আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোন তত্ত্বটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী ভূমিকার বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা প্রদান করে?

A

উদারবাদ 

B

বাস্তববাদ 

C

মার্ক্সবাদ 

D

কোনোটিই নয়

উত্তরের বিবরণ

img

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদারবাদ বা Liberalism তত্ত্ব এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি, যা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী ভূমিকার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই তত্ত্ব মনে করে যে আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সহযোগিতার মাধ্যমেই বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক কল্যাণ অর্জন সম্ভব। উদারতাবাদ শুধু রাজনৈতিক মতবাদ নয়, এটি অর্থনৈতিক ও নৈতিক দর্শন হিসেবেও মানব সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

উদারতাবাদ (Liberalism):
উদারতাবাদ এমন এক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতবাদ, যা ব্যক্তির স্বকীয়তা, সমান সুযোগ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত অধিকারের সুরক্ষাকে সর্বাধিক মূল্য দেয়। ইংরেজ দার্শনিক জন লক এবং অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ এই তত্ত্বের প্রাথমিক প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করতেন যে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ সীমিত রেখে মুক্ত বাজারনীতি ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব।

  • ১৯১৯ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত উদারবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে এবং যুদ্ধ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

  • এই তত্ত্বে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা সম্ভব, যেমন— ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত লীগ অব নেশন্স (League of Nations) ছিল এই ভাবধারারই ফল।

  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ (UN), বিশ্বব্যাংক (World Bank) প্রভৃতি সংস্থাও একই ধারণার ওপর ভিত্তি করে গঠিত।

  • উদারতাবাদ বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক নির্ভরতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে।

বাস্তববাদ (Realism):
বাস্তববাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি বিপরীতমুখী তত্ত্ব, যা রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ, ক্ষমতা ও নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব দেয়। বাস্তববাদীরা মনে করেন, বিশ্বরাজনীতি মূলত শক্তির ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল এবং রাষ্ট্র তার স্বার্থ রক্ষায় সর্বদা ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থাকে।

মার্ক্সবাদ (Marxism):
মার্ক্সবাদ একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শন, যা কার্ল মার্ক্স ও ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস দ্বারা বিকশিত। এটি মূলত ঐতিহাসিক বস্তুবাদ, দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ, উদ্বৃত্ত মূল্যতত্ত্ব ও শ্রেণিসংগ্রাম—এই চার ধারণার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্ক্সবাদ রাষ্ট্র ও শ্রেণির মধ্যে সংঘাত এবং অর্থনৈতিক আধিপত্যকে ব্যাখ্যা করে।

নব্য-উদারতাবাদ (Neoliberalism):
নব্য-উদারতাবাদ উদারবাদেরই আধুনিক রূপ, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বাজার অর্থনীতির প্রতি বিশ্বাসী। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি রবার্ট কোহেন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এটি মনে করে, রাষ্ট্রসমূহের জাতীয় স্বার্থ অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান অপরিহার্য, কারণ এই প্রতিষ্ঠানগুলো পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করে।

গঠনবাদ (Constructivism):
গঠনবাদ মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয় মানুষের পরিচয়, সামাজিক মূল্যবোধ, ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবের মাধ্যমে। যদিও এই তত্ত্ব সরাসরি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলে না, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক কাঠামো সমাজ ও রাষ্ট্রের আচরণকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন তত্ত্বের মধ্যে উদারবাদই সবচেয়ে স্পষ্টভাবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকর ভূমিকা তুলে ধরে। এটি বিশ্বাস করে যে সহযোগিতা, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং প্রতিষ্ঠানগত কাঠামোই বিশ্ব শান্তি রক্ষার মূল ভিত্তি।

Unfavorite

0

Updated: 1 week ago

Related MCQ

 চে গুয়েভেরা কোন দেশে জন্মগ্রহন করেন?

Created: 1 month ago

A

আর্জেন্টিনা

B

কিউবা

C

মেক্সিকো

D

ভেনেজুয়েলা

Unfavorite

0

Updated: 1 month ago

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (MSC) প্রথম কবে অনুষ্ঠিত হয়?


Created: 1 month ago

A

১৯৫১ সালে 


B

১৯৫৩ সালে


C

১৯৬১ সালে


D

১৯৬৩ সালে


Unfavorite

0

Updated: 1 month ago

 হাজার হ্রদের দেশ-

Created: 2 months ago

A

অস্ট্রেলিয়া

B

অস্ট্রেলিয়া

C

মিশর

D

ফিনল্যান্ড

Unfavorite

0

Updated: 2 months ago

© LXMCQ, Inc. - All Rights Reserved

Developed by WiztecBD