বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে ঘটে।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসগুলো সূর্যের তাপ শোষণ করে এবং তা বের হতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবীর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে যায়। এই উষ্ণতা বৃদ্ধি পৃথিবীর জলবায়ু, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
নিচে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে ধরা হলো—
-
গ্রিনহাউস প্রভাবের ভূমিকা: পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস সূর্যের তাপ শোষণ করে রাখে। এই প্রক্রিয়াই “গ্রিনহাউস প্রভাব” নামে পরিচিত। মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে এই গ্যাসগুলির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে।
-
মূল কারণ:
-
জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ানো
-
বন ধ্বংস ও বন উজাড়
-
শিল্প কারখানার বর্জ্য নির্গমন
-
অতিরিক্ত যানবাহনের ধোঁয়া
-
কৃষিক্ষেত্রে সার ও গবাদিপশুর নির্গমন
-
-
তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রমাণ:
-
১৮৮০ সাল থেকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ১.২°C বেড়েছে।
-
গত দুই দশক ছিল বিগত ১৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম।
-
হিমবাহ দ্রুত গলছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছরে গড়ে ৩.৩ মিলিমিটার হারে বাড়ছে।
-
-
প্রভাবসমূহ:
-
জলবায়ু পরিবর্তন ও অস্বাভাবিক আবহাওয়া
-
ঘূর্ণিঝড়, খরা, অতিবৃষ্টি, তাপপ্রবাহের বৃদ্ধি
-
কৃষিতে ফলন হ্রাস
-
হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি
-
জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ও প্রাণীর বিলুপ্তি
-
মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি, যেমন তাপজনিত অসুস্থতা
-
-
সমাধানের উপায়:
-
নবায়নযোগ্য জ্বালানি (সৌর, বায়ু, জলবিদ্যুৎ) ব্যবহার
-
বন সংরক্ষণ ও পুনঃবনায়ন
-
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো
-
শিল্প কারখানায় পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার
-
ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী জীবনযাপন
-
-
আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা:
-
১৯৯৭ সালের কিয়োটো প্রোটোকল এবং ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ।
-
প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২°C-এর নিচে রাখবে।
-
সারাংশে বলা যায়, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সংকটগুলোর একটি। এটি শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ নয়,
বরং মানবসভ্যতার স্থিতিশীলতার জন্য এক বিশাল হুমকি। তাই প্রত্যেকের দায়িত্ব পৃথিবীর উষ্ণতা রোধে সচেতনভাবে জীবনযাপন করা।