একটি পূর্ণবয়স্ক (Term) নবজাতকের ওজন কত কম হলে LBW বাচ্চা বলা হয়?
A
৩ কেজি
B
২.৫ কেজি
C
২ কেজি
D
১.৫ কেজি
উত্তরের বিবরণ
একটি নবজাতকের জন্মের সময়ের ওজন তার স্বাস্থ্য, বিকাশ এবং ভবিষ্যৎ শারীরিক অবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। সাধারণভাবে একটি পূর্ণবয়স্ক বা Term নবজাতক যদি জন্মের সময় ২.৫ কেজি বা তার কম ওজনের হয়, তখন তাকে Low Birth Weight (LBW) শিশুর শ্রেণিতে ফেলা হয়। এটি শিশুর বৃদ্ধি, পুষ্টি ও মাতৃস্বাস্থ্যের মান বোঝাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত।
এই বিষয়টি বোঝাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো
-
Low Birth Weight (LBW) বলতে বোঝায় এমন নবজাতক যার জন্মের সময় ওজন ২৫০০ গ্রাম (২.৫ কেজি)-এর কম। এটি জন্মের সময় শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত বৃদ্ধি বা ওজন না হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
-
পূর্ণবয়স্ক বা Term নবজাতক সাধারণত ৩৭ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে জন্ম নেয়। এই সময়ের মধ্যে জন্ম নেওয়া শিশুর স্বাভাবিক ওজন হওয়া উচিত প্রায় ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি।
-
২.৫ কেজির নিচে ওজন হলে শিশুকে LBW ধরা হয়, যদিও সে পূর্ণ মেয়াদে জন্ম নিয়ে থাকে। এ ধরনের শিশুদের অনেক সময় জন্মের আগেই বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যাকে Intrauterine Growth Restriction (IUGR) বলা হয়।
-
জন্মের ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে মায়ের পুষ্টিহীনতা, গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ, ধূমপান, অল্প বয়সে গর্ভধারণ, উচ্চ রক্তচাপ বা অ্যানিমিয়া ইত্যাদি। এসব কারণে গর্ভে ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
-
LBW শিশুদের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। যেমন, জন্মের পর শ্বাসকষ্ট, সংক্রমণ, রক্তে শর্করার ঘাটতি, তাপমাত্রা ধরে রাখতে সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
-
এই শিশুরা পরবর্তী জীবনে অপুষ্টি, শিক্ষাগত দুর্বলতা বা দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে, যদি যথাযথ যত্ন ও পুষ্টি না দেওয়া হয়।
-
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৫-২০% নবজাতক Low Birth Weight নিয়ে জন্ম নেয়। উন্নয়নশীল দেশে এই হার আরও বেশি, যা মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতির প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
-
LBW প্রতিরোধের উপায় হিসেবে গর্ভবতী মায়েদের পর্যাপ্ত পুষ্টি, আয়রন-ফোলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
-
জন্মের পর LBW শিশুর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন, যেমন ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার (KMC), বুকের দুধ খাওয়ানো, উষ্ণ পরিবেশে রাখা এবং নিয়মিত ওজন পর্যবেক্ষণ।
-
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ওজনের পাশাপাশি শিশুর গর্ভকালীন বয়সও গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রি-টার্ম শিশু (৩৭ সপ্তাহের আগে জন্ম) ওজন কম হওয়ার কারণে LBW হতে পারে, আবার কিছু টার্ম শিশুও গর্ভে যথাযথ বৃদ্ধি না পেলে LBW হতে পারে।
সুতরাং, একটি পূর্ণবয়স্ক (Term) নবজাতকের ওজন ২.৫ কেজির কম হলে তাকে Low Birth Weight (LBW) হিসেবে গণ্য করা হয়, যা নবজাতকের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও যত্নের মান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
0
Updated: 4 days ago
গর্ভকালীন প্রসূতিসেবায় প্রথম তিন মাসে (First trimester) মাকে কি দিয়ে থাকি?
