নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’ চালু করেছিলেন?
A
সম্রাট আকবর
B
সম্রাট শাহজাহান
C
লক্ষণ সেন
D
বিজয় সেন
উত্তরের বিবরণ
বাংলা নববর্ষ বা ‘পহেলা বৈশাখ’ আমাদের সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান উৎসব, যা নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর ঐতিহ্যের প্রতীক। এই নববর্ষের সূচনা ইতিহাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত মুঘল সম্রাট আকবরের প্রশাসনিক সংস্কারের সঙ্গে। তিনি মূলত কৃষি রাজস্ব সংগ্রহের সুবিধার জন্য বাংলা সনের প্রচলন করেন, যা পরবর্তীতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়।
মুঘল শাসনামলে কৃষকরা ফসল বিক্রির পর রাজস্ব পরিশোধ করতেন। কিন্তু তখন ব্যবহৃত ইসলামিক হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষি মৌসুমের সঙ্গে তা মিলত না। এ কারণে রাজস্ব আদায়ে অসুবিধা হচ্ছিল। এই সমস্যার সমাধানেই সম্রাট আকবর নতুন ক্যালেন্ডার বা বাংলা সন চালু করেন।
-
সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা সন প্রবর্তন করেন, যদিও তা কার্যকর করা হয় ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, তাঁর সিংহাসনে আরোহণের বছর থেকে গণনা করে।
-
এই নতুন সন তৈরি করা হয় সৌর বছরের হিসাব অনুযায়ী, যাতে কৃষি মৌসুমের সঙ্গে মিল রেখে কর আদায় করা যায়।
-
তাঁর দরবারের জ্যোতির্বিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী আকবরের নির্দেশে এই নতুন পঞ্জিকা প্রণয়ন করেন।
-
নতুন বছরের প্রথম দিন, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, রাজস্ব আদায়ের দিন হিসেবে নির্ধারণ করা হয় এবং তা পরবর্তীতে উৎসবমুখর ঐতিহ্যে রূপ নেয়।
-
এই দিনটি ধীরে ধীরে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে; ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা খোলেন, যা ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত।
-
সময়ের সঙ্গে এটি শুধু প্রশাসনিক প্রয়োজন মেটানোর ক্যালেন্ডার না থেকে বাংলা সংস্কৃতির উৎসব ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে স্থান পায়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, পহেলা বৈশাখের প্রবর্তন ছিল সম্রাট আকবরের এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, যা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে আজও বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
0
Updated: 1 week ago