'বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত' রচনা করেছেন?
A
সুকুমার সনে
B
সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায়
C
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
D
দানীউল হক
উত্তরের বিবরণ
বাংলা ভাষার উৎপত্তি, বিকাশ ও ঐতিহাসিক বিবর্তন নিয়ে বিশদ গবেষণামূলক আলোচনা পাওয়া যায় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে। এই গ্রন্থটি বাংলা ভাষাতত্ত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যেখানে তিনি ভাষার উৎস, গঠনপ্রণালী ও পরিবর্তনের ধারা বিশ্লেষণ করেছেন প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দলিলের আলোকে।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একজন বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদ ও দার্শনিক চিন্তক ছিলেন, যিনি ভাষার ঐতিহাসিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাংলা ভাষার স্বকীয়তা তুলে ধরেন।
গ্রন্থটির মূল দিকগুলো হলো:
-
বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ধারা: তিনি দেখিয়েছেন, বাংলা ভাষার উৎস হলো ইন্দো-আর্য ভাষাপরিবারের পূর্ব প্রাকৃত ও অপভ্রংশ শাখা, বিশেষত মাগধী প্রাকৃত। এ ভাষা ক্রমে রূপান্তরিত হয়ে আধুনিক বাংলা রূপ লাভ করে।
-
প্রাচীন ভাষার নিদর্শন: তিনি প্রমাণ করেছেন যে বাংলা ভাষার প্রাচীন রূপ পাওয়া যায় চর্যাপদ-এ, যেখানে আদি বাংলা ভাষার ধ্বনি, রূপ ও বাক্যগঠন স্পষ্ট।
-
ভাষা ও জাতিসত্তার সম্পর্ক: তাঁর মতে, ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও পরিচয়ের বাহক। বাংলা ভাষার বিকাশে ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজব্যবস্থার প্রভাবও তিনি বিশ্লেষণ করেন।
-
তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের প্রয়োগ: শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার ও ধ্বনিগত গঠন বিশ্লেষণে সংস্কৃত, পালি, প্রাকৃত, আরবি, ফারসি ও ইংরেজি প্রভাব নির্ণয় করেছেন। এতে বোঝা যায় বাংলা একটি সংকর ভাষা, যা বহু ভাষার সংস্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে।
-
আঞ্চলিক উপভাষা বিশ্লেষণ: তিনি বাংলা ভাষার নানা উপভাষা—রাঢ়ী, বাঙ্গালা, কামরূপী ও বরেন্দ্রী উপভাষার বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে দেখান কিভাবে এগুলোর সংমিশ্রণেই আধুনিক মানক বাংলা গঠিত হয়েছে।
-
ভাষার বিকাশধারা: গ্রন্থে তিনি ধ্বনি, রূপ, বাক্য ও অর্থবিকাশের মাধ্যমে ভাষার ধারাবাহিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করেছেন। এতে ভাষার প্রাকৃতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া ও সামাজিক প্রভাব উভয়ই স্পষ্ট হয়।
-
বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক পর্যায় বিভাজন: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষাকে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন—প্রাচীন বাংলা (৯৫০–১২০০ খ্রি.), মধ্য বাংলা (১২০১–১৮০০ খ্রি.) ও আধুনিক বাংলা (১৮০১ খ্রি. থেকে বর্তমান)।
সবশেষে তিনি বাংলা ভাষাকে একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা কেবল সংস্কৃতের শাখা নয় বরং নিজস্ব ইতিহাস ও সাহিত্যিক ঐতিহ্য বহন করে। তাই বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ বিষয়ক প্রামাণ্য গবেষণার ক্ষেত্রে ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ আজও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
উ: গ) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ব্যাখ্যা: তিনি বাংলা ভাষার ইতিহাস, ধ্বনি, রূপ ও উৎস বিশ্লেষণ করে বাংলা ভাষাতত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছেন তাঁর ‘বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে।

