উত্তর আমেরিকা মহাদেশ থেকে এশিয়া মহাদেশকে পৃথক করেছে কোন প্রণালী?
A
বসফরাস প্রণালী
B
পক প্রণালী
C
জিব্রাল্টার প্রণালী
D
বেরিং প্রণালী
উত্তরের বিবরণ
উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া মহাদেশ ভূগোলগতভাবে একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, তবে তাদের মধ্যে একটি সংকীর্ণ জলপথ দুটি মহাদেশকে পৃথক রেখেছে—এটি হলো বেরিং প্রণালী। এই প্রণালী পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক সীমানা হিসেবে পরিচিত, যা শুধু দুটি মহাদেশ নয়, বরং দুটি মহাসাগরকেও সংযুক্ত করেছে।
বেরিং প্রণালীর অবস্থান আর্কটিক অঞ্চলের দক্ষিণে এবং এটি রাশিয়ার পূর্ব প্রান্তের সাইবেরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা রাজ্যকে আলাদা করে রেখেছে। এ প্রণালীটি প্রায় ৮৫ কিলোমিটার প্রশস্ত এবং এতে বেরিং সাগর ও আর্কটিক মহাসাগরের অংশ চুকচি সাগর পরস্পরের সাথে যুক্ত। প্রণালীটির মাঝখানে ডিওমিড দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত, যার একটি দ্বীপ রাশিয়ার অধীনে (বিগ ডিওমিড) এবং অপরটি যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে (লিটল ডিওমিড)। দুটি দ্বীপের মধ্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় এক দিন, কারণ এখান দিয়ে আন্তর্জাতিক তারিখ পরিবর্তন রেখা (International Date Line) অতিক্রম করেছে।
ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে, প্রায় ২০,০০০ বছর আগে বরফযুগে বেরিং প্রণালীর জায়গায় ছিল একটি স্থলসেতু, যাকে বলা হয় Bering Land Bridge। তখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কম থাকায় এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে স্থলপথে চলাচল সম্ভব ছিল। ধারণা করা হয়, সেই সময়েই এশিয়া থেকে প্রথম মানবগোষ্ঠী এই পথ ধরে উত্তর আমেরিকায় অভিবাসন করে। বরফ গলতে শুরু করলে সমুদ্রের পানি বেড়ে যায় এবং স্থলসেতুটি পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বর্তমান প্রণালীটি তৈরি হয়।
বর্তমানে বেরিং প্রণালী শুধু ভূগোলগত নয়, বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সীমারেখা হিসেবে বিবেচিত হয়, ফলে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে এটি এক সংবেদনশীল এলাকা। একই সঙ্গে এটি মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ এবং আর্কটিক নৌপথের একটি কৌশলগত সংযোগস্থল হিসেবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
বেরিং প্রণালীর জলবায়ু অত্যন্ত ঠান্ডা এবং বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। ফলে এখানে নৌ চলাচল সীমিত, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলতে শুরু করায় ভবিষ্যতে এ প্রণালী হয়ে এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্যিক রুট চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
অন্য বিকল্পগুলো যেমন বসফরাস প্রণালী ইউরোপ ও এশিয়াকে পৃথক করেছে, জিব্রাল্টার প্রণালী ইউরোপ ও আফ্রিকাকে আলাদা করে, আর পক প্রণালী ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে বিভক্ত করেছে। তাই উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার মধ্যকার সঠিক বিভাজনরেখা একমাত্র বেরিং প্রণালী, যা ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক উভয় দিক থেকেই অনন্য।
 
                            
                        
                        
                        
                        
                        0
Updated: 5 days ago