্য
-
অনুবাদ নাটক: কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমণী বশীকরণ
উৎস: ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 2 months ago