'বিদ্রোহী' কবিতাটি কোন কাব্যের অন্তর্ভুক্ত
A
অগ্নিবীণা
B
বিষের বাঁশী
C
ফনিমনসা
D
সিন্ধু হিন্দোল
উত্তরের বিবরণ
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অমর প্রতিভা, যিনি তাঁর কবিতা, গান ও লেখনীর মাধ্যমে বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা ও প্রতিবাদের ভাষা তৈরি করেছিলেন। তাঁর রচিত ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি এমনই এক সৃষ্টি, যা তাঁকে চিরকাল ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই বিখ্যাত কবিতাটি ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের অন্তর্ভুক্ত।
‘অগ্নিবীণা’ কাব্যটি নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, যা ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয়। এতে তাঁর অন্তরের তেজ, সামাজিক অসাম্যবিরোধী চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। নিচে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো—
-
‘বিদ্রোহী’ কবিতা ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে রচনা করা হয় এবং ১৯২২ সালে ‘বিজলী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সাহিত্যজগতে এক ঝড় তোলে।
-
কবিতায় কবি নিজেকে অসীম শক্তির প্রতীক, প্রলয় ও সৃজনের নায়ক, এবং মানবমুক্তির বার্তাবাহক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।
-
‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো তার বিপ্লবী সুর ও অগ্নিময় ভাষা। এতে কবি একদিকে ধ্বংসের আহ্বান জানালেও অন্যদিকে নতুন সৃষ্টির বার্তাও দিয়েছেন।
-
এই কবিতায় হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট—সব ধর্মের প্রতীক ও দেবদেবীর নাম এসেছে এক মহাসংলাপে, যা নজরুলের মানবতাবাদী ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মনোভাব প্রকাশ করে।
-
কবি বলেছেন, তিনি একাধারে সৃষ্টি ও সংহার, প্রেম ও ক্রোধ, মানব ও দেবতা—এই দ্বৈত সত্তার ধারক। এই দ্বন্দ্বই তাঁকে বিদ্রোহী করেছে।
-
কবিতার ছন্দ ও গঠনশৈলীতে আছে এক অদম্য শক্তি ও তেজ। শব্দের ব্যবহারে তিনি সৃষ্টি করেছেন এক অগ্নিময় ছন্দধারা, যা পাঠকের রক্তে উচ্ছ্বাস জাগায়।
-
‘বিদ্রোহী’ কবিতার মাধ্যমে নজরুল শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক বিদ্রোহের প্রতীক হয়ে ওঠেন। তিনি অবিচার, দাসত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণের ডাক দেন।
-
এই কবিতার ভাবধারায় ইউরোপীয় রোমান্টিক কবি পার্সি বিশি শেলি ও উইলিয়াম ব্লেকের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, তবে নজরুলের নিজস্ব অভিব্যক্তি ও বিপ্লবী চেতনা একে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
-
কবিতাটির শক্তি, গতি ও অনুভূতির গভীরতা এমন যে, এটি বাংলা সাহিত্যে বিপ্লব ও মুক্তির প্রতীক হিসেবে স্থায়ী হয়ে গেছে।
সবশেষে বলা যায়, ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের প্রাণকেন্দ্র, যা কাজী নজরুল ইসলামকে কেবল একজন কবি নয়, বরং এক যুগের জাগরণ-দূত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
0
Updated: 4 days ago
২) 'কৃষাণের গান' কবিতার রচয়িতা কে?
Created: 2 months ago
A
বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন
B
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
C
কাজী নজরুল ইসলাম
D
জসীম উদ্দীন
কৃষাণের গান
রচয়িতা: কাজী নজরুল ইসলাম
বিষয়বস্তু:
-
কবিতাটি নজরুলের বিদ্রোহী সুর এবং শোষিত-বঞ্চিত কৃষক সমাজের প্রতি সহানুভূতির প্রকাশ।
-
এটি কৃষকদের দুর্দশা, শোষণ, এবং তাদের প্রতিরোধের আহ্বান তুলে ধরে।
-
কবিতার বিষয়বস্তু নজরুলের বিপ্লবী ও সমাজচেতনামূলক কাব্যশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
'সর্বহারা' কাব্যগ্রন্থে বিপ্লবী কবি নজরুলের কবিতা (মোট ১০টি):
১. সর্বহারা
২. কৃষাণের গান
৩. শ্রমিকের গান
৪. ধীবরদের গান
৫. ছাত্রদলের গান
৬. কাণ্ডারী হুশিয়ার
৭. ফরিয়াদ
৮. আমার কৈফিয়ত
৯. প্রার্থনা
১০. গোকুল নাগ
কৃষাণের গান (উদ্ধৃতাংশ)
ওঠ রে চাষি জগদ্বাসী ধর কষে লাঙল।
আমরা মরতে আছি – ভালো করেই মরব এবার চল॥
মোদের উঠান-ভরা শস্য ছিল হাস্য-ভরা দেশ
ওই বৈশ্য দেশের দস্যু এসে লাঞ্ছনার নাই শেষ,
ও ভাই লক্ষ হাতে টানছে তারা লক্ষ্মী মায়ের কেশ,
আজ মা-র কাঁদনে লোনা হল সাত সাগরের জল॥
ও ভাই আমরা ছিলাম পরম সুখী, ছিলাম দেশের প্রাণ
তখন গলায় গলায় গান ছিল ভাই, গোলায় গোলায় ধান,
আজ কোথায় বা সে গান গেল ভাই কোথায় সে কৃষাণ?
ও ভাই মোদের রক্ত জল হয়ে আজ ভরতেছে বোতল।
আজ চারদিক হতে ধনিক বণিক শোষণকারীর জাত
ও ভাই জোঁকের মতন শুষছে রক্ত, কাড়ছে থালার ভাত,
মোর বুকের কাছে মরছে খোকা, নাইকো আমার হাত।
আর সতী মেয়ের বসন কেড়ে খেলছে খেলা খল॥
উৎস: ‘সর্বহারা’ কাব্যগ্রন্থ
0
Updated: 2 months ago
কোনটি কাব্যগ্রন্থ?
Created: 3 months ago
A
কবিতা
B
কাব্য পরিক্রমা
C
কয়েকটি কবিতা
D
বাঙলার কাব্য
সমর সেন ও 'কয়েকটি কবিতা': আধুনিক বাংলা কাব্যের এক উজ্জ্বল নাম
বাংলা আধুনিক কবিতার জগতে এক অনন্য নাম সমর সেন। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৬ সালের ১০ অক্টোবর, কলকাতার বাগবাজারে। সাহিত্যিক পরিবারে জন্ম নেওয়া সমর সেনের রক্তে ছিল সাহিত্য-ভাবনার ধারা; তাঁর পিতামহ ছিলেন প্রখ্যাত গবেষক দীনেশচন্দ্র সেন।
কবিতায় তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে এক নতুন ধারা নিয়ে, যেখানে নাগরিক জীবনের বাস্তবতা ও সমাজমনস্ক ভাবনার ছাপ স্পষ্ট। এ কারণে তাঁকে "আধুনিক নাগরিক কবি" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সমর সেন কখনোই রোমান্টিকতার মোহে আবদ্ধ ছিলেন না; তিনি নিজেই বলেছিলেন—
"আমি রোমান্টিক কবি নই, আমি মার্ক্সিস্ট"। এই উক্তি থেকেই বোঝা যায়, সমাজ ও রাজনীতির প্রতি তাঁর গভীর দৃষ্টিভঙ্গি এবং মার্কসবাদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা।
তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘কয়েকটি কবিতা’ প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। এটি বাংলা কবিতার ভুবনে এক নতুন পথচলার সূচনা করে। এই কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতার বইগুলো হলো:
-
গ্রহণ ও অন্যান্য কবিতা
-
নানাকথা
-
খোলাচিঠি
-
তিন পুরুষ
-
সমর সেনের কবিতা
গদ্য সাহিত্যে তাঁর অবদানও কম নয়। তাঁর রচিত ‘বাবু বৃত্তান্ত’ গদ্যগ্রন্থটি বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
সম্পাদনা জীবনেও সমর সেন রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তিনি ছিলেন ‘ফ্রন্টিয়ার’ (Frontier) ও ‘নাও’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এই পত্রিকাগুলোর মাধ্যমে তিনি সাহিত্য ও সমাজ ভাবনার একটি নতুন দিক উন্মোচন করেন।
অন্যদিকে বাংলা কাব্যচর্চার প্রসঙ্গ এলে স্মরণে আসে আরও কিছু বিশিষ্ট গ্রন্থ ও পত্রিকার নাম:
-
হুমায়ুন কবির রচিত কাব্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ: ‘বাঙলার কাব্য’
-
অজিতকুমার চক্রবর্তী রচিত গ্রন্থ: ‘কাব্য পরিক্রমা’
-
এবং বাংলা সাহিত্যের আলোচিত একটি পত্রিকা ‘কবিতা’, যা ছিল একটি ত্রৈমাসিক কবিতাবিষয়ক পত্রিকা। এর প্রথম প্রকাশ হয় ১ অক্টোবর ১৯৩৫ (আশ্বিন ১৩৪২), যার সম্পাদনায় ছিলেন বুদ্ধদেব বসু ও প্রেমেন্দ্র মিত্র।
তথ্যসূত্র:
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর
-
বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 3 months ago
কোনটি বন্দে আলী মিয়া রচিত কাব্যগ্রন্থ?
Created: 2 months ago
A
অরণ্য গোধূলি
B
রূপকথা
C
ময়নামতির চর
D
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
বন্দে আলী মিয়া
-
তিনি একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রকর ছিলেন।
-
জন্ম: ১৯০৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর, পাবনা জেলার রাধানগর গ্রামে।
-
পাবনার মজুমদার একাডেমি থেকে এন্ট্রান্স (১৯২৩) পাশ করে কলকাতার ইন্ডিয়ান আর্ট একাডেমিতে চিত্রবিদ্যায় (১৯২৭) শিক্ষালাভ করেন।
তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ
-
ময়নামতির চর
-
অনুরাগ
-
পদ্মানদীর চর
-
মধুমতীর চর
-
ধরিত্রী
তাঁর রচিত উপন্যাস
-
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
-
শেষ লগ্ন
-
অরণ্য গোধূলি
-
নীড়ভ্রষ্ট
তাঁর রচিত শিশুতোষ গ্রন্থ
-
চোর জামাই
-
মৃগপরী
-
ডাইনী বউ
-
রূপকথা
-
কুঁচবরণ কন্যা
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলাপিডিয়া
0
Updated: 2 months ago