ক্রিয়াপদের গঠন ও ব্যবহারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ধাতু, কারণ এটি থেকেই ক্রিয়াপদের মূল অর্থ প্রকাশ পায়। ধাতু ক্রিয়ার মূল রূপ যা থেকে বিভিন্ন রূপান্তর, কাল, পুরুষ ও সংখ্যা অনুযায়ী নানা ক্রিয়া তৈরি হয়। এটি বাক্যে কাজ বা অবস্থাকে নির্দেশ করে এবং ভাষার ক্রিয়াব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
ধাতু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নরূপ—
-
ধাতু হলো ক্রিয়ার মূল রূপ, যা থেকে ক্রিয়ার সমস্ত রূপ তৈরি হয়। উদাহরণস্বরূপ, “খা” ধাতু থেকে “খাওয়া”, “খাই”, “খেয়েছি”, “খাবে” ইত্যাদি নানা ক্রিয়া তৈরি হয়।
-
এটি কোনো সম্পূর্ণ শব্দ নয়, বরং একটি মূল ধ্বনি বা রূপ যা অর্থ প্রকাশের বীজরূপ হিসেবে থাকে। এর সাথে বিভক্তি, প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ বা ক্রিয়ার রূপ গঠন করে।
-
ধাতু কাজ, অবস্থা বা গতি নির্দেশ করে। যেমন “যা” ধাতু চলা বোঝায়, “খা” ধাতু ভক্ষণ বোঝায়, “লিখ” ধাতু লেখার ক্রিয়া বোঝায়।
-
বিভক্তি ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়ার ব্যক্তি, সংখ্যা ও কালের পরিবর্তন ঘটায়। যেমন, “খাই”, “খাও”, “খায়”— এই রূপগুলো ধাতু “খা”-এর সঙ্গে বিভক্তি যোগে তৈরি।
-
প্রত্যয় যুক্ত হলে ধাতুর অর্থ বা রূপে পরিবর্তন আসে। যেমন, “খা” থেকে “খাওয়া”, “যা” থেকে “যাওয়া” — এখানে “ওয়া” প্রত্যয় যোগে ধাতু থেকে ক্রিয়ার বিশেষ্যরূপ তৈরি হয়েছে।
-
বাংলা ব্যাকরণে ধাতু সাধারণত সংস্কৃত ধাতুর প্রভাবে গঠিত হলেও আধুনিক বাংলা ধাতুগুলো দেশীয় রূপে বিকশিত হয়েছে। যেমন “দে” (দেওয়া), “নে” (নেওয়া) — এগুলোও ধাতু, যদিও এগুলোর উৎস প্রাচীন ভাষা থেকে এসেছে।
-
ধাতু ছাড়া কোনো ক্রিয়া-রূপ সম্পূর্ণ হয় না, কারণ এটি ছাড়া বাক্যে কর্ম বা ক্রিয়া প্রকাশ অসম্ভব। যেমন “খাওয়া” শব্দে “খা” হলো মূল ধাতু, “ওয়া” কেবল গঠন সহায়ক প্রত্যয়।
-
ধাতুর ওপর ভিত্তি করে ক্রিয়ার কাল, রীতি, ভাব ও রূপান্তর নির্ধারিত হয়। যেমন “লিখ” ধাতুর রূপান্তরে “লিখে”, “লিখছিল”, “লিখবে”, “লিখেছে”— এইসব বিভিন্ন সময় ও ক্রিয়ার অবস্থা প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং, ক্রিয়াপদের মূল অংশকে ধাতু বলা হয়, কারণ এটি ক্রিয়ার মূল অর্থবাহী উপাদান এবং সব রূপান্তরের ভিত্তি। বিভক্তি, কারক বা প্রত্যয় কেবল ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়ার গঠন সম্পূর্ণ করে, কিন্তু ক্রিয়ার আসল সত্তা ধাতুতেই নিহিত।