বাংলা বর্ণমালা এসেছে কোন লিপি থেকে?
A
কিউনিফর্ম লিপি
B
হায়ারোগ্লিফিক লিপি
C
ব্রাহ্মী লিপি
D
ল্যাটিন লিপি
উত্তরের বিবরণ
বাংলা বর্ণমালার উৎপত্তি একটি দীর্ঘ ঐতিহাসিক বিকাশের ফল, যার শিকড় প্রাচীন ভারতীয় লিপির ইতিহাসে নিহিত। ভাষা ও লিপির এই বিকাশ ভারতীয় উপমহাদেশে সংস্কৃতি, ধর্ম এবং যোগাযোগের ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। বাংলা লিপির মূল উৎস ব্রাহ্মী লিপি, যা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ লিপি হিসেবে বিবেচিত।
ব্রাহ্মী লিপি থেকে বাংলা বর্ণমালা কীভাবে এসেছে, তা বোঝার জন্য এর ঐতিহাসিক রূপান্তরগুলো জানা জরুরি—
ব্রাহ্মী লিপির উৎস:
ব্রাহ্মী লিপির প্রচলন হয় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে, সম্রাট অশোকের সময়। এই লিপিতে তাঁর শিলালিপিগুলো পাওয়া যায়, যা ভারতীয় লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য। ব্রাহ্মী লিপিই পরবর্তীকালে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন ভাষার লিপির ভিত্তি স্থাপন করে।
গুপ্ত লিপিতে রূপান্তর:
ব্রাহ্মী লিপি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হয়ে গুপ্ত যুগে “গুপ্ত লিপি” নামে পরিচিত হয়। এই লিপি ছিল তুলনামূলকভাবে গোলাকার ও সহজলিখন উপযোগী, যা প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হত।
সিদ্ধমাতৃকা লিপি ও তার প্রভাব:
গুপ্ত লিপি থেকে বিকশিত হয় সিদ্ধমাতৃকা লিপি, যা সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীতে প্রচলিত ছিল। এই লিপির গঠনই পরবর্তীকালে বাংলা, অসমিয়া ও ওড়িয়া লিপির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
বাংলা লিপির বিকাশ:
সিদ্ধমাতৃকা লিপির রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় ১১শ থেকে ১২শ শতাব্দীতে প্রাচীন বাংলা লিপি গঠিত হয়। এতে বর্ণগুলোর আকার আরও সহজ, বক্র এবং লেখার উপযোগী হয়ে ওঠে। পরে মধ্যযুগে বাংলা লিপি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রূপ পায় এবং আধুনিক বাংলায় ব্যবহৃত বর্ণমালা এই ধারারই ফলাফল।
উপসংহার:
বাংলা বর্ণমালা কোনো বিদেশি লিপি যেমন কিউনিফর্ম, হায়ারোগ্লিফিক বা ল্যাটিন লিপি থেকে আসেনি; বরং এটি ভারতীয় লিপির নিজস্ব বিকাশের ধারায় ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত। এই লিপিই ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ ভাষার বর্ণমালার মূল উৎস এবং বাংলা ভাষার ইতিহাসেও এর ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
0
Updated: 6 days ago