কোন দুটি জীবনানন্দ দাশ রচিত কাব্যগ্রন্থ ?
A
বেলা অবেলা কালবেলা ও ধূসর পান্ডলিপি
B
বনলতা সেন ও উত্তর ফাল্গনী
C
ঝরা পালক ও রাখালী
D
ছাড়পত্র ও বনলতা সেন
উত্তরের বিবরণ
জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কবিতার এক অগ্রগণ্য কবি, যিনি বাংলা সাহিত্যে “নির্জনতার কবি” হিসেবে পরিচিত। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, নিঃসঙ্গতা, প্রেম, মৃত্যু ও জীবনের গভীর বাস্তবতা অনন্যভাবে প্রকাশ পেয়েছে। প্রশ্নে উল্লেখিত দুটি কাব্যগ্রন্থ—‘বেলা অবেলা কালবেলা’ ও ‘ধূসর পান্ডুলিপি’—তাঁর কবিজীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন, যা বাংলা কাব্যভুবনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।
ব্যাখ্যা:
‘ধূসর পান্ডুলিপি’ জীবনানন্দ দাশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ, প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। এই কাব্যগ্রন্থে কবির চিন্তা, অনুভব ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। এখানে তিনি মানুষের একাকিত্ব, অস্তিত্বের অনিশ্চয়তা এবং প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ককে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। ধূসর পান্ডুলিপির কবিতাগুলোতে বাংলা ভাষার গঠন ও চিত্রকল্প ব্যবহারে নতুনত্ব দেখা যায়, যা জীবনানন্দকে রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগে স্বতন্ত্র অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে।
‘বেলা অবেলা কালবেলা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৬১ সালে, মৃত্যুর পর। এটি জীবনানন্দ দাশের পরিণত মানসিকতার প্রতিফলন। এখানে তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা, সময়ের নিষ্ঠুরতা এবং মানুষের ভেতরের নিঃসঙ্গতা গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। কবিতাগুলোতে মৃত্যু ও জীবনের চক্র নিয়ে তাঁর দার্শনিক উপলব্ধি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
এই দুটি কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে গেছেন। তাঁর কবিতায় ব্যবহৃত প্রতীক, চিত্রকল্প, এবং সূক্ষ্ম আবেগ পাঠকদের ভাবনার গভীরে পৌঁছে দেয়। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতায় অন্তর্মুখী ভাবনা ও বাস্তব জীবনের প্রতিফলন যুক্ত করেছেন, যা পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
সব মিলিয়ে, ‘ধূসর পান্ডুলিপি’ তাঁর কাব্যিক সূচনার প্রতীক, আর ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ তাঁর কাব্যজীবনের পূর্ণতা প্রকাশ করে। এই দুটি গ্রন্থই প্রমাণ করে যে জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা আধুনিক কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাতা, যিনি বাংলা সাহিত্যকে নতুন ব্যঞ্জনা ও ভাষার সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ করেছেন।
0
Updated: 4 days ago
'নিরালোকে দিব্যরথ' কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা ?
Created: 4 days ago
A
সিকান্দার আবু জাফর
B
আল মাহমুদ
C
শামসুর রহমান
D
সৈয়দ শামসুল হক
‘নিরালোকে দিব্যরথ’ বাংলা আধুনিক কবিতার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ। এটি বিখ্যাত কবি শামসুর রহমানের লেখা। তাঁর কবিতায় মানবতাবাদ, স্বাধীনতা, প্রেম, সমাজচেতনা ও জাতীয় চেতনার এক অসাধারণ প্রকাশ দেখা যায়। ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ কাব্যগ্রন্থেও সেই গভীর চিন্তা ও জীবনবোধ প্রতিফলিত হয়েছে।
এই কাব্যগ্রন্থে কবি মানুষের আত্মার জাগরণ, জীবনের আলোক-অন্ধকারের দ্বন্দ্ব ও সত্য-সৌন্দর্যের অনুসন্ধানকে তুলে ধরেছেন। নিচে কাব্যগ্রন্থটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো—
-
লেখক পরিচিতি: শামসুর রহমান বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধুনিক কবি। তিনি বাংলা কবিতায় নতুন ধারা এনেছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ, শহুরে জীবন, মানবপ্রেম এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয় তাঁর কবিতায় বারবার উঠে এসেছে।
-
প্রকাশকাল ও প্রেক্ষাপট: ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ প্রকাশিত হয় বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, যখন সমাজে নানা রাজনৈতিক ও মানসিক টানাপোড়েন চলছিল। কবি সেই সময়ের বাস্তবতা ও মানবজীবনের অন্তর্লোককে তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন।
-
কবিতার ধারা ও ভাব: এই কাব্যগ্রন্থে কবির অস্তিত্বচেতনা ও আত্মজিজ্ঞাসা গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি জীবনের আলো-অন্ধকার, দুঃখ-আনন্দ ও বিশ্বাস-সন্দেহের সংঘাতকে কাব্যের ভাষায় রূপ দিয়েছেন।
-
ভাষা ও শৈলী: শামসুর রহমানের ভাষা সহজ, প্রাঞ্জল ও আধুনিক। তিনি কাব্যে এমন ছন্দ ও চিত্রকল্প ব্যবহার করেছেন যা পাঠককে গভীর চিন্তার ভেতর নিয়ে যায়।
-
বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য: ‘নিরালোকে দিব্যরথ’-এ প্রেম, মানবতা, স্বাধীনতা, মৃত্যুচেতনা ও জীবনদর্শন মিলেমিশে এক অনন্য কাব্যিক রূপ পেয়েছে।
-
প্রভাব ও গুরুত্ব: এই গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে এক নতুন কাব্যভাষা প্রতিষ্ঠা করে। শামসুর রহমানের কবিতার মাধ্যমে আধুনিক নগরজীবন ও মানুষের মানসিক দ্বন্দ্ব প্রথমবারের মতো গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়।
সর্বোপরি, ‘নিরালোকে দিব্যরথ’ শামসুর রহমানের এক সৃষ্টিশীল ও চিন্তাশীল কাব্যগ্রন্থ, যা বাংলা আধুনিক কবিতাকে নতুন দিশা দিয়েছে এবং কবির সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
0
Updated: 4 days ago