বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয় কোনটি?
A
মরুকরণ
B
বন্যা
C
সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
D
ভূমিকম্প
উত্তরের বিবরণ
ভূমিকম্পকে সাধারণত পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার ফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাওয়াকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়, এবং এর মূল কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণ।
এই গ্যাসগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাপ ধরে রাখে, ফলে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এরই অংশ হিসেবে ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের কিয়োটো শহরে কিয়োটো প্রটোকল গৃহীত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করা।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর পরিবেশে একাধিক বিরূপ পরিবর্তন ঘটছে যা মানবজীবন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
প্রধান প্রভাবগুলো হলো—
১. জলবায়ু পরিবর্তন: তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে আবহাওয়ার ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে, যা কৃষি, প্রাণীজগৎ ও মানবজীবনে প্রভাব ফেলছে।
২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি: ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনত্ব ক্রমেই বাড়ছে।
৩. মেরু অঞ্চলের বরফ গলন: তাপমাত্রা বাড়ায় মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে, ফলে সমুদ্রের পানির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: বরফ গলনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যার ফলে উপকূলীয় এলাকা নিমজ্জনের ঝুঁকিতে পড়ছে।
৫. জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়: অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির মুখে পড়ছে, ফলে জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৬. রোগব্যাধির বিস্তার: উষ্ণ জলবায়ু মশা ও অন্যান্য রোগবাহী জীবের বৃদ্ধি ঘটিয়ে সংক্রামক রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ২০০৯ সালে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পাঁচটি প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে, যা মানবসভ্যতা ও অর্থনীতির জন্য গভীর হুমকি হিসেবে বিবেচিত—
১. মরুকরণ: তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের তারতম্যের ফলে উর্বর জমি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, যা কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলছে।
২. বন্যা: অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ও বরফ গলনের কারণে নদীর জলস্তর বেড়ে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।
৩. ঝড়: ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা সাগরের বাষ্পীকরণ বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী ঝড় সৃষ্টি করছে।
৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি: উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবন ও জীবিকা সরাসরি বিপন্ন হচ্ছে।
৫. কৃষিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা: তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের অস্থিতিশীলতা কৃষি উৎপাদনকে অস্থির করে তুলছে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
অতএব, ভূমিকম্প যদিও একটি বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল নয়। এটি পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূ-তাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে ঘটে। অপরদিকে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মূলত বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রতিফলিত হয়। এজন্য ভূমিকম্পকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
0
Updated: 6 days ago
বিশ্বব্যাংক ২০০৯ সালে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য কয়টি ঝুঁকিপূর্ণ দিক চিহ্নিত করে?
Created: 1 month ago
A
৪টি
B
৩টি
C
৬টি
D
৫টি
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব (বাংলাদেশ):
-
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।
-
অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধি → ঘন ঘন দুর্যোগ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভূমি প্লাবন।
-
জাতিসংঘের পূর্বাভাস: আগামী ৫০ বছরে দেশের ১৭% ভূমি ডুবে যাবে, প্রায় ৩ কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হবে।
-
নদীর প্রবাহ হ্রাস → পানি সংকট।
-
শস্য উৎপাদন কমে খাদ্য ও পানির ঝুঁকি বাড়বে।
-
বিশ্ব উষ্ণায়ন ধনী-দরিদ্র বৈষম্যও বৃদ্ধি করবে।
বিশ্বব্যাংক (২০০৯) অনুযায়ী ৫ ঝুঁকি:
১. মরুকরণ
২. বন্যা
৩. ঝড়
৪. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
৫. কৃষিক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা
-
প্রতিটি ক্ষেত্রে ১২টি শীর্ষ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ তালিকাভুক্ত; বাংলাদেশের নাম রয়েছে ৩টি তালিকায় এবং একটিতে শীর্ষে।
-
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বাংলাদেশ।
0
Updated: 1 month ago