Created: 4 days ago
A
ফলিক এসিড
B
ক্যালসিয়াম
C
আয়োডিন
D
মেগনেশিয়াম
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বা ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার হলো ভ্রূণের গঠন ও বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় মায়ের শরীরে নানা হরমোনগত পরিবর্তন ঘটে এবং শিশুর প্রধান অঙ্গগুলোর বিকাশ শুরু হয়। তাই এই পর্যায়ে প্রয়োজন হয় বিশেষ পুষ্টি উপাদান, যা মা ও ভ্রূণ উভয়ের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
-
ফলিক এসিড গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন, যা ভিটামিন বি–গ্রুপের অন্তর্গত। এটি ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে এবং জন্মগত ত্রুটি, বিশেষ করে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTD) প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
সাধারণত গর্ভধারণের আগে থেকেই নারীদের ফলিক এসিড খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ গর্ভাবস্থার প্রথম কয়েক সপ্তাহে শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড গঠিত হয়। এই সময় যথেষ্ট ফলিক এসিড না পেলে শিশুর মস্তিষ্ক বা স্পাইনাল কর্ডে স্থায়ী ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
-
এই ভিটামিন রক্তের লোহিত কণিকা (RBC) তৈরিতেও সাহায্য করে, যা মা ও শিশুর অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয়। ফলিক এসিডের ঘাটতি থাকলে অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় জটিলতা বাড়ায়।
-
প্রতিদিন সাধারণত ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফলিক এসিড গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে যেসব নারীর আগে নিউরাল টিউব ডিফেক্টযুক্ত শিশু হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে—যা চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত হয়।
-
ফলিক এসিড শুধু ট্যাবলেটের মাধ্যমে নয়, খাদ্য থেকেও পাওয়া যায়। যেমন—সবুজ পাতা জাতীয় শাকসবজি, কমলা, ডাল, মটরশুঁটি, ব্রোকলি, অ্যাভোকাডো ও গোটা শস্যজাত খাবারে এটি বিদ্যমান।
-
এই পুষ্টি উপাদান মায়ের কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে ভ্রূণের বৃদ্ধি সুষ্ঠুভাবে ঘটে।
-
ফলিক এসিড গ্রহণের ফলে গর্ভপাত, অকাল প্রসব বা শিশুর কম ওজনের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
-
কিছু নারী ফলিক এসিড শোষণে সমস্যা অনুভব করতে পারেন; যেমন—যাদের মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, ম্যালঅ্যাবসোর্পশন সিন্ড্রোম, বা দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে হয়।
-
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ফলিক এসিড ছাড়াও পরবর্তীতে ক্যালসিয়াম ও আয়রন দেওয়া শুরু হয়, তবে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে শুধুমাত্র ফলিক এসিডকেই সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ফলিক এসিড গ্রহণ করা উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত ডোজ শরীরের অন্যান্য ভিটামিন বি–গ্রুপের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
সবদিক বিবেচনায় দেখা যায়, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে ফলিক এসিড মায়ের ও শিশুর সুস্থতার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি শুধু এক ধরনের ভিটামিন নয়, বরং একটি অপরিহার্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, যা নবজাতকের সুস্থ জন্ম নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
0
Updated: 4 days ago
গর্ভকালীন প্রসূতিবস্থা (ANC) এর সময় কোন ল্যাবরেটরী পরীক্ষা জরুরি নয়?
