বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের পূর্ণাঙ্গ ও সরকারি নাম হিসেবে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নির্ধারিত হয়েছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব, জনগণের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিফলন। সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদেই এই নামটি উল্লেখ করা হয়েছে, যা জাতির স্বাধীন পরিচয়ের মূল প্রতীক।
মূল তথ্যসমূহ নিচে দেওয়া হলো:
-
সংবিধানে নামের উল্লেখ: বাংলাদেশের সংবিধানের প্রথম ভাগের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—“বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, যার নাম হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।”
-
‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ শব্দের অর্থ: ‘গণ’ মানে জনগণ, আর ‘প্রজাতন্ত্রী’ মানে জনগণের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। অর্থাৎ, এই নামে বোঝানো হয়েছে যে রাষ্ট্রের ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং তারা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি বেছে নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
-
ইতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর রাষ্ট্রের নাম নির্ধারণের সময় “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামটি বেছে নেওয়া হয়, যাতে জনগণের ক্ষমতা ও স্বাধীনতার চেতনা প্রতিফলিত হয়।
-
সংবিধানের প্রণয়ন ও কার্যকর তারিখ: বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর এবং কার্যকর হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তখন থেকেই “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
-
নামের তাৎপর্য:
১. এটি জনগণের মালিকানার স্বীকৃতি দেয়।
২. গণতন্ত্র ও সমতার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিশ্রুতি জানায়।
৩. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
৪. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র পরিচয় তুলে ধরে। -
রাষ্ট্রের মূলনীতি: সংবিধানে রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই চারটি মূল্যবোধ “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামের ভাবধারার সাথেও সরাসরি সম্পর্কিত।
-
বর্তমান ব্যবহারে: সব সরকারি নথি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিপত্রে রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক নাম হিসেবে “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” ব্যবহৃত হয়।
সুতরাং, বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও সরকারি নাম হলো “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ”, যা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা, স্বাধীনতা, ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক।