'আমার পথ' প্রবন্ধের মূল উপজীব্য কোনটি?
A
সমাজসংস্কার
B
ব্যক্তিসত্তার জাগরণ
C
ধর্মীয় অনুশাসন
D
মানবপ্রেম
উত্তরের বিবরণ
কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি মূলত মানুষের অন্তর্গত শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিসত্তার জাগরণের প্রতিফলন। লেখক এখানে নিজের সত্য, নিজের বিবেক ও নিজের পথ সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাসের কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, মানুষের প্রকৃত মুক্তি আসে তখনই, যখন সে নিজের সত্যকে চেনে এবং তার ওপর ভরসা করে নিজের পথ নির্ধারণ করে। কোনো প্রকার ভয়, সমাজের চাপ বা ভ্রান্ত ধর্মীয় শৃঙ্খল তার স্বাধীন চিন্তাকে দমন করতে পারে না। প্রবন্ধের প্রধান ভাবধারা নিম্নরূপ—
-
নিজেকে চিনে নেওয়া: লেখক বলেন, যে মানুষ নিজের অন্তরের সত্যকে চিনে নিতে পারে, সে আর বাইরের কোনো ভয় বা প্রভাবের দ্বারা বিপথে যেতে পারে না। সত্যই তার পথপ্রদর্শক।
-
ভয় ও মিথ্যার সম্পর্ক: যাদের অন্তরে মিথ্যা থাকে, তারাই বাইরের ভয়কে অনুভব করে। কিন্তু সত্যনিষ্ঠ মানুষ কোনো ভয়কেই স্বীকার করে না। তাই তিনি বলেন, “যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।”
-
ব্যক্তিসত্তার স্বাধীনতা: প্রবন্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নজরুল মনে করেন, মানুষকে নিজের বোধ, বিশ্বাস ও আত্মশক্তির ওপর নির্ভর করেই জীবন পরিচালনা করতে হবে। অন্যের পথে চললে তা হবে আত্মসমর্পণ, কিন্তু নিজের পথে চলাই প্রকৃত স্বাধীনতা।
-
সত্যের প্রতি আনুগত্য: লেখকের কাছে সত্য এক অবিচল দিকনির্দেশনা। তিনি নিজের সত্যকে সালাম জানিয়ে যাত্রা শুরু করেন, কারণ তাঁর কাছে সত্যই তাঁর একমাত্র গুরু।
-
সমাজ ও ধর্মের ভয় থেকে মুক্তি: নজরুল বলেন, রাজভয় বা লোকভয় মানুষকে দুর্বল করে। যারা নিজের সত্যে অটল, তারা এইসব ভয়ের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে। সত্যকে ধারণ করলে মানুষ মিথ্যা বা অন্যায় শক্তির কাছে মাথানত করে না।
-
মানবমুক্তির ধারণা: লেখক মানবমুক্তিকে দেখেছেন আত্মমুক্তির আলোকে। মানুষের মন যদি মুক্ত হয়, তবে সমাজও মুক্ত হয়। আর এই মুক্তির পথই তাঁর ‘আমার পথ’।
-
আত্মনির্ভরতার আহ্বান: নজরুল পাঠকদের আহ্বান জানান নিজের অন্তরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে। তাঁর মতে, নিজের সত্য ও সত্তার ওপর আস্থা রাখাই জীবনের প্রকৃত সাফল্যের চাবিকাঠি।
সবশেষে বলা যায়, ‘আমার পথ’ প্রবন্ধটি মানুষকে নিজের অন্তরের সত্যে বিশ্বাস করতে শেখায়। এটি কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক প্রবন্ধ নয়; বরং আত্ম-জাগরণের, আত্মবিশ্বাসের এবং ব্যক্তিসত্তার স্বাধীনতার এক শক্তিশালী আহ্বান। লেখকের উদ্দেশ্য— মানুষ যেন অন্যের ভয় বা প্রভাব নয়, বরং নিজের সত্য ও বিবেকের নির্দেশে পথ চলতে শেখে। তাই এর মূল উপজীব্য ব্যক্তিসত্তার জাগরণ।
0
Updated: 1 week ago
জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধগ্রন্থ কোনটি?
