‘পরিশেষ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের কাব্যে যে গভীর বিষাদ, অতীতস্মৃতিচারণ, পারিপার্শ্বিক খুঁটিনাটির প্রতি মমত্ব, কাব্যের অলঙ্করণে নির্মোহতা এবং জীবনের প্রতি আকর্ষণ ও বিমুক্তির দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়েছে, তা এই গ্রন্থেও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত। গ্রন্থটি তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও গীতিকার অতুলপ্রসাদ সেনকে উৎসর্গ করেন।
কোন কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন?
A
মানসী
B
সোনার তরী
C
ক্ষনিকা
D
গীতাঞ্জলি
উত্তরের বিবরণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিশ্বসাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা, যিনি তাঁর কবিতা, গান, গল্প ও চিন্তাধারার মাধ্যমে মানবতার সার্বজনীন বার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্যকর্ম শুধু বাংলার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনেও আলো ছড়িয়েছেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মূল কারণ ছিল তাঁর এমন এক কাব্যগ্রন্থ, যা মানবমনের গভীর অনুভূতি, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও বিশ্বমানবতার এক অনুপম সংলাপ সৃষ্টি করেছিল।
এই কাব্যগ্রন্থটির নাম “গীতাঞ্জলি” (Gitanjali), যার ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এটি মূলত তাঁর লেখা বাংলার ১৫৭টি গানের মধ্যে থেকে বাছাই করা ১০৩টি কবিতার ইংরেজি সংকলন। নিচে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো—
-
গীতাঞ্জলি শব্দের অর্থ “গান বা কবিতার নিবেদন”। এটি কবির হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত এক আধ্যাত্মিক প্রার্থনা, যেখানে মানুষ ও সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ককে অনুভূতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
-
এই কাব্যে কবি মানুষ ও ঈশ্বরের মধ্যে এক চিরন্তন যোগসূত্র খুঁজেছেন। তাঁর কবিতায় ঈশ্বর মানে শুধু ধর্মীয় ধারণা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি রূপে নিহিত এক সর্বব্যাপী শক্তি।
-
১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই “Gitanjali” কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এটি ছিল সাহিত্যে নোবেলজয়ী প্রথম এশীয় সাহিত্যকর্ম।
-
গীতাঞ্জলির কবিতাগুলো সরল ভাষায় লেখা হলেও তাতে গভীর দার্শনিক ভাবনা রয়েছে। কবির কণ্ঠে এখানে শোনা যায় ভক্তির গান, প্রেমের আবেগ, প্রকৃতির সৌন্দর্য, এবং মানবমুক্তির তত্ত্ব।
-
বইটির ইংরেজি ভূমিকা লেখেন ডব্লিউ. বি. ইয়েটস, যিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতার আধ্যাত্মিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর প্রশংসায় গীতাঞ্জলি দ্রুতই ইউরোপে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
-
গীতাঞ্জলির কবিতাগুলো বিশ্বমানবতার এক প্রতীক, যেখানে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা ভাষার কোনো সীমানা নেই। এই সার্বজনীনতার কারণেই এটি পশ্চিমা সাহিত্যসমাজেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
-
গীতাঞ্জলির প্রতিটি কবিতা যেন এক একটি প্রার্থনা বা আত্মসমর্পণের সুর। কবি এখানে নিজের অহং ত্যাগ করে মানবপ্রেম ও ঈশ্বরভক্তিকে একাকার করেছেন।
-
রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “যে প্রেমের মধ্যে ঈশ্বর আছেন, সেই প্রেমই মানুষের মুক্তি।” গীতাঞ্জলির প্রতিটি পংক্তিতে এই দর্শন গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
-
এই কাব্যের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকে দেখিয়েছেন পূর্ব ও পশ্চিমের ভাবজগতের এক চমৎকার সেতুবন্ধন, যা পরবর্তীতে তাঁকে “বিশ্বকবি” উপাধি এনে দেয়।
সব মিলিয়ে, “গীতাঞ্জলি” শুধুমাত্র একটি কাব্য নয়; এটি ছিল এক আধ্যাত্মিক যাত্রা, যা মানবমনের গভীর অনুভূতিকে বিশ্বচেতনায় রূপান্তরিত করেছিল। সেই কারণেই এই কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
0
Updated: 4 days ago
Related MCQ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'পরিশেষ' কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?
Created: 1 month ago
A
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
B
রাজশেখর বসু
C
অতুলপ্রসাদ সেন
D
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
0
Updated: 1 month ago
স্বদেশি আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত উপন্যাস কোনটি?
Created: 1 month ago
A
ঘরে-বাইরে
B
প্রায়শ্চিত্ত
C
গোরা
D
বিষবৃক্ষ
‘ঘরে-বাইরে’ উপন্যাস হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চলিত ভাষায় লেখা প্রথম উপন্যাস, যা প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে।
-
উপন্যাসটির পটভূমি: স্বদেশি আন্দোলন।
-
পাশ্চাত্য ঔপন্যাসিক স্টিভেনসনের ‘প্রিন্স অটো’ উপন্যাসের সাথে ভাবসাদৃশ্য রয়েছে।
-
স্টিভেনসনের চরিত্র সেরাফিনা, অটো ও গোনড্রেমাক যথাক্রমে রবীন্দ্রনাথের বিমলা, নিখিলেশ ও সন্দীপ-এর প্রতিসম।
-
তবে স্টিভেনসনের উপস্থাপনা ব্যঙ্গাত্মক ও মিলনাত্মক, আর রবীন্দ্রনাথের কাহিনী সকরুণ ও সিরিয়াস।
উল্লেখযোগ্য চরিত্রসমূহ:
-
বিমলা
-
নিখিলেশ
-
সন্দীপ
অন্য উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ:
-
‘গোরা’ উপন্যাস: ধর্মান্দোলন, স্বদেশপ্রেম ও নারীমুক্তি চিন্তার পটভূমিতে লেখা।
-
‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটক: রবীন্দ্রনাথের শেষ মানভূমিক নাটক, টলস্টয়ের নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নীতি ও গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনের পূর্বাভাস পাওয়া যায়।
-
‘বিষবৃক্ষ’: বঙ্কিমচন্দ্র রচিত উপন্যাস, যেখানে বিধবা বিবাহ, পুরুষের একাধিক বিবাহ, নারীর আত্মসম্মান ও অধিকারবোধ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
0
Updated: 1 month ago
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত নাটক-
Created: 3 weeks ago
A
ডাকঘর
B
বাল্মীকি প্রতিভা
C
অচলায়তন
D
রক্তকরবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং সমাজ-সংস্কারক।
-
জন্ম: ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ), কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে।
-
নোবেল পুরস্কার: ১৯১৩ সালে Song Offerings (গীতাঞ্জলি অবলম্বনে) গ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
-
ডক্টরেট: ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট উপাধি লাভ করেন।
-
মৃত্যু: ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮), জোড়াসাঁকোর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
-
প্রথম প্রকাশিত কবিতা: হিন্দুমেলার উপহার
-
প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: কবি-কাহিনী
-
প্রথম প্রকাশিত নাটক: বাল্মীকি প্রতিভা
-
প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস: বৌ ঠাকুরাণীর হাট
-
প্রথম প্রকাশিত ছোটগল্প: ভিখারিণী
-
প্রথম প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ: বিবিধ প্রসঙ্গ
0
Updated: 3 weeks ago