'একাত্তরের দিনগুলি' গ্রন্থের রচয়িতা কে?
A
শাহরিয়ার কবির
B
সুফিয়া কামাল
C
জাহানারা ইমাম
D
সেলিনা হোসেন
উত্তরের বিবরণ
‘একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক হৃদয়স্পর্শী ও বাস্তবভিত্তিক দিনলিপি, যার রচয়িতা জাহানারা ইমাম। তিনি এই গ্রন্থে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মানসিক সংগ্রাম এবং জাতির বেদনাময় বাস্তবতাকে অকপটে তুলে ধরেছেন। বইটি মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ইতিহাসের একটি অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।
গ্রন্থটির মূল বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব:
এই গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে একজন সাধারণ নাগরিকের জীবনযাপন, ভয়, আশা ও সংগ্রাম নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে।
জাহানারা ইমাম একজন মা হিসেবে তাঁর পুত্র রুমির শহিদ হওয়ার ঘটনা যেমন গভীর মমতায় বর্ণনা করেছেন, তেমনি দেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর অদম্য আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ করেছেন।
‘একাত্তরের দিনগুলি’ শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বাস্তব নথি, যেখানে যুদ্ধের মানবিক দিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট একসঙ্গে প্রতিফলিত হয়েছে।
বইটির ভাষা সরল হলেও আবেগ ও বাস্তবতার গভীরতা পাঠককে নাড়া দেয়। যুদ্ধকালীন সময়ের প্রতিটি দিনের ভয়াবহতা, বেদনা ও আশা এই গ্রন্থে অনবদ্যভাবে ফুটে উঠেছে।
গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর এটি মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্যিক দলিল হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃতি পায় এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলে।
জাহানারা ইমাম এই গ্রন্থের মাধ্যমে শুধু এক লেখক হিসেবেই নয়, বরং একজন “মাতৃসত্তার প্রতীক” হিসেবে বাঙালি জাতির ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন।
সুতরাং, ‘একাত্তরের দিনগুলি’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সত্যনিষ্ঠ বয়ান, যেখানে ইতিহাস, আবেগ ও মানবতার মিলনে এক অমর সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে।
উ. গ) জাহানারা ইমাম
0
Updated: 4 days ago
'বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন' এর রচয়িতা -
Created: 3 days ago
A
মুনীর চৌধুরী
B
মুহম্মদ আব্দুল হাই
C
আবুল মনসুর আহমদ
D
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ
উত্তর: খ) মুহম্মদ আব্দুল হাই
‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ গ্রন্থটির রচয়িতা মুহম্মদ আব্দুল হাই। এটি একটি ভ্রমণকাহিনি, যেখানে লেখক তাঁর বিদেশযাত্রার অভিজ্ঞতা সাহিত্যিকভাবে তুলে ধরেছেন। বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণবিষয়ক লেখার ধারায় এটি এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন, যা কেবল একটি ভ্রমণের বিবরণ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মানসিক অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবি।
গ্রন্থটির মূল বিষয় হলো লেখকের ইংল্যান্ডে অবস্থানকালীন জীবন, শিক্ষা, সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর পর্যবেক্ষণ। তিনি সেখানে কাটিয়েছেন প্রায় সাড়ে সাতশ দিন, সেই সময়ের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করেছেন।
লেখাটির বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
-
