পূর্বে শিক্ষণকৃত বিষয়গুলোকে মিশ্রিতদ্রব্যের মধ্য থেকে আলাদা করার পদ্ধতিকে কি বলে?
A
সঞ্চয়
B
পুনর্গঠন
C
প্রত্যাভিজ্ঞতা
D
পুনরুদ্রেক
উত্তরের বিবরণ
প্রত্যাভিজ্ঞা পদ্ধতি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা ও তথ্য শনাক্তকরণের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই পদ্ধতিতে মূলত দেখা হয়—একজন ব্যক্তি পূর্বে শেখা তথ্য নতুন তথ্যের ভেতর থেকে কতটা সঠিকভাবে চিনে নিতে বা আলাদা করতে পারে। অর্থাৎ, পরীক্ষণ পাত্রের স্মৃতির নির্ভুলতা ও বাছাই করার মানসিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করাই এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য।
-
প্রত্যাভিজ্ঞা পদ্ধতিতে প্রথমে পরীক্ষণ পাত্রকে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য, শব্দ, ছবি বা সংখ্যা শেখানো হয়, যাতে তার মস্তিষ্ক সেই তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
-
পরে তাকে একটি নতুন তালিকা বা তথ্যসমষ্টি দেখানো হয়, যেখানে পূর্বে শেখানো কিছু তথ্যের সঙ্গে নতুন কিছু অপরিচিত উপাদান মিশিয়ে দেওয়া হয়।
-
পরীক্ষণ পাত্রকে বলা হয়, সে যেন পূর্বে শেখা জিনিসগুলো শনাক্ত বা আলাদা করে বলে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ব্যক্তি কতটা দক্ষভাবে আগের তথ্য পুনরুদ্ধার করতে পারে।
-
এই পদ্ধতি মূলত স্মৃতি পুনরুদ্ধার (recall) ও শনাক্তকরণ (recognition)—এই দুই প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
-
মনোবিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিভ্রান্তি, মনোযোগের মাত্রা, এবং স্মৃতির স্থায়িত্ব বোঝার জন্য।
-
প্রত্যাভিজ্ঞা পদ্ধতির মাধ্যমে বোঝা যায় যে, নতুন তথ্য প্রায়ই পুরোনো শিক্ষার সঙ্গে মিশে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, যাকে বলা হয় ইন্টারফেরেন্স বা হস্তক্ষেপ।
-
এটি স্মৃতি-গবেষণায় অত্যন্ত কার্যকর, কারণ এটি দেখায় মানুষের শেখা তথ্য কতটা দীর্ঘস্থায়ী ও নির্ভরযোগ্যভাবে মস্তিষ্কে সংরক্ষিত থাকে।
-
শিক্ষণ-মনোবিজ্ঞানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের শেখার ধরণ, ভুলে যাওয়ার হার ও পুনরায় মনে রাখার কৌশল নির্ণয় করা যায়।
-
একই সঙ্গে এটি সাহায্য করে বোঝাতে, কোন ধরনের তথ্য সহজে মনে রাখা যায় এবং কোনটি দ্রুত ভুলে যায়।
-
পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল গবেষককে অনুমান করতে সাহায্য করে যে, পরীক্ষণ পাত্রের মস্তিষ্ক কীভাবে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে ও সংরক্ষণ করে।
-
আধুনিক মনোবিজ্ঞানে প্রত্যাভিজ্ঞা পদ্ধতি স্মৃতি পরীক্ষার একটি নির্ভুল ও বৈজ্ঞানিক উপায় হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু শিক্ষণ প্রক্রিয়া নয়, বরং মানসিক রোগ নির্ণয়, আচরণ বিশ্লেষণ ও কগনিটিভ গবেষণাতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
-
বিশেষ করে স্মৃতি বিকার, ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক সক্ষমতা বোঝার ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
-
ফলে বলা যায়, প্রত্যাভিজ্ঞা পদ্ধতি কেবল শিক্ষণ বা স্মৃতি পরীক্ষা নয়, বরং এটি মানুষের মানসিক কার্যকারিতা ও জ্ঞানীয় দক্ষতার সূক্ষ্ম মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মনোবৈজ্ঞানিক উপকরণ।

0
Updated: 2 days ago