মুনীর চৌধুরী শহীদ হন কোন সালে?
A
১৯৬৮
B
১৯৬৯
C
১৯৭০
D
১৯৭১
উত্তরের বিবরণ
বাংলা সাহিত্য, নাটক ও শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের একজন। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত অধ্যাপক, নাট্যকার, ভাষা সৈনিক ও সংস্কৃতিসেবী। তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশ জাতীয় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি ১৯৭১ সালে শহীদ হন, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে দেশকে মেধাশূন্য করার উদ্দেশ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
-
মুনীর চৌধুরীর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, মানিকগঞ্জে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন, পরে বাংলা বিভাগেও অধ্যয়ন করেন।
-
তিনি ছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী, ভাষার অধিকারের দাবিতে কারাবন্দীও হন। কারাগারে বসেই তিনি রচনা করেন বিখ্যাত নাটক “কবর”, যা পরবর্তীতে বাংলা নাট্যসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়।
-
মুনীর চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, যিনি শিক্ষার্থীদের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা, মুক্তচিন্তা ও মানবতার পাঠ দিতেন।
-
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশের স্বাধীনতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন এবং বুদ্ধিজীবী মহলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
-
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, মুক্তিযুদ্ধের ঠিক দুই দিন আগে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী রাজাকার বাহিনী তাঁকে তাঁর ঢাকার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়।
-
তাঁকে আর জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়নি; যুদ্ধশেষে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে অন্যান্য শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাঁর দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।
-
তাঁর হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মেধাবী ও মুক্তচিন্তার মানুষদের ধ্বংস করা, যাতে স্বাধীন দেশের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে।
-
মুনীর চৌধুরী ছিলেন একাধারে নাট্যকার, সমালোচক, অনুবাদক ও শিক্ষাবিদ। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে আছে “রক্তাক্ত প্রান্তর”, “চেতনা”, “দণ্ডকারণ্য” প্রভৃতি।
-
তাঁর লেখায় সমাজ, রাজনীতি ও মানবতার গভীর বিশ্লেষণ রয়েছে; বিশেষ করে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে অদম্য প্রতিবাদী চেতনা প্রকাশ করেছেন।
-
তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক (১৯৮০) ও স্বাধীনতা পুরস্কার (২০২১) প্রদান করে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মুনীর চৌধুরী ১৯৭১ সালে শহীদ হন, যেদিন পাকিস্তানি সেনারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর জীবন ও মৃত্যু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিরস্মরণীয়।
0
Updated: 4 days ago
’'জমিদার দর্পন" নাটকে ট্র্যাজেডির গভীরতা ফুটে উঠেনি কারণ-
Created: 2 weeks ago
A
কাহিনী একমুখি ও সংলাপ রিপোর্টধর্মী
B
চরিত্রের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব অনুপস্থিত
C
নাট্যকারের শৈল্পিক নিরাশক্তির অভাব
D
উপরের তিনটিই সত্যি
মুনীর চৌধুরির মতে, এই দর্পণে একটি বিশেষ প্রকৃতির বর্বরোচিত অত্যাচারের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে, যা সম্ভবত অবিকলভাবে প্রতিবর্ণিত হয়েছে। তবে, এটি শিল্পমাধ্যমে পুরোপুরি রূপান্তরিত বা নান্দনিকভাবে আবদ্ধ হয়নি।
0
Updated: 2 weeks ago
মুনীর চৌধুরীর অনূদিত নাটক কোনটি?
Created: 2 months ago
A
কবর
B
চিঠি
C
রক্তাক্ত প্রান্তর
D
মুখরা রমণী বশীকরণ
মুনীর চৌধুরীর নাটক ও অনুবাদ
১. মুখরা রমণী বশীকরণ:
-
মুনীর চৌধুরী উইলিয়াম শেক্সপিয়রের The Taming of The Shrew নাটকটি অনুবাদ করে বাংলা ভাষায় উপস্থাপন করেছেন মুখরা রমণী বশীকরণ (১৯৭০)।
-
এটি পাঁচ অঙ্ক বিশিষ্ট একটি কমেডি নাটক।
-
গল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ: পদুয়া শহরের ধনী দুই কন্যা, ক্যাথেরিনা এবং বিয়াঙ্কা। ক্যাথেরিনা তীক্ষ্ণ ও মুখর, আর বিয়াঙ্কা খুব সুন্দরী। ভেরোনা শহরের যুবক পেট্রুশিও ক্যাথেরিনার অহংকার ভেঙে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
-
মুনীর চৌধুরীর নিজের মন্তব্য অনুযায়ী, নাটকের কাহিনী স্থুল হলেও হাস্যরসটি সতেজ, সরস ও আনন্দদায়ক।
২. কবর নাটক:
-
মার্কিন নাট্যকার ইরভিন শ’র Bury The Dead নাটক থেকে প্রেরণা নিয়ে, বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘কবর’ নাটক রচিত হয়েছে।
-
মূল থিমটি অনুকরণ হলেও, ‘কবর’ একটি অনুবাদ নাটক নয়।
-
নাটকে সমাধি থেকে মানুষের আত্মার পুনরুত্থান ঘটার ঘটনার অনুকরণ আছে, যা মূল Bury The Dead নাটকে দেখা যায়।
৩. মুনীর চৌধুরীর জীবন ও সৃজন:
-
মুনীর চৌধুরী (জন্ম: ২৭ নভেম্বর ১৯২৫, মানিকগঞ্জ) ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক ও বাগ্মী।
-
শিক্ষা ও কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
৪. মুনীর চৌধুরীর নাটকসমূহ:
-
মৌলিক নাটক: রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, কবর, দণ্ডকারণ্য
-
অনুবাদ নাটক: কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমণী বশীকরণ
উৎস: ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, বাংলাপিডিয়া।
0
Updated: 2 months ago
'ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ'- কে বলেছেন?