এতে বিদেশি সংস্কৃতি ও বাঙালি মানসিকতার পার্থক্য সূক্ষ্মভাবে চিত্রিত হয়েছে। লেখক তুলনামূলক দৃষ্টিতে পশ্চিমা জীবনধারা ও বাঙালি সমাজের সীমাবদ্ধতা ব্যাখ্যা করেছেন।
-
ভাষা ও শৈলীতে রয়েছে হাস্যরস, রসিকতা ও সূক্ষ্ম ব্যঙ্গ। এতে লেখকের ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিদীপ্ততা ও সাহিত্যিক পরিপক্বতা প্রকাশ পেয়েছে।
-
বইটিতে বিদেশি সমাজের প্রতি অবজারভেশনধর্মী বিশ্লেষণ পাওয়া যায়; তিনি কোনো কিছু অন্ধভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান করেননি, বরং যুক্তিনির্ভরভাবে বিচার করেছেন।
-
এটি শুধু একটি ভ্রমণকাহিনি নয়; এতে আত্মপ্রতিকৃতি, শিক্ষা ও মানবসম্পর্কের বিশ্লেষণও বিদ্যমান।
-
লেখক বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিদেশি প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করে জাতীয় পরিচয়ের প্রশ্নও উত্থাপন করেছেন।
-
‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’-এর ভাষা পরিশীলিত, কিন্তু সহজবোধ্য। লেখক তাঁর অভিজ্ঞতাকে এমনভাবে প্রকাশ করেছেন যে পাঠক মনে করে, সে নিজেও যেন সেই অভিজ্ঞতার অংশ।
মুহম্মদ আব্দুল হাই ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিশারদ ও সাহিত্যসমালোচক। তিনি বাংলা সাহিত্যে যুক্তিবাদ, সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচারক হিসেবে পরিচিত। তাঁর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে রয়েছে ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’ (সহলেখক), ‘ভাষা ও সাহিত্য’, ‘প্রবন্ধসংগ্রহ’ প্রভৃতি।
সব মিলিয়ে, ‘বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন’ কেবল একটি ভ্রমণকাহিনি নয়, এটি এক বুদ্ধিদীপ্ত সাহিত্য-ভ্রমণ, যেখানে একজন বাঙালি বুদ্ধিজীবীর চোখে বিদেশি সমাজ, সংস্কৃতি ও মানবজীবনের বহুমাত্রিক রূপ ধরা পড়েছে। এ কারণেই গ্রন্থটি বাংলা ভ্রমণসাহিত্যের এক ক্লাসিক হিসেবে বিবেচিত।
0
Updated: 3 days ago
“পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল“ পঙ্খক্তির রচয়িতা -
Created: 1 week ago
A
রামনারায়ণ তর্করত্ন
B
বিহারীলাল চক্রবর্তী
C
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
D
মদনমোহন তর্কালংকার
এই পঙক্তিটি উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট গদ্যকার ও কবি মদনমোহন তর্কালংকারের রচনা। তিনি ছিলেন বাংলা নবজাগরণের প্রাথমিক যুগের একজন অগ্রণী সাহিত্যিক, যিনি প্রাচীন ও আধুনিক ভাবধারার মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করেন। “পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল” পঙক্তিটি তাঁর সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রকৃতি, সমাজ ও নৈতিক জাগরণের এক প্রতীকী চিত্র প্রকাশ করে।
এই পঙক্তির মাধ্যমে তিনি মানুষের মনন ও সমাজজীবনের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটি কেবল একটি প্রকৃতিবিষয়ক বর্ণনা নয়, বরং গভীর দার্শনিক অর্থ বহন করে—যেখানে ‘রাতি পোহাইল’ মানে অজ্ঞানতার অবসান এবং ‘পাখির রব’ মানে নবজাগরণের সূচনা।
ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায়—
• মদনমোহন তর্কালংকার ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথমদিকের আধুনিক গদ্যরচয়িতাদের একজন। তাঁর রচনায় সমাজসংস্কার, মানবপ্রেম ও জাতীয় চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়।
• “পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল” পঙক্তিটি প্রতীকধর্মী। এখানে ‘পাখি’ বোঝায় জাগ্রত মানুষ, যারা আলোর আহ্বান জানায়; আর ‘রাতি’ বোঝায় অজ্ঞতা, নিদ্রা বা পশ্চাৎপদতার সময়।
