'রায়গুনাকর' উপাধি কে লাভ করেন ?
A
ঈশ্বরগুপ্ত
B
বঙ্কিমচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়
C
ভারতচদ্র রায়
D
আলাওল
উত্তরের বিবরণ
ভারতচন্দ্র রায় ছিলেন আঠারো শতকের এক বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক, যিনি বাংলা কাব্যজগতে এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছেন। তাঁর সাহিত্য প্রতিভা ও কাব্য রচনার দক্ষতার জন্যই তাঁকে ‘রায়গুনাকর’ উপাধি প্রদান করা হয়। এই উপাধি শুধু তাঁর সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি নয়, বরং তাঁর সময়ের রাজা ও অভিজাত সমাজের কাছ থেকেও উচ্চ সম্মান পাওয়ার প্রতিফলন।
ভারতচন্দ্র রায়ের জীবন ও সাহিত্যকীর্তি সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে তুলে ধরা হলো:
-
ভারতচন্দ্র রায়ের জন্ম ১৭১২ সালে হুগলি জেলার তৃণিতীগ্রামে। তিনি রাজপরিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং রাজদরবারের কবি হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।
-
তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় রচনা ‘অন্নদামঙ্গল’। এটি বাংলা মঙ্গলকাব্যের ধারায় এক অসাধারণ সৃষ্টি, যেখানে ধর্ম, ইতিহাস ও মানবিক অনুভূতির মিশ্রণ পাওয়া যায়।
-
তিনি দেবী অন্নপূর্ণাকে কেন্দ্র করে এই কাব্য রচনা করেন, যেখানে দেবীকে মা, রক্ষাকর্ত্রী ও আশ্রয়দাত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
-
তাঁর কবিতার ভাষা ছিল সাবলীল, ছন্দময় ও নাটকীয়, যা পাঠককে আকৃষ্ট করে রাখে। এতে একদিকে লোকজ রসবোধ, অন্যদিকে রাজসিক ভাবগাম্ভীর্য উভয়ই বিদ্যমান।
-
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর সাহিত্য প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে ‘রায়গুনাকর’ উপাধি দেন। এখানে ‘রায়’ অর্থ সম্মানিত ব্যক্তি এবং ‘গুনাকর’ অর্থ গুণে পরিপূর্ণ ব্যক্তি। অর্থাৎ, তাঁর বহুমুখী গুণাবলির কারণেই এই উপাধি তাঁর প্রাপ্য হয়েছিল।
-
ভারতচন্দ্রের কাব্যে সমাজজীবনের বাস্তবতা, ধর্মীয় ভাবধারা ও মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ গভীরভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
-
তাঁর লেখায় নারী চরিত্রগুলো যেমন সংবেদনশীল ও দৃঢ়চেতা, তেমনি পুরুষ চরিত্রগুলো সাহসী ও দায়িত্বশীল হিসেবে ফুটে উঠেছে।
-
‘অন্নদামঙ্গল’ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য কাব্য ও গান বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
সর্বোপরি বলা যায়, ভারতচন্দ্র রায় শুধু একজন কবি নন, তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক আলোকবর্তিকা। তাঁর ‘রায়গুনাকর’ উপাধি তাঁর প্রতিভা, সাহিত্যগুণ এবং কাব্যরচনার অতুলনীয় দক্ষতার যথাযথ স্বীকৃতি।
0
Updated: 4 days ago