Created: 4 days ago
A
হিমোগ্লোবিন
B
Urine R/M/E
C
VDRL
D
Cholesterol level
গর্ভকালীন প্রসূতিবস্থা (ANC) হলো গর্ভবতী মহিলার যত্ন নেওয়ার প্রক্রিয়া, যেখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা হয়। গর্ভাবস্থায় কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভধারণের সময়ে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে তা আগেই সনাক্ত করা যায়। তবে সব ধরনের পরীক্ষা গর্ভাবস্থার জন্য জরুরি নয়।
এখানে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে Cholesterol level বা কোলেস্টেরলের স্তরের পরীক্ষা গর্ভকালীন সময়ে জরুরি নয়, তাই সঠিক উত্তর হলো ঘ) Cholesterol level।
এখন বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
-
হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin) পরীক্ষা গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া সাধারণ সমস্যা, যা মা ও শিশুর জন্য বিপদজনক হতে পারে। হিমোগ্লোবিনের স্তর পরীক্ষা করা হয় যাতে রক্তাল্পতা সনাক্ত করা যায় এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়।
-
Urine R/M/E (Urine Routine Microscopy and Examination) পরীক্ষা গর্ভাবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মূত্রনালীর সংক্রমণ বা প্রোটিনুরিয়া (যা প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া বা অন্যান্য জটিলতা নির্দেশ করতে পারে) সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
-
VDRL (Venereal Disease Research Laboratory) পরীক্ষা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সিফিলিস শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সিফিলিস untreated থাকলে গর্ভপাত, গর্ভকালীন জটিলতা এবং নবজাতকের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
-
Cholesterol level পরীক্ষার প্রয়োজন গর্ভকালীন সময়ে সাধারণত নেই, কারণ সাধারণত গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরলের স্তর স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা পরিবর্তন হলেও এটি কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে না। গর্ভাবস্থায় কোলেস্টেরলের মাত্রা উচ্চ হওয়া খুবই বিরল এবং সাধারণত এই ধরনের পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
-
কেবলমাত্র উচ্চ ঝুঁকির গর্ভবতী মহিলাদের (যেমন, আগে থেকে হৃদরোগের ইতিহাস বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সমস্যা) কিছু বিশেষ পরীক্ষার দরকার হতে পারে, তবে সাধারণভাবে কোলেস্টেরলের স্তরের পরীক্ষা গর্ভকালীন সময়ে করার প্রয়োজন নেই।
সবশেষে, বলা যায়, Cholesterol level পরীক্ষা গর্ভাবস্থায় জরুরি নয়, এবং সাধারণভাবে অন্যান্য পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে গর্ভাবস্থার সঠিক যত্ন নেওয়া সম্ভব।
0
Updated: 4 days ago
কোন পরীক্ষা গর্ভবতী মা’র জন্য ঝুঁকিপূর্ণ?
Created: 4 days ago
A
ECG
B
X-ray
C
Ultrasonography
D
Blood Sugar
গর্ভবতী মায়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা হলো X-ray। গর্ভাবস্থায় রেডিয়েশন বা এক্স-রে তীব্রতার মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে জন্মগত ত্রুটি বা শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অতএব, গর্ভাবস্থায় এক্স-রে ব্যবহার করা উচিত নয়, বিশেষত যদি এটি জরুরি না হয়।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
– X-ray একটি রেডিয়েশন ব্যবহারকারী পরীক্ষা যা শরীরের ভিতরের অবস্থা দেখতে সাহায্য করে। তবে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ রেডিয়েশন গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে ক্ষতি করতে পারে, বিশেষত প্রথম তিন মাসে যখন শিশুর অঙ্গ-প্রতঙ্গ গঠন হচ্ছে।
– গর্ভবতী অবস্থায় এক্স-রে করার প্রয়োজন হলে, বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করা হয়, এবং শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতে এর প্রয়োগ করা হয়।
– এক্স-রে’র পরিবর্তে গর্ভবতী মায়ের জন্য এলট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography) বা Blood Sugar পরীক্ষা, এমনকি ECG (Electrocardiogram) নিরাপদভাবে করা যেতে পারে, কারণ এগুলোর কোনো রেডিয়েশন ঝুঁকি নেই এবং এগুলি মায়ের বা শিশুর জন্য নিরাপদ।
– Ultrasonography হলো একটি অ-ইনভেসিভ এবং রেডিয়েশন মুক্ত পরীক্ষা, যা গর্ভস্থ শিশুর স্বাস্থ্য এবং অঙ্গ-প্রতঙ্গের অবস্থান নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। এটি পুরোপুরি নিরাপদ এবং গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
– ECG এবং Blood Sugar পরীক্ষা গর্ভবতী মা’র জন্য সাধারণত নিরাপদ এবং এগুলি মায়ের শারীরিক অবস্থা যাচাই করার জন্য করা হয়।
– Blood Sugar পরীক্ষা গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা মায়ের এবং শিশুর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সুতরাং, X-ray পরীক্ষা গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি রেডিয়েশন সৃষ্টি করে যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
Answer: খ) X-ray
0
Updated: 4 days ago