0
Updated: 1 day ago
'বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত' কে রচনা করেন?
Created: 2 months ago
A
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
B
সুকুমার সেন
C
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
D
মুহম্মদ এনামুল হক
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৮৮৫ সালের ১০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান বাঙালি ব্যক্তিত্ব, যিনি ভারতের উপমহাদেশে দার্শনিক, শিক্ষক এবং বহুভাষাবিদ হিসেবে সুপরিচিত।
‘জ্ঞানতাপস’ নামে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও, তাঁকে ‘চলিষ্ণু অভিধান’ নামেও অভিহিত করা হয়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে জাতিসত্তা সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত উক্তি ছিল, “আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার থেকেও অধিক সত্য আমরা বাঙালি।”
এই উক্তি বাঙালির ঐক্য ও পরিচয়ের গুরুত্বকে রূপায়িত করে। ১৯৫৯ সালে তিনি ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’ নামক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন, যা বাংলা ভাষার ইতিহাস ও বিকাশকে তুলে ধরে।
ড. শহীদুল্লাহর ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ হলো—‘ভাষা ও সাহিত্য’, ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’, ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’ ইত্যাদি। পাশাপাশি তিনি বাংলা একাডেমির ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’ সম্পাদনার দায়িত্বও পালন করেন।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা (ড. সৌমিত্র শেখর), বাংলাপিডিয়া।

0
Updated: 2 months ago
'শাহনামা' -এর লেখক কে?
Created: 3 months ago
A
কবি ফেরদৌসী
B
মওলানা রুমী
C
কবি নিজামী
D
কবি জামি
‘শাহনামা’ মহাকাব্য
- শাহনামা পারস্যের (বর্তমান ইরান) কবি ফেরদৌসী দ্বারা লিখিত একটি দীর্ঘ মহাকাব্য।
- এটি একই সাথে ইরানের ও সারা বিশ্বের ফার্সি ভাষাভাষী লোকদের জন্য জাতীয় মহাকাব্য।
- ফেরদৌসী ৯৭৭ থেকে ১০১০ সালের মধ্যে ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে এই মহাকাব্য রচনা করেন।
- শাহনামায় প্রায় ষাট হাজার শ্লোক রয়েছে।
- ইরানের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে আনা হয়েছে এই মহাকাব্যে।
- এটিকে বলা হয় ইরানের জাতীয় মহাকাব্য।
- ভারতীয় উপমহাদেশে এটির একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২৯ সালে।
- প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর এই মহাকাব্য থেকে কিছু পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন।
- বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁও শাহনামা পড়ে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন।
উৎস: কালের কন্ঠ, ৩১ জুলাই, ২০১৫, ‘শাহনামা' গ্রন্থ- কবি ফেরদৌসী।

0
Updated: 3 months ago
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক প্রথম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ কার রচনা?
Created: 3 months ago
A
দীনেশচন্দ্র সেনগুপ্ত
B
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
C
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
D
সুকুমার সেন
‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসবিষয়ক প্রথম গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।
-
এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির প্রণেতা হলেন দীনেশচন্দ্র সেন।
‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ বইটিতে —
-
বঙ্গভাষা ও বঙ্গলিপির উৎস, সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষার সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক, প্রাচীন বাংলা সাহিত্য, মধ্যযুগে ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর কার্যকলাপ এবং তাদের সাহিত্যিক প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে সুসংবদ্ধ ও মনোগ্রাহী আলোচনা রয়েছে।
-
ইংরেজ শাসনের পূর্ববর্তী বাংলা সাহিত্য নিয়ে এতটা প্রাঞ্জল ও অনুরাগপূর্ণ ইতিহাস এর আগে কেউ রচনা করেননি।
-
এই গ্রন্থে সাহিত্যের সঙ্গে সমাজের গভীর সংযোগের দিকটি প্রথমবারের মতো বিশ্লেষণাত্মকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
উৎস: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, ড. সৌমিত্র শেখর।

0
Updated: 3 months ago