'সবুজপত্র' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
A
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
B
প্রমথ চৌধুরী
C
কাজী নজরুল ইসলাম
D
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
উত্তরের বিবরণ
উত্তর: খ) প্রমথ চৌধুরী
‘সবুজপত্র’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী পত্রিকা, যার সম্পাদনা করেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে। বাংলা গদ্যসাহিত্যে নতুন রুচি, আধুনিক মনন ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবধারার সূচনা এই পত্রিকার মাধ্যমেই ঘটে। প্রমথ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই পত্রিকা সাহিত্যজগতে এক নবজাগরণের সূচনা করেছিল।
‘সবুজপত্র’-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর আধুনিক চিন্তাধারা ও নতুন সাহিত্যরীতির প্রবর্তন। প্রমথ চৌধুরী বিশ্বাস করতেন যে সাহিত্যকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই তিনি পুরোনো প্রথাগত রচনাশৈলী থেকে বেরিয়ে এসে নতুন ভাষারীতি ও রুচির বিকাশ ঘটান। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি চলিত ভাষায় সাহিত্য রচনার ধারা শুরু করেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের প্রধান ভাষাশৈলী হয়ে ওঠে।
এই পত্রিকার মূল উদ্দেশ্য ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সমাজজীবনের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা। প্রমথ চৌধুরী এতে মননশীল প্রবন্ধ, গল্প, সমালোচনা ও অনুবাদ সাহিত্য প্রকাশ করতেন, যা পাঠকের চিন্তাকে উদ্দীপ্ত করত।
এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহিতলাল মজুমদার, সজনীকান্ত দাস, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রমুখ খ্যাতনামা সাহিত্যিক। ফলে ‘সবুজপত্র’ হয়ে ওঠে নবযুগের সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রবিন্দু।
পত্রিকাটি বাংলা সাহিত্যে যে পরিবর্তন এনেছিল তা কয়েকটি দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ—
-
এটি চলিত ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা পূর্বে উচ্চাঙ্গ সাহিত্যে ব্যবহৃত হতো না।
-
এতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীন চিন্তার মূল্যায়ন করা হয়, যা তৎকালীন সমাজে এক নতুন ধারণা ছিল।
-
প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যে রুচিশীলতা ও ব্যঙ্গরসের সংযোজন করেন, যা পাঠকের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
-
এই পত্রিকার মাধ্যমে আধুনিক প্রবন্ধ ও সমালোচনার ধারা গড়ে ওঠে।
-
এটি নতুন লেখকদের জন্য এক মুক্ত চিন্তার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছিল।
সর্বোপরি, ‘সবুজপত্র’ কেবল একটি সাহিত্যপত্রিকা ছিল না; এটি ছিল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক নবজাগরণের আন্দোলন। প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনা ও দিকনির্দেশনায় পত্রিকাটি বাংলা গদ্যসাহিত্যকে আধুনিক রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাঁর এই অবদান বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে আজও অম্লান।
0
Updated: 3 days ago
প্রমথ চৌধুরী রচিত গল্পগ্রন্থ কোনটি?
Created: 2 months ago
A
পদচারণ
B
সনেট পঞ্চাশৎ
C
চার ইয়ারী কথা
D
কোনোটিই নয়
‘চার ইয়ারী কথা’ গল্পগ্রন্থ
-
‘চার ইয়ারী কথা’ প্রমথ চৌধুরীর একটি উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ, যা ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়।
-
এতে চার বন্ধুর প্রেমকাহিনী বর্ণিত হয়েছে, যেখানে নায়িকারা সবাই ইউরোপীয়।
-
গল্পগ্রন্থের চার নায়িকার বৈশিষ্ট্য:
-
প্রথম নায়িকা— উন্মাদ
-
দ্বিতীয় নায়িকা— চোর
-
তৃতীয় নায়িকা— প্রতারক
-
চতুর্থ নায়িকা— মৃত্যুর পর ভালোবাসা প্রকাশ করেছে
-
-
এ গ্রন্থে ভাষার চাতুর্য, পরিহাসপ্রিয়তা ও সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ভাবালু প্রেমকাহিনীর প্রতি এখানে প্রতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্য করা যায়।
প্রমথ চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থসমূহ
-
সনেট পঞ্চাশৎ
-
পদচারণ
উৎস:
১) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা
২) বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 2 months ago
কোনটি প্রমথ চৌধুরী রচিত গল্পগ্রন্থ নয়?
