বন্যা নিয়ন্ত্রণে সাধারণ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত নয় কোনটি?

A

নদী খননের মাধ্যমে পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা

B

নদী শাসন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা

C

নদীর দুই তীরে বনাঞ্চল সৃষ্টি করা

D

বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করা

উত্তরের বিবরণ

img

বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো মানুষের জীবন, সম্পদ ও কৃষিজমিকে বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে নদীর পানি প্রবাহ, নিষ্কাশন ও সংরক্ষণকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়—সাধারণ ব্যবস্থাপনা, সহজ প্রকৌশলগত ব্যবস্থা ও ব্যয়বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থা।

এর মধ্যে “নদী খননের মাধ্যমে পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা” বিষয়টি সাধারণ ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভুক্ত নয়; বরং এটি ব্যয়বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। নিচে প্রতিটি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো।

সাধারণ ব্যবস্থাপনা
১. নদীর দুই তীরে প্রচুর বৃক্ষরোপণ করা হয়, যা মাটি ক্ষয় রোধে সহায়তা করে এবং প্রাকৃতিকভাবে বন্যার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২. নদী-শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় যাতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও পানি ধারণক্ষমতা বজায় থাকে।
৩. বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়, যাতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।
৪. পুকুর, নালা, বিল প্রভৃতি খনন ও পুনঃখননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করে বন্যার পানি সাময়িকভাবে ধারণ করা হয়।
৫. সরকারি উদ্যোগে একটি স্থায়ী ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়, যা বন্যা মোকাবেলায় পরিকল্পনা ও তদারকির দায়িত্ব পালন করে।

ব্যয়বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থাপনা
১. ড্রেজিং বা নদী খননের মাধ্যমে নদীর পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়, যাতে অতিরিক্ত পানি সহজে প্রবাহিত হতে পারে এবং প্লাবন কমে যায়।
২. বৃহৎ জলাধার নির্মাণ করা হয়, যা পানি প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৩. আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি প্রবাহকে বাঁধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন করা হয়, যাতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বন্যার ক্ষতি কম হয়।
৪. সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি অনুপ্রবেশ রোধ করা হয়, যা কৃষি ও বসতিগুলোকে সুরক্ষা দেয়।
৫. নদীর তীরে স্থায়ী ও সুদৃঢ় বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও আশপাশের ভূমি রক্ষা করা হয়।

সহজ প্রকৌশলগত ব্যবস্থাপনা
১. নদীর দুই তীরে বেড়িবাঁধ তৈরি করে নদীর পানি উপচে পড়া বন্ধ করা হয়।
২. দেশের সর্বত্র বনায়ন বৃদ্ধি করে মাটি সংরক্ষণ ও পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
৩. রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়, যাতে অতিবৃষ্টি বা নদীর পানি সহজে বেরিয়ে যেতে পারে।
৪. বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে উচ্চ ভূমিতে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়, যাতে দুর্যোগের সময় মানুষ নিরাপদ আশ্রয় পায়।
৫. শহরাঞ্চলে বেষ্টনীমূলক বাঁধ নির্মাণ করে নগর এলাকা বন্যার পানি থেকে সুরক্ষিত রাখা হয়।

সব মিলিয়ে দেখা যায়, সাধারণ ব্যবস্থাপনা মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের দিকে মনোযোগ দেয়, যেখানে ব্যয়বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর ও অবকাঠামোগত সমাধান প্রদান করে। তাই “নদী খননের মাধ্যমে পানি পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা” পদক্ষেপটি সাধারণ ব্যবস্থাপনার অংশ নয়, বরং এটি ব্যয়বহুল প্রকৌশলগত ব্যবস্থার অন্যতম কার্যকর উপায়।

Unfavorite

0

Updated: 6 days ago

Related MCQ

বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যার রেকর্ড অনুযায়ী (১৯৭১-২০০৭) কোন সালের বন্যায় সবচেয়ে বেশি এলাকা প্লাবিত হয়?

Created: 1 month ago

A

১৯৭৪

B

১৯৮৮

C

১৯৯৮

D

২০০৭

Unfavorite

0

Updated: 1 month ago

বাংলাদেশের এফ. সি. ডি. আই প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী?

Created: 1 month ago

A

বন্যা নিয়ন্ত্রণ

B

নিষ্কাশন

C

সেচ প্রকল্প

D

উপরের সবগুলো

Unfavorite

0

Updated: 1 month ago

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD