'বীরবল' ছদ্মনামটি কার ?
A
প্রমথ চৌধুরী
B
সিরাজু ইসলাম চৌধুরী
C
মোতাহার হোসেন চৌধুরী
D
মুনীর চৌধুরী
উত্তরের বিবরণ
প্রমথ চৌধুরী ছিলেন বাংলা সাহিত্যজগতের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব, যিনি সাহিত্য, প্রবন্ধ, ভাষা ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রে নতুন ধারা প্রবর্তন করেন। তিনি তাঁর লেখায় ব্যঙ্গ, রসিকতা ও প্রজ্ঞার মিশ্রণে এমন এক সাহিত্যরীতি সৃষ্টি করেছিলেন যা আজও পাঠককে ভাবায় ও আনন্দ দেয়। তাঁর সাহিত্যিক রচনাগুলোর একটি বিশেষ দিক হলো ছদ্মনাম ‘বীরবল’—এই নামেই তিনি বহু প্রবন্ধ ও রম্যরচনা লিখেছিলেন।
‘বীরবল’ ছদ্মনামের ব্যবহার প্রমথ চৌধুরীর ব্যক্তিত্ব ও লেখার রীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। তিনি এই নামের মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি, ভণ্ডামি ও সংস্কারকে ব্যঙ্গাত্মক অথচ যুক্তিপূর্ণভাবে প্রকাশ করতেন।
• ‘বীরবল’ নামের তাৎপর্য: এই নামটি মূলত সম্রাট আকবরের সভার বুদ্ধিদীপ্ত মন্ত্রী বীরবল থেকে অনুপ্রাণিত। যেমন ঐতিহাসিক বীরবল ছিলেন বুদ্ধি, যুক্তি ও কৌতুকের প্রতীক—তেমনি প্রমথ চৌধুরীও তাঁর রচনায় রসাত্মক ভাষায় সমাজের ত্রুটি ও মানবচরিত্রের মিথ্যাচার তুলে ধরতেন।
• প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যধারা: তিনি বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে নতুনত্ব আনেন। তাঁর প্রবন্ধগুলোতে যুক্তি, বিদ্রুপ ও চিন্তার গভীরতা একসঙ্গে মিশে থাকে। তাঁর ভাষা ছিল সহজ, প্রাঞ্জল ও আধুনিক, যা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
• বীরবল নামের অধীনে লেখা রচনাসমূহ: এই ছদ্মনামে তিনি মূলত ‘সবুজপত্র’ পত্রিকায় লিখতেন। সেখানে সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে ব্যঙ্গরসাত্মক প্রবন্ধ প্রকাশ করতেন, যা পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়।
• ছদ্মনামের ব্যবহারিক তাৎপর্য: প্রমথ চৌধুরী বিশ্বাস করতেন যে ছদ্মনামের আড়ালে লেখকের ভাব প্রকাশ আরও স্বাধীন হয়। ‘বীরবল’ নাম তাঁকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছিল, যার ফলে তিনি নির্ভয়ে সমাজ ও সংস্কৃতির অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরতে পেরেছিলেন।
• বাংলা সাহিত্য ও সমাজে প্রভাব: তাঁর এই রচনাগুলো শুধু হাস্যরস নয়, চিন্তার খোরাকও জুগিয়েছে। সাহিত্যিক ব্যঙ্গের মাধ্যমে তিনি সমাজ সংস্কারের এক সূক্ষ্ম বার্তা দিতে পেরেছিলেন, যা পরবর্তীকালে বহু লেখককে প্রভাবিত করে।
অতএব, ‘বীরবল’ ছদ্মনামটি প্রমথ চৌধুরীর, যা তাঁর সাহিত্যজীবনের একটি স্বাক্ষর ও বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যের রসাত্মক ধারার অন্যতম ভিত্তি হয়ে আছে।
0
Updated: 4 days ago