“পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল“ পঙ্খক্তির রচয়িতা -
A
রামনারায়ণ তর্করত্ন
B
বিহারীলাল চক্রবর্তী
C
কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
D
মদনমোহন তর্কালংকার
উত্তরের বিবরণ
এই পঙক্তিটি উনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের এক বিশিষ্ট গদ্যকার ও কবি মদনমোহন তর্কালংকারের রচনা। তিনি ছিলেন বাংলা নবজাগরণের প্রাথমিক যুগের একজন অগ্রণী সাহিত্যিক, যিনি প্রাচীন ও আধুনিক ভাবধারার মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করেন। “পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল” পঙক্তিটি তাঁর সাহিত্যিক সৃষ্টির মধ্য দিয়ে প্রকৃতি, সমাজ ও নৈতিক জাগরণের এক প্রতীকী চিত্র প্রকাশ করে।
এই পঙক্তির মাধ্যমে তিনি মানুষের মনন ও সমাজজীবনের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটি কেবল একটি প্রকৃতিবিষয়ক বর্ণনা নয়, বরং গভীর দার্শনিক অর্থ বহন করে—যেখানে ‘রাতি পোহাইল’ মানে অজ্ঞানতার অবসান এবং ‘পাখির রব’ মানে নবজাগরণের সূচনা।
ব্যাখ্যা হিসেবে বলা যায়—
• মদনমোহন তর্কালংকার ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথমদিকের আধুনিক গদ্যরচয়িতাদের একজন। তাঁর রচনায় সমাজসংস্কার, মানবপ্রেম ও জাতীয় চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়।
• “পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল” পঙক্তিটি প্রতীকধর্মী। এখানে ‘পাখি’ বোঝায় জাগ্রত মানুষ, যারা আলোর আহ্বান জানায়; আর ‘রাতি’ বোঝায় অজ্ঞতা, নিদ্রা বা পশ্চাৎপদতার সময়।
• এই লাইনটি মূলত মানবমনের জাগরণের আহ্বান। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সময় এসেছে ঘুম থেকে জেগে উঠার, কর্মে প্রবৃত্ত হওয়ার।
• উক্ত পঙক্তি বাংলা নবজাগরণের সাহিত্যিক ভাষায় এক নবচেতনার প্রকাশ—যা মানুষের ভেতরের অন্ধকার দূর করে সমাজে প্রগতির আলো ছড়ানোর আহ্বান জানায়।
• সাহিত্যিক হিসেবে মদনমোহন তর্কালংকার সমাজে যুক্তিবাদী চিন্তা ও সংস্কারবিরোধী চেতনা ছড়িয়েছিলেন। তাঁর রচনাগুলোতে দেখা যায় নৈতিক জাগরণ, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও শিক্ষার গুরুত্বের উপর জোর।
• এই পঙক্তি শুধু সাহিত্য নয়, তৎকালীন সমাজের মানসিক অবস্থার প্রতিফলনও বটে—যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে কুসংস্কার ত্যাগ করে যুক্তিবাদ ও মানবতাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
• “রাতি পোহাইল” শব্দবন্ধের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে, অন্ধকারের পরেই আসে নতুন ভোর, অর্থাৎ দুর্দশার পরেই মুক্তির সম্ভাবনা।
• এই পঙক্তি তাই যুগচেতনার প্রতীক—যা বাংলার রেনেসাঁ যুগের আত্মপ্রকাশের মূর্ত প্রতিচ্ছবি।
সার্বিকভাবে, মদনমোহন তর্কালংকারের এই লাইনটি শুধু কবিত্বের সৌন্দর্য নয়, বরং এক মানবিক ও আলোকিত সমাজের আহ্বান। তাঁর এই পঙক্তি বাংলা সাহিত্যে চিরন্তন বার্তা হিসেবে বিবেচিত—অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।

0
Updated: 1 day ago
'কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ' - গ্রন্থটি রচনা করেন কে?
Created: 1 month ago
A
মানোএল দা আসসুম্পসাঁউ
B
দোম আন্তোনিও
C
উইলিয়াম কেরি
D
নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড
‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদ’ গ্রন্থ
-
রচয়িতা: রোমান ক্যাথলিক পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল দা আসসুম্পসাঁউ
-
রচনা ও প্রকাশ: ১৭৩৪ সালে রচিত; ১৭৪৩ সালে লিসবনে রোমান হরফে মুদ্রিত
-
লিখিত স্থান: ঢাকার ভাওয়াল অঞ্চলের নাগরী
-
বিশেষত্ব: বাংলা গদ্যের প্রাথমিক প্রচেষ্টার নিদর্শন
-
ভাষা ও রচনার ধরণ:
-
বাঁ দিকের পৃষ্ঠা: বাংলা
-
ডান দিকের পৃষ্ঠা: পর্তুগিজ
-
বিষয়বস্তু: গুরু ও শিষ্যের কথোপকথনের মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের মহিমা এবং খ্রিষ্টানদের আচার-অনুষ্ঠান
-
মনোএল দা আসসুম্পসাঁউ
-
জাতীয়তা: পর্তুগিজ
-
পেশা: খ্রিস্টান ধর্মযাজক
-
সাহিত্যিক অবদান:
-
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনার প্রথম প্রয়াসকারী
-
১৭৪৩ সালে দুটি বাংলা গ্রন্থ রচনা ও মুদ্রণ করেছেন
-
মনোএল দা আসসুম্পসাঁউ রচিত গ্রন্থসমূহ
-
কৃপা শাস্ত্রের অর্থভেদ
-
ভোকাবুলিরও এম ইদিওমা বেনগল্লা ই পোরতুগিজ
উৎস:
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা
-
বাংলাপিডিয়া
-
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, মাহবুবুল আলম