Created: 3 months ago
A
ধূসর পাণ্ডুলিপি
B
কবিতার কথা
C
ঝরা পালকের কবি
D
দুর্দিনের যাত্রী
‘কবিতার কথা’ জীবনানন্দ দাশের লেখা একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। এই প্রবন্ধে তিনি একটি পরিচিত উক্তি উল্লেখ করেছেন —
“সকলেই কবি নন, কেউ কেউ কবি।”
অপরদিকে, ‘দুর্দিনের যাত্রী’ হলো কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি প্রবন্ধগ্রন্থ।
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ, বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের একজন, ১৮৯৯ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও সমাজসেবক, আর মাতা কুসুমকুমারী দাশ নিজেও একজন কবি ছিলেন।
জীবনানন্দের কাব্যে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, নিসর্গ এবং পুরাণ-রূপকথার জগৎ চিত্রময়ভাবে ফুটে উঠেছে। তাই তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ নামে খ্যাতি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দের কবিতাকে ‘চিত্ররূপময়’ হিসেবে বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন।
এছাড়াও জীবনানন্দকে ধূসরতার কবি, তিমির হননের কবি, নির্জনতার কবি হিসেবে ও পরিচিতি পাওয়া যায়।
তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনা:
কাব্যগ্রন্থ:
-
ঝরাপালক
-
ধূসর পাণ্ডুলিপি
-
বনলতা সেন
-
মহাপৃথিবী
-
সাতটি তারার তিমির
-
রূপসী বাংলা
-
বেলা অবেলা
-
কালবেলা
উপন্যাস:
-
মাল্যবান
-
সতীর্থ
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।
0
Updated: 3 months ago
'জীবন ও বৃক্ষ' প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী কাকে তপোবন-প্রেমিক বলেছেন?
Created: 4 weeks ago
A
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে
B
জসীম উদ্দীনকে
C
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে
D
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ ও প্রবন্ধকার, যিনি নোয়াখালীর কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্রবক্তা, উদার মানবতাবাদী ও মননশীল প্রবন্ধকার হিসেবে সুপরিচিত।
তাঁর প্রধান প্রবন্ধগ্রন্থ হলো সংস্কৃতি কথা (১৯৫৮), যার মধ্যে 'জীবন ও বৃক্ষ' প্রবন্ধটি বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
-
মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচিত জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে লিখেছেন।
-
তিনি উল্লেখ করেন যে, রবীন্দ্রনাথ ফুলের ফোটা এবং নদীর গতির সঙ্গে তুলনা করে নদীর গতিতেই মানুষত্বের সাদৃশ্য দেখতে পেয়েছেন।
-
তাঁর মতে, মনুষ্যত্বের বেদনা নদীর গতিতেই উপলব্ধি হয়, ফুলের ফোটায় নয়।
-
ফুলের ফোটা সহজ, কিন্তু নদীর গতি সহজ নয়; নদীকে অনেক বাধা ডিঙিয়ে যেতে হয়।
-
মোতাহের হোসেন চৌধুরী মনে করেন, যদি রবীন্দ্রনাথ ফুলের ফোটার দিকে না তাকিয়ে বৃক্ষের ফুল ফোটানোর দিকে মনোনিবেশ করতেন, তবে তা তার তপোবন-প্রেম ও মানবতাবাদী মননের সাথে আরও সঙ্গতিপূর্ণ হতো।
-
তিনি বলেছেন, কেন রবীন্দ্রনাথ তা করেননি তা বোঝা মুশকিল।
0
Updated: 4 weeks ago
প্রবন্ধ-গবেষণা 'বাংলার কবি মধুসূদন' রচনা করেন কে?
Created: 2 weeks ago
A
নীলিমা ইব্রাহিম
B
বিজন ভট্টাচার্য
C
নবীনচন্দ্র সেন
D
গোবিন্দচন্দ্র দাস
নীলিমা ইব্রাহিম ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী, যিনি নারীজাগরণ, সমাজসচেতনতা এবং সাহিত্যচর্চায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামে এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
-
তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী-উন্নয়ন, সমাজকল্যাণ এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
-
তাঁর লেখায় সমাজ, সাহিত্য ও নারীর অবস্থান সম্পর্কে গভীর চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয়েছে।
-
বিশেষত ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধকালীন নারী নির্যাতন ও বীরাঙ্গনাদের বাস্তব জীবনের করুণ ইতিহাস তুলে ধরে তাঁকে সাহিত্য ও ইতিহাসে স্থায়ী স্থান দিয়েছে।
তাঁর রচিত প্রবন্ধ ও গবেষণাগ্রন্থ:
-
শরৎ প্রতিভা
-
বাংলার কবি মধুসূদন
-
ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ও বাংলার নাটক
-
বাঙালী মানস ও বাংলা সাহিত্য
-
আমি বীরাঙ্গনা বলছি
তাঁর রচিত উপন্যাসসমূহ:
-
বিশ শতকের মেয়ে
-
এক পথ দুই বাঁক
-
কেয়াবন সঞ্চারিণী
-
বহ্নিবলয়
নীলিমা ইব্রাহিমের সাহিত্যকর্ম কেবল নারীর সংগ্রাম ও আত্মপ্রকাশকেই প্রতিফলিত করেনি, বরং বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে এক শক্তিশালী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে।
0
Updated: 2 weeks ago