“জনৈক” শব্দটি একটি সন্ধি-যুক্ত শব্দ, যা দুটি অংশের মিলনে গঠিত হয়েছে। এ ধরনের শব্দ বিশ্লেষণে মূল লক্ষ্য থাকে কোন ধরণের স্বরসন্ধি ঘটেছে এবং সেই অনুযায়ী শব্দের প্রকৃত রূপ নির্ধারণ করা। এখানে “জনৈক” শব্দটির সঠিক সন্ধি বিচ্ছেদ জন + এক।
এই সন্ধির ব্যাখ্যা নিম্নরূপ—
প্রথম অংশ ‘জন’ শব্দটি সংস্কৃত ভাষা থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ মানুষ বা ব্যক্তি। এটি একক সত্তা বা কোনো ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় অংশ ‘এক’ শব্দটির অর্থ একমাত্র বা এক ব্যক্তি। যখন এই দুটি শব্দ একত্রিত হয়, তখন স্বরসন্ধির নিয়ম অনুযায়ী ‘অ’ ও ‘এ’ মিলিত হয়ে ‘অৈ’ হয়। ফলে জন + এক → জনৈক।
বাংলা ব্যাকরণে এই পরিবর্তনকে “অকারান্ত শব্দের সঙ্গে এক বা এস” যুক্ত হলে “অৈ” সৃষ্টির নিয়ম হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। এটি গুণ সন্ধি বা অয়াদেশ সন্ধি নামেও পরিচিত।
এই নিয়মটি ভালোভাবে বোঝাতে কিছু দিক তুলে ধরা হলো—
-
স্বরসন্ধির ধরন: এখানে ‘অ’ এবং ‘এ’ দুই স্বরধ্বনির মিলনে নতুন স্বরধ্বনি ‘অৈ’ উৎপন্ন হয়েছে, যা গুণ সন্ধির একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
-
সন্ধি সূত্র: “অ + এ = ঐ” — এই সূত্র অনুযায়ী “জন + এক” মিলিত হয়ে “জনৈক” রূপ নেয়।
-
অর্থের স্থিতি: দুটি শব্দের অর্থ পরিবর্তিত না হয়ে একত্রে একটি নতুন শব্দ তৈরি করেছে যার অর্থ ‘একজন’ বা ‘কোনো এক ব্যক্তি’।
-
ব্যবহার: সাহিত্য বা আনুষ্ঠানিক ভাষায় “জনৈক ব্যক্তি”, “জনৈক ভদ্রলোক” প্রভৃতি রূপে শব্দটি ব্যবহৃত হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট নয় বরং অনির্দিষ্ট এক ব্যক্তিকে নির্দেশ করে।
-
সমার্থক উদাহরণ: অনুরূপভাবে ‘অধঃ + এক’ → ‘অধৈক’, বা ‘পর + এক’ → ‘পরৈক’ ইত্যাদি শব্দেও একই সন্ধি নিয়ম কার্যকর।
সুতরাং দেখা যায়, “জনৈক” শব্দটি জন + এক এই দুই অংশের মিলনে গঠিত। এখানে স্বরসন্ধির ফলে ‘অ’ এবং ‘এ’ একত্রে ‘অৈ’ ধ্বনিতে পরিণত হয়েছে, যা গুণ সন্ধির নিয়ম অনুযায়ী ব্যাখ্যাত।
উ. খ) জন + এক
ব্যাখ্যা: ‘জন’ ও ‘এক’ শব্দ দুটি যুক্ত হয়ে স্বরসন্ধির নিয়মে ‘অ’ + ‘এ’ → ‘অৈ’ হয়। ফলে ‘জন + এক’ → ‘জনৈক’ রূপটি গঠিত হয়, যার অর্থ কোনো একজন ব্যক্তি বা অনির্দিষ্ট এক মানুষ।