Created: 2 weeks ago
A
আহুতি
B
তেল-নুন-লকড়ি
C
নীললোহিত
D
চার ইয়ারী কথা
বাংলা গদ্যসাহিত্যের আধুনিক রূপকার হিসেবে প্রমথ চৌধুরী বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বাংলা ভাষায় চলিত রীতির প্রবর্তন করে সাহিত্যকে সাধারণ পাঠকের কাছে আরও সহজ ও প্রাণবন্ত করে তোলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা গদ্য, প্রবন্ধ ও কবিতা—সবক্ষেত্রেই সমানভাবে বিস্তৃত ছিল।
মূল তথ্যসমূহ:
-
প্রমথ চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট, যশোরে।
-
তিনি বাংলা ভাষার সাধু ও চলিত রূপের মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা করেন।
-
বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক এবং বিদ্রূপাত্মক প্রাবন্ধিক হিসেবে তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।
-
তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’।
-
বাংলা কাব্য সাহিত্যে তিনিই প্রথম ইতালীয় সনেট রচনার প্রবর্তন করেন।
-
তিনি ১৯১৪ সালে প্রকাশিত মাসিক ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
গল্পগ্রন্থ:
-
চার ইয়ারী কথা
-
নীললোহিত
-
আহুতি
প্রবন্ধগ্রন্থ:
-
তেল-নুন-লকড়ি
0
Updated: 2 weeks ago
'ভাষা মানুষের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে, উল্টোটা করতে গেলে মুখে শুধু কালি পড়ে', বলেছেন-
Created: 3 months ago
A
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
B
কাজী নজরুল ইসলাম
C
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
D
প্রমথ চৌধুরী
প্রমথ চৌধুরী
প্রমথ চৌধুরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক এবং বাংলা চলিত গদ্যের পথিকৃৎ। তিনি ১৮৬৮ সালের ৭ই আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সাহিত্যিক ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’।
১৯০২ সালে ‘বীরবলের হালখাতা’ নামক গ্রন্থটি ভারতী পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথমবারের মতো চলিত গদ্যরীতি প্রবর্তন করেন।
এছাড়াও, তিনি বাংলা কাব্য সাহিত্যে ইতালীয় সনেটের ধারাকে প্রথম বারে পরিচয় করিয়েছেন। প্রমথ চৌধুরী ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য রচিত কাব্যগ্রন্থসমূহ
-
সনেট পঞ্চাশৎ
-
পদচারণ
গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ
-
তেল নুন লকড়ি
-
বীরবলের হালখাতা
-
নানাকথা
-
আমাদের শিক্ষা
-
রায়তের কথা
-
নানাচর্চা
-
আত্মকথা
-
প্রবন্ধসংগ্রহ ইত্যাদি
গল্পগ্রন্থ
-
চার ইয়ারী কথা
-
আহুতি
-
নীললোহিত
প্রমথ চৌধুরীর কিছু প্রখ্যাত উক্তি
-
সুশিক্ষিত ব্যক্তি নিজে থেকেই শিক্ষিত হয়ে ওঠে।
-
ভাষা মানুষ থেকে কলমে আসে, কিন্তু কলম থেকে মানুষকে ভাষায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
-
আনন্দের প্রকৃতি হলো সংক্রামকতা।
-
সাহিত্যে মানবতা লুকানো থাকে এবং সেই আনন্দ উপভোগ করা হয়।
-
খেলার মধ্যে যদি আনন্দ না থাকে, তবে সেটি খেলা নয়, বরং জুয়া।
-
যে জাতি যত বেশি দুঃখ পায়, সে জাতি তত বেশি নিস্তেজ হয়।
তথ্যসূত্র: ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ (ড. সৌমিত্র শেখর) এবং ‘প্রথম আলো’।
0
Updated: 3 months ago