• এই লাইনটি মূলত মানবমনের জাগরণের আহ্বান। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সময় এসেছে ঘুম থেকে জেগে উঠার, কর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার।
• উক্ত পঙক্তি বাংলা নবজাগরণের সাহিত্যিক ভাষায় এক নবচেতনার প্রকাশ—যা মানুষের ভেতরের অন্ধকার দূর করে সমাজে প্রগতির আলো ছড়ানোর আহ্বান জানায়।
• সাহিত্যিক হিসেবে মদনমোহন তর্কালংকার সমাজে যুক্তিবাদী চিন্তা ও সংস্কারবিরোধী চেতনা ছড়িয়েছিলেন। তাঁর রচনাগুলোতে দেখা যায় নৈতিক জাগরণ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শিক্ষার গুরুত্বের উপর জোর।
• এই পঙক্তি শুধু সাহিত্য নয়, তৎকালীন সমাজের মানসিক অবস্থার প্রতিফলনও বটে—যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে কুসংস্কার ত্যাগ করে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
• “রাতি পোহাইল” শব্দবন্ধের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, অন্ধকারের পরেই আসে নতুন ভোর, অর্থাৎ দুর্দশার পরেই মুক্তির সম্ভাবনা।
• এই পঙক্তি তাই যুগচেতনার প্রতীক—যা বাংলার রেনেসাঁ যুগের আত্মপ্রকাশের মূর্ত প্রতিচ্ছবি।
সার্বিকভাবে, মদনমোহন তর্কালংকারের এই লাইনটি শুধু কবিত্বের সৌন্দর্য নয়, বরং এক মানবিক ও আলোকিত সমাজের আহ্বান। তাঁর এই পঙক্তি বাংলা সাহিত্যে চিরন্তন বার্তা হিসেবে বিবেচিত—অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
0
Updated: 1 week ago
‘মানবজীবন', 'মহৎজীবন', 'উন্নতজীবন' -প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা-
Created: 4 months ago
A
এস ওয়াজেদ আলী
B
এয়াকুব আলী চৌধুরী
C
মোঃ লুৎফর রহমান
D
মোঃ ওয়াজেদ আলী
‘মানবজীবন', 'মহৎজীবন', 'উন্নতজীবন' -মোহাম্মদ লুৎফর রহমান রচিত গ্রন্থ।
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ১৮৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন মাগুরা জেলার পারনান্দুয়ালি গ্রামে। তিনি ডাক্তার হিসেবে পেশাগত জীবনে যুক্ত থাকলেও সাহিত্য ও সমাজসেবায় ছিলেন সমানভাবে সক্রিয়। সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড ও মানবিক মূল্যবোধসমৃদ্ধ রচনার জন্য তিনি ‘ডাক্তার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান’ নামে সমধিক পরিচিত।
সমাজ সংস্কারে অবদান
-
১৯২২ সালে কলকাতায় পতিতা নারীদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন একটি মানবিক সংগঠন — ‘নারীতীর্থ’।
-
এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া (১৮৮০–১৯৩৬) এবং সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ লুৎফর রহমান নিজে।
-
‘নারীতীর্থ’-এর মুখপত্র হিসেবে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় মাসিক পত্রিকা ‘নারীশক্তি’, যার প্রথম সংখ্যা বের হয় বাংলা ১৩২৯ সনে।
-
এ পত্রিকাটি মোট ছয়টি সংখ্যা প্রকাশ করে।
সাহিত্যকর্ম
জীবনমুখী রচনা:
মোহাম্মদ লুৎফর রহমান মানুষের নৈতিক ও আত্মিক উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়ে একাধিক জীবনধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলো হলো—
-
মহৎ জীবন
-
মানবজীবন
-
সত্য জীবন
-
উচ্চ জীবন
-
ধর্ম জীবন
-
মহাজীবন
-
যুবকজীবন
উপন্যাস ও নৈতিক কাহিনি:
-
সরলা
-
পথহারা
-
রায়হান
-
প্রীতি-উপহার
-
বাসর-উপহার
শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা:
তরুণ প্রজন্মের চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে তিনি শিশুকিশোরদের উপযোগী বইও লিখেছেন, যেমন—
-
ছেলেদের মহত্ত্বকথা
-
ছেলেদের কারবালা
-
রানী হেলেন
তথ্যসূত্রঃ এই জীবনী ও গ্রন্থতালিকা সংকলিত হয়েছে বাংলাপিডিয়া-র তথ্যভাণ্ডার থেকে।
0
Updated: 4 months ago