চর্যাপদ সম্পর্কিত অনেক গবেষক এবং লেখকরা একমত যে, এটি বৌদ্ধ সহজযানী বা সহযানী বৌদ্ধ ভিক্ষুগণের রচনা। তবে চর্যাপদের পদসংখ্যা এবং মোট কবির সংখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। এর মধ্যেও সবাই এই বিষয়ে একমত ছিলেন যে, চর্যাপদ বৌদ্ধ সহজিয়াগণের রচনা।
এ বিষয়ে বলা যায় যে, সহজযানী বৌদ্ধ এই গ্রন্থের রচয়িতা। প্রশ্নের অপশন "সহজঘানী বৌদ্ধ" সম্ভবত টাইপিংয়ের ভুল। এটি আসলে সহজযানী বৌদ্ধ হওয়া উচিত, যা ভুল বানান সংশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়া, প্রশ্নে আরও কয়েকটি বানান ভুল থাকতে পারে, যা সংশোধন প্রয়োজন।
ড. হুমায়ুন আজাদ "লাল নীল দীপাবলিতে" চর্যাপদের রচয়িতা হিসেবে বাউল বৌদ্ধদের উল্লেখ করেছেন। তবে, বাউল তত্ত্বের উদ্ভব চর্যাপদ রচনার অনেক পর। বাউল সম্প্রদায়ের জীবনধারা চর্যাপদের কবিদের জীবনধারার সাথে কিছুটা মিলে যাওয়ার কারণে এমন একটি যুক্তি উপস্থাপন করা হতে পারে।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত, যা বাংলা ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ বা গানের সংকলন। এটি ১৯০৭ সালে ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগারে আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের কবিগণ বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদের অনুসারী ছিলেন, এবং এ গ্রন্থে বৌদ্ধধর্মের সাধনা ও তত্ত্বের আলোচনা রয়েছে।
সহজিয়া শব্দটি একটি ধর্মসম্প্রদায়ের পরিচায়ক, যারা সহজপথে সাধনা করে। 'সহজ' শব্দের অর্থ হলো, যা স্বাভাবিকভাবে বা সহজে জন্মায়। সহজিয়া দর্শনে, প্রতিটি প্রাণী বা বস্তুর ভেতরে একটি শাশ্বত স্বরূপ বা অন্তর্নিহিত সত্য রয়েছে, যা উপলব্ধির মাধ্যমে জানা যায়। এই উপলব্ধি প্রক্রিয়াই সহজপথ বলে পরিচিত।
সহজিয়ারা দুই ভাগে বিভক্ত, বৌদ্ধ সহজিয়া এবং বৈষ্ণব সহজিয়া। বৌদ্ধ সহজিয়ার উদ্ভব বজ্রযানী বৌদ্ধদের অনুসরণে হয়। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি মন্ত্র-তন্ত্র এবং শাস্ত্রচারণার প্রতি বিরোধিতা জানিয়ে সহজপথে বোধি বা বুদ্ধ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগ দেন। পাল রাজাদের আমলে এই মতবাদের প্রভাব বাংলায় ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে।
বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদকে সহজযান নামে পরিচিত, যা পরে আরো বিভক্ত হয় বজ্রযান, কালচক্রযান, মন্ত্রযান, এবং সহজযান নামক উপবিভাগে। চর্যাপদের কবিরা এই সহজযান মতবাদ অনুসরণ করতেন।
এখানে বলা যায় যে, বৌদ্ধ সহজিয়াগণ বা সহজযান বৌদ্ধ ছিলেন চর্যাপদের কবিরা। এই তথ্যের ভিত্তিতে, সর্বোত্তম উত্তর হিসেবে "সহজঘানী বৌদ্ধ" অপশনটি গ্রহণযোগ্য নয়, এবং “সহজযানী বৌদ্ধ” হওয়া উচিত।