0
Updated: 1 month ago
'সিরাজুম মুনীরা' কাব্যের রচয়িতার নাম-
Created: 4 months ago
A
তালিম হোসেন
B
ফররুখ আহমদ
C
গোলাম মোস্তফা
D
আবুল হোসেন
'সিরাজাম মুনীরা’ কাব্যটির রচয়িতা- 'ফররুখ আহমদ'
ফররুখ আহমদ বিংশ শতকের একজন খ্যাতিমান বাংলা কবি। তিনি ১৯১৮ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেন। আধুনিক বাংলা কবিতায় ইসলামী ভাবধারা ও সমাজসচেতনতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ।
সাহিত্যিক খ্যাতি ও যাত্রা
◾ প্রথম খ্যাতি:
১৯৪৪ সালে কলকাতার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে রচিত তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘লাশ’ কবিকে জনপ্রিয়তার প্রথম শিখরে পৌঁছে দেয়।
◾ প্রথম প্রকাশিত কাব্য:
‘সাত সাগরের মাঝি’ ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, যা তাঁকে কবি হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
কাব্যগ্রন্থ ও সাহিত্যকর্ম
উল্লেখযোগ্য কাব্য:
-
সাত সাগরের মাঝি
-
সিরাজাম মুনিরা
-
মুহূর্তের কবিতা
-
নৌফেল ও হাতেম (কাব্যনাট্য)
-
হাতেমতায়ী (কাহিনিকাব্য)
-
হাবেদা মরুর কাহিনী
বিশেষ কাব্য:
-
‘সিরাজাম মুনিরা’ — ফররুখ আহমদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ। এটি ইসলামী ভাবনাচিন্তা ও রূপকথার সৃজনশীল সংমিশ্রণে রচিত।
শিশুতোষ সাহিত্য
শিশুদের জন্যও তিনি চমৎকার সব সাহিত্য রচনা করেছেন। তাঁর শিশুতোষ রচনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
-
পাখির বাসা
-
হরফের ছড়া
-
ছড়ার আসর
উৎস:
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা — ড. সৌমিত্র শেখর-
বাংলাপিডিয়া

0
Updated: 4 months ago
হিন্দী 'পদুমাবৎ' -এর অবলম্বনে 'পদ্মাবতী' কাব্যের রচয়িতা-
Created: 4 months ago
A
দৌলত উজীর বাহরাম খান
B
সৈয়দ সুলতান
C
আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ
D
আলাওল
পদ্মাবতী আলাওল রচিত একটি প্রখ্যাত প্রণয়কাব্য, যা মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত। এটি হিন্দি ভাষার খ্যাতিমান কবি মালিক মুহাম্মদ জায়সির ‘পদুমাবৎ’ কাব্যের বাংলা অনুবাদ।
এই কাব্যটি ১৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে রচিত হয় আরাকান রাজ্যের রাজা সাদ থদোমিন্তারের রাজত্বকালে। রাজ্যের মন্ত্রী মাগন ঠাকুরের আদেশে আলাওল এটি অনুবাদ করেন।
‘পদ্মাবতী’ কাব্য দুই পর্বে বিভক্ত:
-
প্রথম পর্বে চিতোরের রাজা রত্নসেন কীভাবে সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতীকে লাভ করেন, তা বর্ণিত হয়েছে।
-
দ্বিতীয় পর্বে দিল্লির সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি কীভাবে ব্যর্থভাবে পদ্মাবতীকে দখল করার চেষ্টা করেন, তার বর্ণনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, একই নামের নাটক ‘পদ্মাবতী’ মাইকেল মধুসূদন দত্ত-ও রচনা করেছিলেন, তবে সেটি আলাওলের কাব্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
আলাওল ছিলেন মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর রচনায় ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও প্রণয়কাহিনির অপূর্ব সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।
বিখ্যাত রচনাসমূহ:
-
পদ্মাবতী
-
তোহফা
-
সপ্তপয়কার
-
সিকান্দারনামা
-
সয়ফুল্মুলুক বদিউজ্জামাল
-
সতীময়না
-
রাগতালনামা
তথ্যসূত্র: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর

0
Updated: 4 months ago