Created: 3 days ago
A
ড. নীলিমা ইব্রাহিম
B
ড. আহম্মদ শরীফ
C
মুনীর চৌধুরী
D
ড. মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
উ. মুনীর চৌধুরী
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে মুনীর চৌধুরী ছিলেন গভীর চিন্তাশীল এক মনীষী। তাঁর বিখ্যাত উক্তি "ষোল নয়, আমার মাতৃভাষার ষোলশত রূপ" বাংলা ভাষার বহুমাত্রিকতা ও বৈচিত্র্যের প্রতীক। তিনি এই উক্তির মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাংলা ভাষা কেবল একটি নির্দিষ্ট রূপে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর রয়েছে অসংখ্য ধ্বনি, উপভাষা ও প্রকাশভঙ্গি।
এই উক্তির মূল বক্তব্য হলো, মাতৃভাষা কোনো যান্ত্রিক বা একঘেয়ে মাধ্যম নয়। এটি মানুষের অনুভূতি, চিন্তা, সংস্কৃতি ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত ও প্রসারিত হয়। মুনীর চৌধুরীর মতে, বাংলা ভাষার সৌন্দর্য এর বৈচিত্র্যের মধ্যেই নিহিত।
ভাষার এই বৈচিত্র্য প্রকাশ পায় শব্দের উচ্চারণ, শব্দভাণ্ডার, বাক্যগঠন এবং আঞ্চলিক ব্যবহারে। গ্রামীণ ও শহুরে ভাষার পার্থক্য, সাহিত্যিক ও কথ্য ভাষার ভিন্নতা—সবই এই ভাষার প্রাণচাঞ্চল্যের প্রমাণ।
তিনি আরও মনে করতেন, ভাষার শক্তি তখনই প্রকৃত অর্থে প্রকাশ পায় যখন তা সব শ্রেণি ও অঞ্চলের মানুষের মুখে জীবন্ত থাকে। তাই তিনি বাংলা ভাষার উপভাষা, আঞ্চলিক রূপ এবং লোকজ উচ্চারণের মূল্যায়ন করেছেন। এই ধারণা বাংলা ভাষাকে কৃত্রিম সীমারেখা থেকে মুক্ত করে একটি বহুমাত্রিক মানবিক প্রকাশের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
মুনীর চৌধুরীর ভাষা-ভাবনায় দেখা যায় যে, তিনি বাংলা ভাষাকে কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখেছেন। তাঁর মতে, মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানে কেবল তার সাহিত্য পড়া নয়, বরং তার প্রতিটি রূপ ও প্রকাশকে শ্রদ্ধা করা।
এই দৃষ্টিভঙ্গি ভাষার একরূপতার ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। তিনি দেখিয়েছেন যে, একটি ভাষার শক্তি তার শব্দভাণ্ডারের আকারে নয়, বরং তার পরিবর্তন ও অভিযোজনক্ষমতায়। এভাবেই বাংলা ভাষা বিভিন্ন যুগে, অঞ্চলে এবং মানুষের অভিজ্ঞতায় নতুন নতুন রূপ ধারণ করেছে—যা একে জীবন্ত ও চিরন্তন করে তুলেছে।
অতএব, মুনীর চৌধুরীর উক্তিটি বাংলা ভাষার বৈচিত্র্য, গতিশীলতা ও সার্বজনীনতার এক অনন্য ঘোষণা, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—একটি ভাষার সৌন্দর্য তার বহুরূপীতায়, একরূপতায় নয়।
0
Updated: 3 days ago